রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি
রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি

বায়ার্নের বিপক্ষে ‘নমনীয়’ রিয়ালে খুশি নন আনচেলত্তি

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে কাল রাতে বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে ২–২ গোলে ড্র করেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

ম্যাচের প্রথমার্ধে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়াল। বিরতির পর লেরয় সানে আর হ্যারি কেইনের গোলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল বায়ার্ন। তবে শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বায়ার্ন সমর্থকদের স্তব্ধ করে দিয়েছেন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ড্র হওয়ায় আগামী সপ্তাহে নিজেদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালই ফেবারিট। কালকের ফলকে নিজেদের জন্য ভালো মনে করলেও দলের পারফরম্যান্সে সার্বিকভাবে খুশি নন রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখে তাঁর মনে হয়েছে, বায়ার্নের প্রতি কোমল মনোভাব দেখানো হয়েছে।

দুই দফা রিয়ালের কোচ হওয়ার মাঝে বায়ার্নেরও দায়িত্বে ছিলেন আনচেলত্তি। কিন্তু ‘কোচদের ডন’খ্যাত এই ইতালিয়ান সাবেক ক্লাবকে যে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চাননি, ম্যাচ শেষে সেটা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট।  

বায়ার্নের বিপক্ষে রিয়ালের সার্বিক পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট নন আনচেলত্তি

চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্যতম সম্প্রচারকারী চ্যানেল মুভিস্টার প্লাসকে আনচেলত্তি বলেছেন, ‘ফলটা ভালোই। কিন্তু ম্যাচের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। বায়ার্ন তাদের সেরাটা দিয়েছে, আমরা পারিনি। পরের সপ্তাহে (ফিরতি লেগে) আমাদের উন্নতি করতে হবে।’

খেলোয়াড়দের কাছ থেকে যা চেয়েছিলেন, তা না পাওয়ার আক্ষেপ ঝরেছে আনচেলত্তির কণ্ঠে, ‘প্রথমার্ধে (আমরা এগিয়ে যাওয়ার পর) রক্ষণাত্মক খেলেছি। তবে সেটাকে খুব তীব্র বলব না। দ্বিতীয়ার্ধে ওরা যখন এগিয়ে যায়, তখন আমরা একটু চাপ বিস্তার করতে শুরু করেছি। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছি ঠিকই তবে তীব্রতার ঘাটতি ছিল। আমরা ওদের অনেক বেশি সুযোগ দিয়ে ফেলেছি। যার ফলে ওরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিল। আমরা নিচে নেমে খেলতে চাইনি, অথচ সেটাই করেছি। আমরা নমনীয় ছিলাম।’

রিয়ালের দুটি গোলই করেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে ভিনির হাতে। কিন্তু ম্যাচের সেরা মুহূর্তের প্রসঙ্গ টানলে ভিনির প্রথম গোলে টনি ক্রুসের সেই অসাধারণ পাসের দৃশ্য সবার মনে ভেসে ওঠার কথা। তবে ‘স্নাইপার’ ক্রুসকে পুরোটা সময় খেলাননি আনচেলত্তি। ৭৬ মিনিটে তাঁকে তুলে নিয়ে ব্রাহিম দিয়াজকে বদলি নামান।

টনি ক্রুসকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করেন আনচেলত্তি

নিজের এই সিদ্ধান্তকে সঠিকই মনে করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন আনচেলত্তি, ‘জুড বেলিংহামের মাংসপেশিতে টান লেগেছিল। টনি ক্রুস দর্শনীয় একটি ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু আমার পরিকল্পনা ছিল (ওদের কাছ থেকে) ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা। তাই তরতাজা খেলোয়াড়দের নামিয়েছি।’

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা থেকে ড্র করায় আগামী সপ্তাহে নিজেদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের কাজটা যে কিছুটা সহজ হতে যাচ্ছে, তা মানছেন আনচেলত্তি, ‘বরাবরের মতো এ মৌসুমেও আমাদের সামনে আরেকটি ফাইনাল খেলার দারুণ সুযোগ আছে। একটা দুর্দান্ত দলের বিপক্ষে আমরা সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছি। আরও ৯০ মিনিট কষ্ট করতে হবে। কিন্তু আমরা এমন পরিবেশে খেলব, যার সম্পর্কে আমাদের খুব ভালো জানাশোনা আছে। সমর্থকেরাও আমাদের সাহায্য করতে চলেছে।’

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গিয়ে রিয়ালকে হারিয়ে আসা কতটা কঠিন, তা সব দলেরই জানা। তাই প্রতিপক্ষরা রিয়ালের বিপক্ষে যা করার, নিজেদের মাঠেই করতে চায়। বায়ার্নও নিশ্চয় আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাদ্রিদে ফিরতি লেগে খেলতে যেতে চেয়েছিল। সেটা না হওয়ার পেছনে সরাসরি কিম মিন জেকে দুষেছেন টমাস টুখেল। মৌসুম শেষে বায়ার্নকে বিদায় বলতে যাওয়া কোচ টুখেল মনে করেন, দক্ষিণ কোরিয়ান সেন্টার ব্যাক কিম মিন জের কারণেই দুটি গোল খেতে হয়েছে।

রিয়ালের দুটি গোলেই কিম মিন জের দায় দেখছেন বায়ার্ন কোচ টমাস টুখেল

সাংবাদিকদের টুখেল বলেছেন, ‘ওকে দেখে দুবারই লোভী মনে হয়েছে। ভিনিসিয়ুসের প্রথম গোলের ক্ষেত্রে সে অনেক আগেই দৌড় শুরু করেছিল। সেটা করতে গিয়ে টনি ক্রুসের পাসে ধরা পড়েছে। সে অনুমাননির্ভর খেলা খেলেছে এবং খুব আক্রমণাত্মক ছিল। দুর্ভাগ্যবশত দ্বিতীয় গোলেও আবারও সে ভুল করে বসে। ওদের দুজনের বিপরীতে আমাদের পাঁচজন খেলোয়াড় ছিল। (এ অবস্থায় নিজেদের বক্সে) রদ্রিগোকে আক্রমণাত্মকভাবে ফাউল করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ওর ভুলগুলোর জন্যই আমাদের শাস্তি পেতে হয়েছে। তবে এমনটা ঘটতেই পারে। এখান থেকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’