শেষ দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছে সুইজারল্যান্ড
শেষ দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছে সুইজারল্যান্ড

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে ব্রাজিলের সঙ্গী সুইজারল্যান্ড

অবিশ্বাস্য, অভূতপূর্ব, অভাবনীয়, অকল্পনীয়, অননুমেয় কিংবা অতুলনীয় বললেও কাতার বিশ্বকাপকে বোধ হয় জুতসইভাবে বিশেষায়িত করা যাবে না। একের পর এক চমকে ঠাসা বিশ্বকাপকে কি আর এক শব্দে বোঝানো যায়!

চমকের শুরুটা হয়েছিল উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোকে দিয়ে। এরপর এশিয়ার দুই পরাশক্তি জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়ার বাজিমাত। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লিখে তাতে সামিল হলো সুইজারল্যান্ড।

স্টেডিয়াম ৯৭৪–এ আজ বাঁচা–মরার ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩–২ গোলে হারিয়ে শেষ দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠে গেল সুইসরা। ‘জি’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের সঙ্গী হলো তারা। মঙ্গলবার রাতে তাদের প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।

পরের পর্বে যেতে হলে সুইজারল্যান্ডের জন্য ড্র যথেষ্ট ছিল। আর সার্বিয়াকে জিততেই হতো। এমন সমীকরণের ম্যাচে এগিয়ে যায় সুইসরাই। ২০ মিনিটে জিব্রিল সোয়ের পাস থেকে জাল কাঁপান জেদরান শাকিরি।

শাকিরির জন্য আজকের রাতটা যেন ‘দেজা ভ্যু’ (পূর্বদৃষ্ট) হয়ে এসেছিল। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে সার্বিয়ার বিপক্ষে গোল করেছিলেন। চার বছর পর কাতার বিশ্বকাপে সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল। তফাৎ ছিল শুধু উদ্‌যাপনে। আগেরবার আলবেনিয়ার পতাকার প্রতীক জোড়া ঈগলের মতো উদ্‌যাপন করে জরিমানা গুনেছিলেন। সেটার জবাব হিসেবে এবার মুখে আঙুল দিয়ে সবাইকে চুপ থাকার ইঙ্গিত দেন ৩১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।

সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে দেওয়ার পর সবাইকে চুপ থাকার ইঙ্গিত দেন শাকিরি

এই গোলে একটা রেকর্ডে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পাশে বসেছেন শাকিরি। এ নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সব টুর্নামেন্টেই তিনি গোল করেছেন। ইউরোপীয়দের মধ্যে তিনি ছাড়া এই কীর্তি আছে শুধু রোনালদোর।

সুইজারল্যান্ডের এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২৬ মিনিটে দুসান তাদিচের ক্রস থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত হেডে সমতা ফেরান আলেকসান্দার মিত্রোভিচ।

৯ মিনিট পর তো ম্যাচের মোড়টাই ঘুরিয়ে দেন দুসান ভ্লাহোভিচ। সার্বিয়া এগিয়ে যায় ২–১ গোলে। নায়ক থেকে মুহূর্তেই খলনায়ক বনে যান শাকিরি। সুইসদের এই গোল হজমের দায়টা যে তাঁরই। মাঝমাঠে খামখেয়ালিপনায় বল হারান শাকিরি। তাদিচ সেই বল পেয়ে বাড়ান ভ্লাহোভিচের উদ্দেশ্যে। জোড়ালো শটে সার্বিয়াকে নকআউট পর্বের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন তরুণ স্ট্রাইকার। সঙ্গে কোচ দ্রাগান স্তয়কোভিচকেও যেন প্রছন্ন জবাব দেন।

বিদায়ের হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন সার্বিয়ান ফরোয়ার্ড তাদিচ

জুভেন্টাসের হয়ে দুর্দান্ত ছন্দে থাকলেও ভ্লাহোভিচকে বিশ্বকাপে সেভাবে সুযোগ দেননি স্তয়কোভিচ। আগের দুই ম্যাচের একটিতে বসিয়ে রেখেছিলেন, অন্যটিতে খেলিয়েছেন মাত্র ২৪ মিনিট। আজ শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চেনান দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার।

তবে ভ্লাহোভিচের এই গোলটাই যেন তাতিয়ে দেয় সুইসদের। পিছিয়ে পড়ে লাগাতার আক্রমণ শাণাতে থাকে তারা। ফল পায় বিরতির আগমুহূর্তে। ব্রিল এমবোলের গোলে ২–২ সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল। সুইসদের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুও এখান থেকে। ক্যামেরুনে জন্ম নেওয়া ফরোয়ার্ডের সমতাসূচক গোল দুই যুগ আগের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। সর্বশেষ ১৯৯৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা–ইংল্যান্ড ২–২ সমতায় প্রথমার্ধ শেষ করেছিল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই সার্বিয়াকে চেপে ধরে সুইজারল্যান্ড। ৪৮ মিনিটে রেমো ফ্রয়লারের গোলে ৩–২ গোলে এগিয়ে যায় সুইসরা। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রেখে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করে মুরাত ইয়াকিনের দল।

ম্যাচের এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুই দল

সার্বিয়ানদের এই গোল হজমে রক্ষণ দুর্বলতা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। ক্যামেরুনের বিপক্ষে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে ৩–১ গোলে এগিয়ে গিয়েও ৩–৩ সমতায় মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। আর আজকের হারে তো গ্রুপের তলানির দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো তাদের।