ফেসবুক গ্রুপভিত্তিক নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই–কমার্স ফোরাম—উইয়ের বার্ষিক সম্মেলন উই সামিটের আয়োজন পিছিয়ে গেছে। উইমেন ই-কমার্স এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সামিট (উই সামিট) শিরোনামে এ আয়োজন হওয়ার কথা ছিল আগামী ২৫ ও ২৬ অক্টোবব। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে উই সামিট অক্টোবরের বদলে আগামী ডিসেম্বরে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো দিনক্ষণের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সম্মেলন পেছানোর কারণে নিবন্ধিতদের মধ্যে যাঁরা সামিটে অংশ নিতে চান না, তাঁদের নিবন্ধণ ফি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে উই ট্রাস্ট।
উই সামিটে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে গত মে মাসে এক হাজার টাকা নিবন্ধণ ফি গ্রহণ করা হয়। সামিটের তারিখ পরিবর্তনের কারণে অনেক নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তাই তাঁদের নিবন্ধণ ফি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উই ট্রাস্ট।
উইয়ের সভাপতি নাসিমা আক্তার আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সামিটের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন না বলে তাঁদের নিবন্ধন ফি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। গত রোববার থেকে আমরা ফি ফেরত দিচ্ছি। উদ্যোক্তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে আমরা ফির টাকা ফেরত পাঠাচ্ছি।’
গত মে মাসে উই সামিটের জন্য ১ হাজার ৮৯৫ জন উদ্যোক্তা নাম নিবন্ধন করেন। ফি ফেরত দেওয়ার ঘোষণা এলে ৮০০ জন উদ্যোক্তা ফি ফেরত নেওয়ার তালিকায় নাম লেখান। এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে উই সূত্রে জানা গেছে।
সামিটের তারিখ পেছানোর কারণ সম্পর্কে উইয়ের সভাপতি নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের সামিটে উদ্যোক্তাদের ক্রেতা, বিনিয়োগকারী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, ব্যাংক থেকে শুরু করে বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের (নেটওয়ার্কিং) সুযোগ থাকে। এখন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নতুন ব্যক্তিরা আসছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এখনো পূর্ণোদ্যোমে কাজ শুরু হয়নি। তাই এই সময়ে সামিট করলে উদ্যোক্তারা কার্যকর নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পাবেন না। এ কারণে আমরা সামিট পিছিয়েছি। আর নিবন্ধিত যাঁরা অংশ নেবেন না, নিবন্ধন ফি আমরা ফেরত দিচ্ছি।’
নাসিমা আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা সবার টাকা ফেরত দেব। এর মধ্যে অনেকেই আবার অন্য সব গ্রুপের বিভিন্ন আর্থিক বিষয়কে আমাদের গ্রুপের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছেন। আমরা আর্থিক যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে কাজ করছি। যেকোনো প্রশ্ন নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।’
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উই ট্রাস্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও আর্থিক বিষয় নিয়ে নারী উদ্যোক্তারা প্রশ্ন তুলেছেন। গত রোববার উইয়ের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়ে তদন্ত দাবি করেছেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স নারী উদ্যোক্তা’ সংগঠন নামে তাঁরা স্মারকলিপি জমা দেন।
নিবন্ধন ফি ফেরত ও সামিট পেছানোর বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স নারী উদ্যোক্তা সংগঠনের ঢাকা জেলার আহ্বায়ক সুলতানা রাজিয়া আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় সামিটের জন্য মে মাসে নিবন্ধন ফি নেওয়া হয়। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করার কারণে এখন টাকা ফেরত দেওয়ার “নাটক” করা হচ্ছে। আমি নিজে অক্টোবরে দেশে থাকব না বলে জানিয়েছিলাম, তখন আমার নিবন্ধনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। এখন টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ের একজন উদ্যোক্তার জন্য এক হাজার টাকা পরিমাণে বেশিই। সেই টাকা এত দিন আটকে রাখার কোনো মানে হয় না।’
এ ধরনের ঘটনা প্রথম নয় বলে উল্লেখ করে সুলতানা রাজিয়া বলেন, এর আগের যত সামিট হয়েছে, যত ক্লাস হয়েছে আমরা সব কিছুর হিসাব চাই।’ এমন দাবি তোলার কারণে ‘বৈষম্যবিরোধী ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স নারী উদ্যোক্তা’ সংগঠনের নারীরা বিভিন্ন ফেসবুক প্রোফাইল থেকে হুমকি পাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
২০১৭ সালের অক্টোবরে ফেসবুক গ্রুপ হিসেবে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) যাত্রা শুরু করে। করোনা মহামারির সময় এই গ্রুপের সদস্যসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। গ্রুপে নারী উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ক্রেতারাও যুক্ত হন। ফলে করোনা মহমারির বিপর্যয়ের সময় অনেক নারী বিকল্প আয়ের সন্ধান পান। বর্তমানে উইয়ের ফেসবুক গ্রুপের সদস্যসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। সদস্যদের বেশির ভাগই নারী এফ-কমার্স উদ্যোক্তা। গত মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উইয়ের সদস্য অনেক নারী উদ্যোক্তা উই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন।