সিডনিতে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় ফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও স্পেন। নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে মেয়েদের ফুটবল।
‘ইটস কামিং হোম’-প্রতিটি বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সমর্থকেরা আশায় বুক বাঁধেন এবার ঘরে ফিরবে বিশ্বকাপ। কিন্তু সেই আশা আর পুরো হয় না। ১৯৬৬ সালের পর যে আর বিশ্বকাপ ট্রফিটা হাতে তুলতে পারেনি ইংলিশরা।
স্পেনের জন্যও বিশ্বকাপটা চির আক্ষেপের উপলক্ষ হয়ে ছিল। ফুটবলকে অনেক কিছুই উপহার দিলেও দীর্ঘদিন বিশ্বকাপ অধরা থেকে গিয়েছিল স্প্যানিশদের। তবে ২০১০ সালে সেই অপেক্ষা ফুরোয় তাঁদের। ইকার ক্যাসিয়াসের দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তবে স্প্যানিশদের পরের গল্পটাও ইংলিশদের মতো। এরপর যে আর বিশ্বকাপের ফাইনালেও উঠতে পারেনি লা রোহারা।
ফুটবল–পাগল সেই দুই দেশের নারী ফুটবল দল আজ মুখোমুখি বিশ্বকাপে ফাইনালে। সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় শুরু ম্যাচের শেষ কারা হাসবে কে জানে! তবে এক দল তো জিতবেই। আর তাতেই যে স্পেন কিংবা ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষার অবসান হবে।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড খেলতে গিয়েছিল অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই। মেয়েদের ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা প্রত্যাশা মিটিয়েই এখন শেষ বাধা পেরোনোর অপেক্ষায়। অপেক্ষায় ৫৭ বছর পর আরেকটি ফুটবল বিশ্বকাপ ঘরে নিয়ে যাওয়ার।
তাদের প্রতিপক্ষ স্পেন অবশ্য বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফেবারিটদের তালিকায় ছিল না। বিশ্বসেরা নারী ফুটবলার অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াসের চোট আর খেলোয়াড় বিদ্রোহ দলটিকে ফেবারিটদের তালিকায় থাকতে দেয়নি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জাপানের কাছে ৪-০ গোলে হারের পর স্পেনকে নিয়ে বাজি ধরার লোক কমে গিয়েছিল আরও। কিন্তু নকআউট পর্বে দুর্দান্ত খেলে সেই স্প্যানিশরা উঠে গেছে ফাইনালে। ২০১০ সালের পর আবারও দেশকে বিশ্বসেরা বানানোর হাত ছোঁয়া দূরত্বে চলে গেছে দলটি।
ইংল্যান্ড বা স্পেন, যারাই চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে মেয়েদের বিশ্বকাপ। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নরওয়ে ও জাপানের পর পঞ্চম দল হিসেবে কারা পাবে মেয়েদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব, অপেক্ষা শুধু সেটি দেখার।
আজকের ফাইনালে কাগজ-কলমের হিসাবে একটু হলেও এগিয়ে ইংল্যান্ড। ডাচ কোচ সারিনা ভিগমানের অধীনে যে পুরোপুরি বদলে গেছে ইংল্যান্ড নারী ফুটবল দল। ইউরোর পর বিশ্বকাপ, টানা দুটি বড় টুর্নামেন্টে ফাইনালে ওঠা তো চাট্টিখানি কথা নয়। ভিগমান ২০১৯ সালের ফাইনালেও ডাগআউটে ছিলেন, তবে জন্মভূমি নেদারল্যান্ডসের কোচ হিসেবে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে ট্রফি ছোঁয়া হয়নি তাঁর।
আজ ইংল্যান্ডের মেয়েরা ভিগমানকে বিশ্বকাপ উপহার দেওয়ার জন্য প্রাণপণ লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দলটির অধিনায়ক মিলি ব্রাইট কাল বললেন ‘জীবনের সেরা ম্যাচ’ খেলতে চান তাঁরা, ‘আমরা জানি দেশের মানুষ কতটা উদ্গ্রীব হয়ে আছে। তবে আমাদের গেম প্ল্যান অনুযায়ী খেলতে হবে, আমাদের জীবনের সেরা ম্যাচটি খেলতে হবে। আমাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি।’
স্পেনের মেয়েদেরও সবচেয়ে বড় ম্যাচ এটিই। সেই ম্যাচের আগে দলটির কোচ হোর্হে ভিলদার দিকে ধেয়ে গেল গত বছরের সেই খেলোয়াড় বিদ্রোহের কথা। কোচের সঙ্গে বিরোধের জেরে হওয়া যে বিদ্রোহে ১৫ খেলোয়াড়কে হারিয়েছে স্পেন। বিদ্রোহে অংশ নেওয়া কয়েকজন অবশ্য আছেন স্পেনের বিশ্বকাপ দলে। তাঁদের সঙ্গে কোচের সম্পর্ক এখন কেমন, সেটিই জানতে চাওয়া হয় ভিলদাকে। ‘পরের প্রশ্ন, প্লিজ’—বলে এগিয়ে গেছেন স্প্যানিশ কোচ।
ভিলদা বললেন তাঁর শিষ্যরা সারা জীবন বলার মতো গল্প পেয়ে যেতে পারে আজ, ‘শুরু থেকেই খেলোয়াড়েরা একতাবদ্ধ ছিল, ওরা প্রচণ্ড পরিশ্রমও করেছে। জীবনের বাকি সময়টা বলে বেড়ানোর মতো গল্প পেয়ে যাবে তারা।’
সেই গল্পটা ইংল্যান্ড না স্পেনের খেলোয়াড়েরা করবেন, সেটিই নির্ধারিত হবে আজ।