ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকটি ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন নাজমুল হাসান
ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকটি ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন নাজমুল হাসান

ফেডারেশনগুলোর চাহিদা ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের ভাবনার ‘৫ ভাগ’ও নয়

বিসিবি সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনে আছেন নাজমুল হাসান। ক্রীড়াঙ্গনে অনেক কিছুই তাঁর জানা। আর তাই ক্রীড়ামন্ত্রীর নতুন দায়িত্ব পাওয়া নাজমুল হাসানের কাছে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর প্রত্যাশাও অনেক। নাজমুল হাসান নিজেও দায়িত্ব নিয়ে ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রথম ধাপে আজ ১০টি ক্রীড়া ফেডারেশনকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আলোচনার জন্য ডাকেন তিনি। আজ বিকেলে দেড় ঘণ্টার আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সাঁতার, অ্যাথলেটিকস, শুটিং, আর্চারি, ভারোত্তোলন, ক্যারম, বাস্কেটবল, ভলিবল, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি। টেবিল টেনিস ফেডারেশন বিশেষ কারণে আসতে পারেনি।

এ আলোচনায় ৯ ফেডারেশনের চাহিদা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। সেসব পূরণেরও আশ্বাস দিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, ফেডারেশনগুলো যা যা চেয়েছে, সেসব খুব বেশি কিছু মনে হয়নি নাজমুল হাসানের কাছে। নিজেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আজ যে ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে বসেছি, দুটি ফেডারেশন (আর্চারি ও শুটিং) কমপ্লেক্স চেয়েছে। বাকিগুলোর চাহিদা আমার যা ধারণা ছিল, তার চেয়ে অনেক কম। যা ভেবেছিলাম, তার ৫ ভাগও না। কমপ্লেক্স ছাড়া বাকিগুলো পূরণ করা কঠিন না।’

নাজমুল হাসান পরে অবশ্য যোগ করেন, ‘এটা যে বললাম খুব কম, আবার খুব কমও না। আমি বলছি আসলে ক্রিকেটে এসব করে। ওই তুলনায় আমার কাছে খুব কম মনে হচ্ছে। কমপ্লেক্সও কোনো ইস্যুই না। আমরা যে স্টেডিয়াম করতে চাইছি, তার ১০ ভাগও না (টাকার দিক থেকে)। এসব খুব একটা আহামরি মনে হচ্ছে না, তা না। কিন্তু এখানে তহবিল সংগ্রহ ও জোগান দেওয়া সহজ না। তবে আমার ধারণা সম্ভব। এটা নিয়ে চিন্তিত নই আমি।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বৈঠক করেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেটই বছরে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে এই বাজেট থেকে খেলার জন্য বরাদ্দ সামান্যই। তাই ক্রীড়ামন্ত্রী ফেডারেশনগুলোর চাহিদা কীভাবে পূরণ করবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। বিষয়টা নিয়ে ভেবেছেন তিনি।

অবশ্যই কড়ায়-গন্ডায় হিসাব নেব। যাদের সহযোগিতা করা হবে, তাদের মনিটরিংয়ের আওতায় রাখা হবে। এখন মাত্র আমি সব ফেডারেশন সম্পর্কে জানছি। কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।
নাজমুল হাসান, ক্রীড়ামন্ত্রী

ফেডারেশনগুলোর চাহিদা আগামী ছয় মাসের মধ্যে পূরণ করতে পারবেন কি না, তা জানেন না নাজমুল হাসান। তবে ছয় মাস পর নতুন বাজেটে এসব চাহিদা পূরণে অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সরকারের পক্ষে তা করা সম্ভব না হলে বেসরকারি খাত এনেও এসব চাহিদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নাজমুল হাসান।

বাস্কেটবলের সমস্যার সমাধান এরই মধ্যে করেছেন বলেও জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। বাস্কেটবল খেলা হতো আবাহনী ক্লাবের পাশে জিমনেসিয়ামে। সেখানে আবাহনীর ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অংশ হিসেবে যে নতুন জিমনেসিয়াম করা হচ্ছে, সেটি বাস্কেটবলেরই থাকবে। তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঁচটি ফেডারেশনকে জায়গা দেওয়া হবে।

নতুন বাজেটে ফেডারেশনগুলোর চাহিদা পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন নাজমুল

অপরিচ্ছন্ন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে কি না, এ প্রশ্নে কোনো আশ্বাস অবশ্য পাওয়া যায়নি। ক্রীড়ামন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কাজ চলছে। পরিকল্পনামতো ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ শেষ হওয়ার কথা। আমি তিনটি স্টেডিয়াম দেখব। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ও প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য নির্মীয়মাণ স্টেডিয়াম। আপাতত স্টেডিয়ামের ভেতরটাই দেখতে যাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পরিবেশগত সমস্যাটা যুগ যুগ ধরে চলছে। বিদেশে স্টেডিয়াম আমাদের দেশের মতো না। সেদিক দিয়ে আপনারা যেটা বলছেন পরিবেশটা ভালো না, আমি একমত। এটাও বলতে পারি, যেটা হয়ে আসছে এত দিন, ওটা ওঠানো (স্টেডিয়ামের দোকানপাট) এত সহজ না। আমি নিশ্চিত করতে পারি, সামনে যেসব স্টেডিয়াম হবে, তাতে এমন পরিবেশ হবে না।’

শুটিং, আর্চারি, সুইমিং, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলাদা করে বসার কথা বলেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। আলাদা করে ভলিবলও বসতে চেয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোর সঙ্গে না বসা পর্যন্ত তাদের সক্রিয় করা নিয়ে কোনো কথা বলবেন না মন্ত্রী। ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোয় বর্তমানে যে কর্মকর্তা আছেন, তাঁদের বদলনোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। কাজ করতে গিয়ে যদি মনে হয় বদল করা দরকার, তাহলে অবশ্যই করবেন।

তবে শুধু সহায়তা দিয়েই বসেই থাকবেন না ক্রীড়ামন্ত্রী। সঠিক নজরদারির ঘোষণাও দিয়েছেন। ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে প্রথম সভার পর খানিকটা হুঁশিয়ারির সুরেই নাজমুল হাসান বলেছেন, ‘অবশ্যই কড়ায়-গন্ডায় হিসাব নেব। যাদের সহযোগিতা করা হবে, তাদের মনিটরিংয়ের আওতায় রাখা হবে। এখন মাত্র আমি সব ফেডারেশন সম্পর্কে জানছি। কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আবার সামনে অনেকের সঙ্গেই আলাদাভাবে বসব।’

ফেডারেশনগুলোর ওপর সঠিক নজরদারির ঘোষণাও দিয়েছেন নাজমুল হোসেন

ক্রীড়ামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের আগে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের প্রতিনিধরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা আলোচনা নিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথাও জানিয়েছেন। শুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্তেখাবুল হামিদ যেমন বললেন, ‘আমরা যেন নিয়মিত অনুশীলন করে যেতে পারি, এ জন্য একটা শুটিং কমপ্লেক্স চেয়েছি। উনি দেখবেন বলেছেন। আমরা খুশি।’

আর্চারির সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ শুটিং ও আর্চারিকে এক মায়ের দুটি সন্তান বলে উপমা টেনে বলেছেন, ‘আমরা একটা জিনিস চেয়েছি, নিবিড় প্রশিক্ষণ। উনি দ্বিমত করেননি। বলেছেন, এটা কোনো বড় কিছু না।’

মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নেলী করিমের চাওয়া বেশি কিছু নয়, ‘আমরা এখন মন্ত্রীর কাছে কিছু সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা তৃণমূলে যেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা এফডিআর করে দিয়েছেন মহিলা ক্রীড়া সংস্থাকে। এখন আমাদের অর্থনৈতিক সংকট নেই। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে খেলা আয়োজনে কিছু চাহিদা থাকবে। ফেডারেশনের সঙ্গে তিনি যখন আলাদাভাবে বসবেন, তখন আরও কিছু বলব।’

ভারোত্তোলনের চাওয়া একটি জিমনেসিয়াম। সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ—এসবেও সহয়তা চেয়েছেন বলে জানান ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ মন্ত্রীর কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে খুশিমনেই ফিরেছেন, ‘আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত হয়েছি। রাতারাতি সাঁতার ভালো হয়ে যাবে না। আমরা ৩, ৫, ১০ বছরের দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সহায়তা চেয়েছি তাঁর। সমস্যাগুলো লিখিত দিয়েছি। তিনি দেখবেন বলেছেন।’