যাঁরা পেয়েছেন বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার

২০০৪ থেকে ২০২১। খালেদ মাসুদ থেকে সাকিব আল হাসান। প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১৭ বার। ক্রিকেট, গলফ, শুটিং ও সাঁতার মিলিয়ে ১১ জন পেয়েছেন বর্ষসেরার স্বীকৃতি। কেন তাঁরা বর্ষসেরা হয়েছেন…
২০০৪–খালেদ মাসুদ
প্রথম আলোর প্রথম বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ

উইকেটের পেছনে সব সময়ই ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। বর্ষসেরার স্বীকৃতি পাওয়ায় বড় ভূমিকা রেখেছিল উইকেটের সামনে ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সও। টেস্টে ১টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৪৯ রান। সেন্ট লুসিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ৮ নম্বরে নেমে লড়াকু সেঞ্চুরি। যেটির কল্যাণেই নিজেদের কৃতিত্বে প্রথম টেস্ট ড্র করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে সে বছর বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯৯ রান করেছিলেন। এর সঙ্গে টেস্টে ২০টি ও ওয়ানডেতে ২২টি ডিসমিসাল মিলিয়ে খালেদ মাসুদ গড়েন ‘প্রথম’-এর কীর্তি—প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের প্রথম বর্ষসেরা।

২০০৫–হাবিবুল বাশার
হাবিবুল বাশারের বর্ষসেরা নির্বাচিত হওয়ায় ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়েও বড় ভূমিকা ছিল অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের

৬ টেস্টে করেছিলেন ৩৭৬ রান, ১৪টি ওয়ানডেতে ৩৩৭। তবে হাবিবুল বাশারের বর্ষসেরা নির্বাচিত হওয়ায় ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়েও বড় ভূমিকা ছিল অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের। বছরের শুরুতে তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয় পায়, জেতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজও। ইংল্যান্ড সফরে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ভূমিকা রাখেন ব্যাট হাতেও। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে যে একটা অস্থিরতা ছিল, হাবিবুলের ধারাবাহিকতা সেটির অবসান ঘটায়। বর্ষসেরা হিসেবে নির্বাচনে বিবেচিত হয়েছিল এটির সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যও।

২০০৬–শাহরিয়ার নাফীস
২০০৬ সালে ওয়ানডে হাজারের বেশি রান করেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস

২০০৬ সালে ওয়ানডেতে এক হাজারের বেশি রান করেছিলেন ছয়জন ব্যাটসম্যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশেরও একজন। ওয়ানডেতে এই মাইলফলক ছোঁয়ার পথে শাহরিয়ার নাফীস সে বছর সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনটি। বর্ষসেরার স্বীকৃতি পাওয়ায় এর সঙ্গে বড় ভূমিকা রেখেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক টেস্ট সেঞ্চুরি। ফতুল্লা টেস্টের প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়াকে হকচকিত করে বাংলাদেশ করেছিল ৫ উইকেটে ৩৫৫। শাহরিয়ার নাফীস খেলেছিলেন ১৩৮ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে আক্ষেপ হয়ে আছে ওই ফতুল্লা টেস্ট। তবে শাহরিয়ার নাফীসের ইনিংসটি পেয়ে গেছে অমরত্ব।

২০০৭–মোহাম্মদ আশরাফুল
২০০৭ সালে আশরাফুলের বর্ষসেরা হতে বড় ভূমিকা ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা ম্যাচজয়ী ইনিংসের

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে গায়ানায় সে সময় ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকা দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের বিপক্ষে। যার মূলে ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৩ বলে ৮৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ওই একটা ইনিংসই সে বছর বর্ষসেরার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল তাঁকে; সঙ্গে বিবেচনায় এসেছিল একটি বিশ্ব রেকর্ডও। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকেই সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়া আশরাফুল সময়ের হিসাবে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরিটাও করেন এ বছর। ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে ৪১ বলে ৬৭ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ফিফটি এসেছিল মাত্র ২৭ মিনিটে। এর আগে দুবার বর্ষসেরা রানারআপ হওয়া আশরাফুল এবার পান সেরার স্বীকৃতি।

২০০৮–সাকিব আল হাসান
প্রথমবার প্রথম আলোর বর্ষসেরার পুরস্কার হাতে সাকিব

বিশ্বমানের এক অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব আল হাসানের আবির্ভাবের কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্মরণীয় হয়ে আছে বছরটি। ব্যাটিংয়েও বলার মতো অনেক কীর্তি ছিল—পাকিস্তান সফরে পরপর দুটি ওয়ানডেতে ৭৫ ও ১০৮, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ৯৬। তবে সাকিবের নবরূপে আবির্ভাবের সাক্ষী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট। বিশেষজ্ঞ স্পিনারের ভূমিকায় প্রথম টেস্টেই ৩৬ রানে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ও বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরপর তিন ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি। ব্যাট-বলে অসাধারণ সাকিবের প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়া পুরস্কারে জয়যাত্রাও শুরু হলো এ বছরই।

২০০৯–সাকিব আল হাসান
প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুবার বর্ষসেরা সাকিব

বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে—একসময়ের কল্পনা বাস্তব রূপ পেয়েছিল এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারের সৌজন্যে। বছরের শুরুতে ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠে সারা বছর ধরে রাখেন এই স্বীকৃতি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান ও উইকেট ছিল তাঁর। টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে স্থান পান আইসিসি টেস্ট একাদশে, কাউন্টি ক্রিকেটে খেলার চুক্তিও আরেকটি ‘প্রথম’। সব মিলিয়েই টানা দ্বিতীয়বার বর্ষসেরা।

২০১০–সিদ্দিকুর রহমান
ক্রিকেটের বাইরে প্রথম বর্ষসেরা এশিয়ান ট্যুরজয়ী গলফার সিদ্দিকুর রহমান

সিদ্দিকুর রহমানের ব্রুনেই ওপেন জয় গলফের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যোগ করেছিল নতুন এক অধ্যায়। বাংলাদেশের কোনো গলফারের পেশাদার কোনো টুর্নামেন্ট জয়ের প্রথম কীর্তি এটি। এর পরপরই তাইওয়ান ওপেন জিততে জিততে রানারআপ হন। ১৬টি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ৬টিতেই শেষ করেন সেরা দশে। বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বছরের শুরুতে ছিলেন ১৩৪৮ নম্বরে, সেখান থেকে বছর শেষে ২০৩। গলফ খেলাটাকে বাংলাদেশের সাধারণ ক্রীড়ামোদীদের আলোচনায় আনার প্রায় একক কৃতিত্ব তাঁর। সবকিছু মিলিয়েই বর্ষসেরার পুরস্কারটিতে ক্রিকেটারদের একাধিপত্যের অবসান ঘটান এই গলফার।

২০১১–সাকিব আল হাসান
তৃতীয়বার বর্ষসেরার পুরস্কার নিতে মঞ্চে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান

ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান হারিয়ে সেটি পুনরুদ্ধার করেন। সঙ্গে ১০ বছরের বেশি শীর্ষ স্থানে থাকা জ্যাক ক্যালিসকে সরিয়ে উঠে যান টেস্ট অলরাউন্ডারদের র‍্যাঙ্কিংয়েরও এক নম্বরে। ব্যাটে-বলে বছরজুড়েই ছিলেন ধারাবাহিক। টেস্ট ও ওয়ানডে দুটিতেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান ও উইকেট (টেস্টে ৪৫১ রান ও ২১ উইকেট, ওয়ানডেতে ৫৬৪ রান ও ২৫ উইকেট)। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। সব মিলিয়ে চার বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো বর্ষসেরার ট্রফিটা জিতে নেন সাকিব।

২০১২–সাকিব আল হাসান
২০১২ সালের বর্ষসেরা সাকিব ছিলেন না অনুষ্ঠানে। পুরস্কার নিয়েছিলেন তাঁর মা

এ বছর টেস্ট খেলেছেন মাত্র দুটি। তাতে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান (৫১.২৫ গড়ে ২০৫) ও উইকেট (৬)। ওয়ানডেও খেলেছেন শুধু এশিয়া কাপে। বাংলাদেশের জন্য অবিস্মরণীয় সেই টুর্নামেন্টে সাকিব ব্যাটে-বলে রীতিমতো আলো ছড়ান। ৪ ম্যাচে ৫৯.২৫ গড়ে ৩টি ফিফটিসহ ২৩৭ রান ও ৬ উইকেট। তিন এশিয়ান পরাশক্তির নামী সব তারকাকে পেছনে ফেলে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারটাও পান। এর আগে দেশ-বিদেশের তারকাখচিত প্রথম বিপিএলেও সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপা জয়েও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ফল—পাঁচ বছরের মধ্যে চতুর্থবার বর্ষসেরা।

২০১৩–মুশফিকুর রহিম
টেস্টে বাংলাদেশকে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এনে দেওয়া মুশফিকুর রহিম প্রথমবার জেতেন বর্ষসেরার পুরস্কার

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছেন এ বছর। শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ড্র করায় যেটির বড় ভূমিকা। জিম্বাবুয়েতে টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ তাতে সমতা আনে দুই ইনিংসেই মুশফিকের অধিনায়কোচিত ব্যাটিংয়ে। হারারের পেসবান্ধব উইকেটে করেন ৬০ ও ৯৩ রান। সব মিলিয়ে ৬ টেস্টে ৫৪.৫৫ গড়ে ৪৯১ রান, ৯ ওয়ানডেতে ১৯৮ ও ৪টি টি-টোয়েন্টিতে ১৩৪। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৫টি ডিসমিসাল। এসবেরই স্বীকৃতি হিসেবে প্রথমবারের মতো হাতে বর্ষসেরার ট্রফি।

২০১৪–মুশফিকুর রহিম
টানা দ্বিতীয়বার বর্ষসেরা মুশফিকুর রহিম

৭ টেস্টে ১টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৯.৩৬ গড়ে ৪৩৩ রান, যা বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ওয়ানডেতে ১৮ ম্যাচে ৪৪ গড়ে ১টি সেঞ্চুরি ও ৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭০৪ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে ফলোঅনে পড়ে লড়াকু ১১৬ রান, ফতুল্লায় এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ১১৭ রানসহ আরও বেশ কটি মুগ্ধতা ছড়ানো ইনিংস। তিন ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ৩৭টি ডিসমিসাল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো তাই বর্ষসেরা মুশফিক।

২০১৫–মোস্তাফিজুর রহমান
ক্যারিয়ারের প্রথম বছরের পারফরম্যান্স দিয়েই বর্ষসেরা হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান

টেস্টে অভিষেক ইনিংসে ৩৭ রানে ৪ উইকেট। ৯ ওয়ানডেতে ১২.৩৪ গড়ে ২৬ উইকেট, যার মধ্যে প্রথম দুই ওয়ানডেতেই পেয়েছেন ৫ ও ৬ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১৩ উইকেট, যেটি তিন ম্যাচের সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেকে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে গড়েছেন নতুন ইতিহাস। টি-টোয়েন্টিতেও পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬ উইকেট। ফল—প্রথমবারের মতো হাতে বর্ষসেরার ট্রফি।

২০১৬–তামিম ইকবাল
বর্ষসেরার পুরস্কারটা মঞ্চ থেকে নিতে পারেননি তামিম ইকবাল

অপেক্ষার প্রহর যত লম্বা, প্রাপ্তিটাও নাকি তত মিষ্টি! সেই স্বাদ তামিম ইকবাল পেলেন ২০১৬ সালে। ২০০৯ ও ২০১০ সালে টানা দুবার বর্ষসেরা রানারআপ হয়েছিলেন। ২০১৫ সালেও বর্ষসেরা রানারআপ। পরের বছরই অপেক্ষার অবসান তামিমের। বর্ষসেরার দাবি নিয়েই বাংলাদেশ ওপেনার শেষ করেছিলেন বছরটা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টেস্টের চার ইনিংসে খেলেছেন ৭৮, ৯, ১০৪ ও ৪০ রানের ইনিংস। ৫৭.৭৫ গড়ে মোট রান ২৩১; যা সেই পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৪ রানে স্মরণীয় টেস্ট জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল তাঁর সেঞ্চুরিটি। সে বছর ওয়ানডেতে ১টি সেঞ্চুরি ও ২টি ফিফটি করেন তামিম। ৯টি ওয়ানডেতে ৪৫.২২ গড়ে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০৭ রান। ১১টি টি-টোয়েন্টিতে ৪০.৮৮ গড়ে করেন ৩৬৮ রান। ওমানের বিপক্ষে তাঁর ১০৩* এই সংস্করণে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরি। প্রাপ্তির এই বছরে তামিমের অপূর্ণতা ঘুচেছে বর্ষসেরার স্বীকৃতিতে।

২০১৬–মাহফুজা খাতুন শিলা
প্রথম নারী হিসেবে বর্ষসেরা হয়েছেন সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা

বাবা শখ করে নাম রেখেছিলেন শিলা। কঠিন শিলার মতোই যেন ভেতরে জমানো ছিল আগুন। বারবার সাঁতার ফেডারেশনের বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ২০১৬ এসএ গেমসে অংশ নেওয়ার আগে শুনতে হয়েছিল এমন কথা, ‘ও তো বুড়িয়ে গেছে। ওকে দিয়ে আর সাঁতার হবে না।’ ক্ষোভের পাথরে ঘষা লেগে সেটি এমনভাবে জ্বলে উঠল যে সেই আলোয় আলোকিত হলো দেশের ক্রীড়াঙ্গন। ২০১৬ সালের এসএ গেমসে রেকর্ড গড়ে জিতলেন সোনা। ভারতের গুয়াহাটির হারুহজাই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বেজে উঠল মাহফুজা খাতুন শিলার সুবাদে। প্রথমে মেয়েদের ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে জেতেন ১ মিনিট ১৭.৮৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে। এরপর ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকেও সোনা জেতেন শিলা। এই ইভেন্টে সময় নেন ৩৪.৮৮ সেকেন্ড। ভাঙেন এসএ গেমসের ১০ বছরের পুরোনো রেকর্ড। এই দুটি সাফল্যই তাঁকে এনে দিল বর্ষসেরার ট্রফি।

২০১৭–সাকিব আল হাসান
আরেকবার বর্ষসেরা সাকিব পুরস্কার নিচ্ছেন সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপুর হাত থেকে

২০১৭ সালের বর্ষসেরা যে সাকিব আল হাসান ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না, সেটা বোধ হয় সাকিব নিজেও জানতেন। ৭ টেস্টে ৬৬৫ রান আর ২৯ উইকেট পাওয়ার বছরে ছিল টেস্টে বাংলাদেশের সে সময়ের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৭ রানের ইনিংসটাও। মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়েও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলকে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২২৪ রানের জুটি গড়ে দলকে টেনে তুলেছিলেন সেমিফাইনালে। এমন সাফল্যে মোড়া বছরে বর্ষসেরা হওয়ার দৌড়ে কে ছোঁবেন তাঁকে? প্রত্যাশিতভাবেই তিনিই হয়েছিলেন ২০১৭-এর বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ।

২০১৮–আবদুল্লাহ হেল বাকি
বর্ষষেরা ক্রীড়াবিদ শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি। কমনওয়েলথ গেমসে রুপা জয়ের পুরস্কার

২০১৪ সালে হয়েছিলেন বর্ষসেরা রানারআপ। সেবারও কারণ ছিল কমনওয়েলথ গেমসে জেতা রুপা। আবদুল্লাহ হেল বাকি বর্ষসেরা হলেন চার বছর পর। অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডকোস্টে কমনওয়েলথ গেমসের পারফরম্যান্স দিয়েই বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা শুটার। গোল্ডকোস্টে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের শেষ শটে ৯.৭ স্কোর করে দশমিকের ব্যবধানে সোনা জিততে পারেননি বাকি। কমনওয়েলথ গেমসের রেকর্ড স্কোর করে সোনাজয়ীর সঙ্গে রুপাজয়ী বাকির পয়েন্টের ব্যবধান ছিল মাত্র দশমিক ৩। অথচ বাকির গোল্ডকোস্টে যাওয়ারই কথা ছিল না। ফর্ম খারাপ যাচ্ছিল বলে কমনওয়েলথ গেমস শুরুর আগে বাংলাদেশের শুটিং কোচ ক্লাভস ক্রিস্টেয়নস বাকিকে বিবেচনার বাইরেই রেখেছিলেন। কিন্তু গেমসের আগে আগে প্রতিদ্বন্দ্বী শুটার খারাপ করায় সুযোগ পেয়ে যান বাকি। সেই সুযোগই কাজে লাগান দারুণভাবে।

২০২১–সাকিব আল হাসান
ষষ্ঠবার বর্ষসেরা সাকিব আল হাসান

২০২১ সালে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৭৭১ রান, উইকেট পেয়েছেন ৪৭টি। ওয়ানডেতে ৯ ম্যাচে ১৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ১৮ ম্যাচে ২৫। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও এই বছরেই। বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বেশি ছয়বার ম্যাচসেরা ও তিনবার সিরিজ সেরা হয়েছেন। সিরিজ সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে (১১৩ রান ও ৬ উইকেট, এক ম্যাচে ৮ রানে ৪ উইকেট), জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে সিরিজে (১৪৫ রান, সর্বোচ্চ ৯৬* ও ৮ উইকেট, সেরা ৫/৩০) ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম টি-টোয়েন্টি সিরিজে (১১৪ রান ও ৭ উইকেট, সেরা ৪/৯)। সব মিলিয়েই সাকিবের ষষ্ঠবার বর্ষসেরা হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না অন্য কেউ।