তিন মাস আগেও টেনিস কোর্টের বাইরে ছিলেন এলিনা সভিতোলিনা। গত বছরের অক্টোবরে সন্তানের মা হয়েছেন। প্রথম কয়েক মাস শুধু সন্তানকে নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন, টেনিস থেকে ছিলেন ছুটিতে। যে কারণে জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তাঁর অংশ নেওয়া হয়নি।
মাতৃত্বের জন্য বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম মিস করা সেই সভিতোলিনা এখন ছয় মাস পর আরেকটি গ্র্যান্ড স্লামের শেষ চারে দাঁড়িয়ে। ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে খেলতে এসে মেয়েদের টেনিসের ১ নম্বর খেলোয়াড় ইগা সিওনতেককে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন উইম্বলডনের সেমিফাইনালে। ২২ বছর বয়সী সিওনতেক শুধু টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ খেলোয়াড়ই নন, গত মাসে শেষ হওয়া ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়নও।
২৮ বছর বয়সী সভিতোলিনা মা হওয়ার পর টেনিসে ফেরেন গত এপ্রিলে, ডব্লুটিএ ট্যুরে চার্লস্টন ওপেন দিয়ে। খেলেছেন ফ্রেঞ্চ ওপেনেও। যেখানে শেষ আটে হেরে যান আরিনা সাবালেঙ্কার কাছে। পেশাদার টেনিস থেকে এক বছরের বেশি সময়ের বিরতি এবং মা হতে গিয়ে সভিতোলিনা যে শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন, তা থেকে ছন্দে ফেরার বার্তা দিয়েছেন চলমান উইম্বলডনে। যার প্রমাণ শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া।
তবে টেনিসে মা হওয়ার পর কোর্টে সাফল্যের গল্প লেখায় সভিতোলিনাই প্রথম নন। যেখানে সবচেয়ে বড় নামটা মার্গারেট কোর্ট। ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই রেকর্ড ২৪টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী এই কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় তারকা প্রথমবার মা হন ১৯৭২ সালে। এর পরের বছরই জেতেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ইউএস ওপেন। আরেক অস্ট্রেলিয়ান ইভোন গুলাগং ক্রলি মা হওয়ার পর ১৯৮০ সালে জেতেন উইম্বলডন। এরপর মায়েদের সাফল্যে লম্বা একটা বিরতি ছিল।
সাবেক এক নম্বর কিম ক্লাইস্টার্স গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন চারটি। এর মধ্যে তিনটিই মা হওয়ার পর। মা হওয়ার পর প্রথমবার গ্র্যান্ড স্লাম জেতেন ২০০৯ ইউএস ওপেনে। বেলজিয়ান তারকার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর একটি ছবি রীতিমতো আইকনিক হয়ে আছে। এক হাতে দেড় বছর বয়সী মেয়ে, আরেক হাতে ট্রফি। ক্লাইস্টার্স যাঁকে হারিয়ে ২০০৯ ইউএস ওপেন জিতেছিলেন, সেই ক্যারোলিন ওজনিয়াকি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, আগস্টে ইউএস ওপেন দিয়ে মাঠে ফিরবেন। ২০২০ সালে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলা ওজনিয়াকি এরই মধ্যে মা হয়েছেন।
ইয়োহানা কন্তা অবশ্য মা হওয়ার পর এরই মধ্যে মাঠেই নেমে পড়েছেন। এবারের উইম্বলডনে মেয়েদের আমন্ত্রণমূলক ডাবলস ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন ব্রিটেনের সাবেক এক নম্বর।
দুই বছর আগে মাত্র ৩০ বছর বয়সে অবসর নেওয়া কন্তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মা হিসেবে টেনিস কোর্টে ফেরা নিয়ে। যারা মা হওয়ার পর পেশাদার টেনিস চালিয়ে যান, তাদের কতটা সংগ্রাম করতে হয় তাঁর ইঙ্গিত দিয়ে কন্তা বলেন, ‘মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করাটা খুবই কঠিন। এটা একই সঙ্গে একঘেয়ে এবং আমি যেটা করতাম তার তুলনায় বিরক্তিকরও। বিশেষ করে কোর্টে সময় কাটানো, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরাঘুরি এবং নিজের মতো সময় কাটানোর দিক থেকে।’
তবে মা হওয়ার আগে যা করে এসেছেন, সে তুলনায় এখনকার ব্যস্ততাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন ১০ মাস বয়সী কন্যার মা কন্তা, ‘নিজেকে নিঃস্বার্থ একটা জায়গায় এনে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়াটা সহজ নয়। এটা মজার কিছুও নয়। তবে এই মুহূর্তে কোর্টে সময় দেওয়ার চাইতে প্রতিটি দিন সন্তানের সঙ্গে কাটানোকেই আমি বেশি পছন্দ করছি।’
টেনিসে মায়েদের ফেরার মিছিল অবশ্য সামনে আরও লম্বা হতে যাচ্ছে। জাপানের টেনিস তারকা নাওমি ওসাকা সম্প্রতি কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। টেনিসের এক নম্বর ও একাধিক গ্র্যান্ড স্লামজয়ীদের মধ্যে ওসাকা তৃতীয় খেলোয়াড়, যিনি এ বছর মা হয়েছেন। তার আগে মা হয়েছেন তিনবারের গ্র্যান্ড স্লামজয়ী অ্যাঞ্জেলিক কেরবার ও অ্যাশলি বার্টি। বার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিলেও কেরবার এবং ওসাকা দুজনই টেনিসে ফেরার কথা জানিয়েছেন। ওসাকা তো ২০২৪ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফেরার সুনির্দিষ্ট সময়ও উল্লেখ করেছেন।
সভিতোলিনার পর আরও সফল মায়েদের দেখার অপেক্ষায় টেনিস বিশ্ব।