দশম গেমে দানিল মেদভেদেভের সার্ভিস ব্রেক করে চতুর্থ সেটটা জিতে ইয়ানিক সিনার ম্যাচটাকে নিয়ে গেলেন পঞ্চম সেটে। আর তাতেই উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করল দুদিন আর দুবছর আগের দুই ম্যাচের স্মৃতি। আজকের মতো সেই ম্যাচ দুটিও হয়েছিল রড লেভার অ্যারেনায়। যার প্রথমটি হয়ে আছে দানিল মেদভেদেভের জন্য অনন্তকাল আক্ষেপ করার গল্প। ২০২২ সালের ফাইনালটিতে প্রথম দুই সেট জিতেও শেষ পর্যন্ত রাফায়েল নাদালকে রেকর্ড গড়া ২১তম গ্র্যান্ড স্লাম উপহার দিয়েছিলেন মেদভেদেভ। তবে দুদিন আগের টাটকা স্মৃতিটা অনন্ত অনুপ্রেরণা হতে পারত রুশ তারকার জন্য। প্রথম দুই সেট হেরেও যে প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য লিখে আলেকসান্দার জভেরেভকে হারিয়েছিলেন মেদভেদেভ।
অনুপ্রেরণা নয়, আজ সেই রড লেভার অ্যারেনাতে আক্ষেপের গল্পটাই ফিরে এল মেদভেদেভের কাছে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আরেকটি ফাইনালে যে প্রথম দুই সেট জিতেও ইয়ানিক সিনারের হাতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফিটা তুলে দিলেন তৃতীয়বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে ওঠা মেদভেদেভ।
পাঁচ সেটের ম্যারাথন লড়াই শেষে ইতালির সিনার জিতেছেন ৩-৬, ৩-৬, ৬-৪, ৬-৪, ৬-৩ গেমে। ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট লড়াই শেষে সিনারের এটি ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম একক। ছেলেদের গ্র্যান্ড স্লামে ইতালিয়ানদের ৪৮ বছরের শিরোপা-খরাও ঘুচল তাঁর এই জয়ে।
মেলবোর্নে গড়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ছেলেদের টেনিসে সিনার রোমান সাম্রাজ্য গড়তে পারেন কি না, দেখার বিষয় সেটিই। দুদিন আগেই তো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের অবিসংবাদিত ‘সম্রাট’ নোভাক জোকোভিচকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন চতুর্থ বাছাই ইতালিয়ান তারকা। তবে ২২ বছর বয়সী সিনারের কাঁধে ‘টেনিসের ভবিষ্যৎ’—এই ভারী জোয়ালটাও কিন্তু উঠে গেল।
টেনিসের ‘বিগ থ্রি’র বাইরে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পুরুষ এককটা সর্বশেষ জিতেছিলেন স্ট্যান ভাভরিঙ্কা। সেটিও ১০ বছর আগের ঘটনা। এরপর ফেদেরার-জোকোভিচ-নাদালরা টানা ৯টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ভাগাভাগি করার পর এল নতুন নাম—ইয়ানিক সিনার।
চতুর্থ বাছাই হিসেবে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলা সিনার বিস্মৃতি থেকে উঠিয়ে এনেছেন আদ্রিয়ানো পানাত্তার নামও। সিনারের আগে সর্বশেষ ইতালিয়ান হিসেবে ছেলেদের গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের কীর্তি যে পানাত্তারই। ১৯৭৬ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রোলাঁ গারোতে বিওর্ন বোর্গকে হারানো একমাত্র খেলোয়াড় পানাত্তা।
আগেও দুবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল খেলে দুবারই রানার্সআপ ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল মেদভেদেভকে। ২০২১ সালের ফাইনালে নোভাক জোকোভিচের কাছে হারের পরের বছরই টেনিসের আরেক কিংবদন্তি রাফায়েল নাদালের কাছে ফাইনালে হেরে যান মেদভেদেভ। এবার সেমিফাইনালে জভেরেভকে হারানোর পর সেই মেদভেদেভ বলেছিলেন, ‘হয়তো তৃতীয়বারে সৌভাগ্যবান হব আমি।’ কিন্তু এবারও সৌভাগ্য ধরা দিল না রুশ তারকাকে।
তৃতীয় বাছাই হিসেবে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলা মেদভেদেভ প্রথম সেটে দুবার সিনারের সার্ভিস ব্রেক করেন। নিজের সার্ভিসে প্রতিটি গেমেই জয় পাওয়া রুশ তারকা প্রথম সেটটি জিততে সময় নেন মাত্র ৩৬ মিনিট।
দ্বিতীয় সেট শেষ হতে একটু বেশি সময়ই লেগেছিল। প্রথম সেটের মতো ৬-৩ গেমে জিতলেও এবার প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল খেলা সিনারকে হারাতে ৪৯ মিনিট লাগে মেদভেদেভের। এই সেটে সিনারের দুটি সার্ভিস ব্রেক করা মেদভেদেভ এগিয়ে গিয়েছিলেন ৫-১ গেমে। এরপর সিনার মেদভেদেভের একটি সার্ভিসই শুধু ব্রেক করে সময় একটু বাড়িয়েছেন।
সিনার ঘুরে দাঁড়ান তৃতীয় সেটে। তৃতীয় সেটে লড়াই হচ্ছিল সমান সমানই। যার যার সার্ভিস ধরে রেখে ৪-৪ গেমে সমতায় নিয়ে গিয়েছিলেন মেদভেদেভ-সিনার। নিজের সার্ভে নবম গেমটা জিতে এগিয়ে যাওয়া সিনার পরের গেমে মেদভেদেভের সার্ভিস ব্রেক করে ম্যাচটাকে চতুর্থ সেটে নিয়ে যান। চতুর্থ সেটেও একই গল্প। একদম শেষ গেমে মেদভেদেভের সার্ভিস ব্রেক করে সেটটি জিতে নেন সিনার। এই সেটের স্থায়িত্ব ছিল ৫৬ মিনিট।
মেদভেদেভের দিকে যে আরেকটি দুঃস্বপ্ন ধেয়ে আসছে, সেটি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় শেষ সেটের ষষ্ঠ গেমে। নিজের সার্ভিসের ওই গেমে তিন-তিনটি আনফোর্সড এরর করে বসেন মেদভেদেভ। অন্যদিকে একটি ব্যাকহ্যান্ড ও একটি ফোরহ্যান্ড উইনার মেরে গেমটি ৪০-১৫ পয়েন্ট জিতে ৪-২ গেমে এগিয়ে যান সিনার।
তিন গেম পরে আরেকটি ফোরহ্যান্ড উইনার মেরেই কোর্টে লুটালেন সিনার। ওই উইনারেই যে নিশ্চিত প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফি হাতে নেওয়া।