টেনিসের তিন নক্ষত্র ফেদেরার, জোকোভিচ ও নাদাল
টেনিসের তিন নক্ষত্র ফেদেরার, জোকোভিচ ও নাদাল

নাদাল–ফেদেরারের সঙ্গে কেন বন্ধুত্ব সম্ভব নয়, জানালেন জোকোভিচ

টেনিস ইতিহাসের অন্যতম সফল তারকাদের একজন নোভাক জোকোভিচ। ক্যারিয়ারে লম্বা সময় রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালের ছায়ায় ঢাকা ছিলেন এই সার্বিয়ান। তবে নিজের হাল না ছাড়ার মানসিকতা জোকোভিচকে ঠিকই সর্বকালের সেরার কাতারে তুলে এনেছে। বর্তমানে নাদালের সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জয়ের রেকর্ড এখন জোকোভিচের দখলে।

খেলার মাঠে সাফল্যের সঙ্গে অবশ্য ক্যারিয়ারে বিতর্কও সঙ্গী হয়েছে জোকোভিচের। বিশেষ করে, করোনার টিকা না নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন ‘জোকার’। যে কারণে তাঁকে খেলতে দেওয়া হয়নি ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘কোরিয়েরে দেল্লা সেরা’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার, নাদাল-ফেদেরারের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং করোনার টিকা না নেওয়া নিয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন জোকোভিচ।

ক্যারিয়ারজুড়ে কোর্টের ভেতর জোকোভিচকে লড়তে হয়েছে রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালের সঙ্গে। ফেদেরারের সঙ্গে কেমন বন্ধুত্ব, জানতে চাইলে জোকোভিচের উত্তর, ‘আমরা কখনো বন্ধু ছিলাম না। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে এটা সম্ভব নয়। তবে আমরা শত্রুও নই। ফেদেরারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। সে সর্বকালের সেরাদের একজন। তাঁর অনবদ্য প্রভাব আছে। তবে আমাদের মধ্যে কখনো অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল না।’

তাঁরা তিনজন: দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদালের সঙ্গে রজার ফেদেরার

বলা হয়ে থাকে, একসময় নাদালের সঙ্গে নাকি জোকোভিচের দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু কোর্টে নাদালের বিপক্ষে হারের পর সেই বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায়। তবে এসব যে শুধুই রটনা, তা নিশ্চিত করে নাদাল বলেন, ‘নাহ, নাদাল আমার চেয়ে এক বছরের বড়। আমাদের দুজনেরই রাশি মিথুন। আমরা দুবার একসঙ্গে রাতের খাবার খেতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর সঙ্গেও বন্ধুত্ব অসম্ভব। আমি সব সময় তাঁকে শ্রদ্ধা করি এবং তাঁর গুণমুগ্ধ। আমি এখন যে অবস্থায় তার জন্য ফেদেরার-নাদালকে ধন্যবাদ। নাদাল আমার জীবনের অংশ। গত ১৫ বছরে আমি আমার মায়ের চেয়ে নাদালকে বেশি দেখেছি।’

সার্বিয়ান ভাষার বাইরে অনেকগুলো ভাষাতেই কথা বলতে পারেন জোকোভিচ। নিজের ভাষাবিদ পরিচয় নিয়ে এই টেনিস মহাতারকা বলেন, ‘ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, শৈশবে জার্মানও পারতাম। কিন্তু অনুশীলন করেছি অনেক দিন হয়ে গেল।’

তবে মাঠে রাগ, ক্ষোভ, আনন্দ প্রকাশ করতে মাতৃভাষাকেই বেছে নেন বলে জানান জোকোভিচ, ‘মাঠে আমি রাগ দেখাই সার্বিয়ান ভাষায়, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি সার্বিয়ান ভাষায় এবং লজ্জিতও হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করি সার্বিয়ান ভাষায়। এমনকি স্টাফদেরও সঙ্গে বলি, যখন আমি চাই না আমার কথা কেউ বুঝতে না পারুক।’
করোনার টিকা নেওয়া নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্কের মধ্যমণি ছিলেন জোকোভিচ। এমনকি টিকা না নেওয়ায় ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনও খেলতে দেওয়া হয়নি তাঁকে।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর নোভাক জোকোভিচ।

টিকাবিরোধী অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে জোকোভিচ বলেন, ‘আমি আমার ত্বকে সবকিছু সহ্য করেছি। আমার সম্পর্কে গত তিন বছর যা লেখা হয়েছে এবং টিভিতে যা বলা হয়েছে, তার ৯৫ শতাংশই মিথ্যা। আমি টিকাবিরোধী নই, আমি এমনটা কখনো বলিনি। আমি টিকার পক্ষেও নই। আমি ইচ্ছার স্বাধীনতার পক্ষে। এর পক্ষে দাঁড়ায়। কেউ তার শরীরে কোনো কিছু ইনজেক্ট করবে, কী করবে না, এটা বাছাইয়ের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। আমি বিবিসিতে বিষয়টা একবার ব্যাখ্যা করেছি। তবে তারা অনেক কথা বাদ দিয়ে দিয়েছে।’

শুধু টিকা নিয়েই নয়, যুদ্ধ নিয়েও জেকোভিচের নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজের ভাবনা জানত চাইলে জোকো বলেছেন, ‘যুদ্ধের সন্তান হিসেবে যে বিষয়টি আমি বলতে পারি তা হলো, যুদ্ধে কেউ জেতে না। যুদ্ধ জীবনের সবচেয়ে নোংরা ব্যাপার। মানুষের সবচেয়ে বাজে আবিষ্কার। ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ধারণা।’