২০২১ সালে ইউএস ওপেনে জোকোভিচকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের একমাত্র গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা জেতেন মেদভেদেভ
২০২১ সালে ইউএস ওপেনে জোকোভিচকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের একমাত্র গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা জেতেন মেদভেদেভ

ইউএস ওপেন

যেদিন জোকোভিচকে হারিয়ে খরুচে ট্রফি-উৎসব ভেস্তে দিয়েছিলেন মেদভেদেভ

দানিল মেদভেদেভ কি পারবেন নোভাক জোকোভিচকে আটকাতে? ইউএস ওপেনের পুরুষ এককের ফাইনালে আজ রাতে সার্বিয়ান কিংবদন্তির মুখোমুখি হবেন রুশ তারকা। উন্মুক্ত যুগে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি ২৪তম শিরোপা জয়ের সামনে থাকা জোকোভিচকে হারাতে পারলে মেদভেদেভ জিতবেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম একক শিরোপা। তাঁর প্রথম শিরোপাটি এসেছিল ইউএস ওপেনেই, সেবার জোকোভিচকেই হারিয়েছিলেন তিনি।

তবে সেবার শুধু জোকোভিচকে হারাননি মেদভেদেভ, ভেস্তে দিয়েছিলেন ইউএস ওপেন কর্তৃপক্ষের এক জমকালো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও। যে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে বেশ কাঠখড়ই পোহাতে হয়েছিল তাদের। খরচ হয়েছিল মোটা অঙ্কের অর্থও।

২০২১ সালে বছরের প্রথম তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম—অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, উইম্বলডন ও ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছিলেন জোকোভিচ। ইউএস ওপেনে তাই গিয়েছিলেন ইতিহাস গড়ার হাতছানি নিয়ে। ফ্ল্যাশিং মিডোসে জিতলে ১৯৬৯ সালে রড লেভারের পর প্রথম পুরুষ হিসেবে ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্লাম বা এক পঞ্জিকাবর্ষের সব গ্র্যান্ড স্লাম জেতার কীর্তি হতো জোকোভিচের।

সে মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিল ইউএস ওপেন। পুরস্কার বিতরণীতে ইউএস ওপেনের পাশাপাশি যাতে অন্য তিনটি গ্র্যান্ড স্লামের ট্রফিও থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে চেয়েছিল তারা। বিমা করা আছে, এমন ট্রফিগুলো আনতে ৫০ হাজারের বেশি ইউএস ডলারও খরচ করেছিল তারা। বাকি তিনটি ট্রফি একত্র করতে বেশ কিছু ঝক্কিও পোহাতে হয় তাদের।

২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের সামনে জোকোভিচ

সে আয়োজনের কথা জানিয়ে ইউএস ওপেনের মুখপাত্র ক্রিস উইডমেয়ার বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ‘আমরা জানতাম, ইউএস ট্রফির পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মতো করলেই ব্যাপারটি হবে না। এর চেয়ে বড় কিছু হতে হবে। ফলে এরপরের অবধারিত যে প্রশ্ন আসে—কীভাবে বাকি তিনটি ট্রফি নিউইয়র্কে আনা হবে?’

সে পরিকল্পনা অবশ্য শুরু হয়েছিল জুলাইয়ে জোকোভিচ উইম্বলডন জেতার পরপরই। বড় ঝামেলাটা ছিল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি নিয়ে। সেবার করোনাভাইরাসের কড়াকড়ি চলে বলে অস্ট্রেলিয়া থেকে সেটি আনানো সম্ভব ছিল না। তাহলে?

সমাধান হয়ে এসেছিলেন লেভার নিজে, যাঁর রেকর্ড ভাঙার সামনের ছিলেন জোকোভিচ। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি বেশ আগে থেকেই ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকেন। তাঁর বাসায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ট্রফির একটি রেপ্লিকা ছিল। বাইরের একটি ফার্মের মাধ্যমে লেভারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর নিউইয়র্কে আনা হয় সে ট্রফি। সেটির জন্য বিশেষভাবে বানানো একটি বাক্সে বিমানের প্রথম শ্রেণির সিট ভাড়া করে নিউইয়র্কে নিয়ে আসা হয় ট্রফিটি। হাজার হলেও গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফি বলে কথা!

ফ্রেঞ্চ ওপেনের ট্রফি নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমসে আটকে ছিল ৪৮ ঘণ্টা। তবে ফাইনালের আগেই ভেন্যুতে এসে পৌঁছায় সেটি। উইম্বলডনের ট্রফি তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই এসেছিল। কিন্তু সে ট্রফির নিরাপত্তায় টুর্নামেন্ট জাদুঘরের দুজন সঙ্গী ছিলেন।

আলকারাজকে হারিয়ে ফাইনালে এসেছেন মেদভেদেভ

পরিকল্পনা ছিল, জোকোভিচ জিতলে পুরস্কার বিতরণীর আগে টেলিভিশন ও স্টেডিয়ামের দর্শকদের উদ্দেশে ঘোষণা দেওয়া হবে, ‘প্রথমবারের মতো পুরুষ এককের চারটি গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফি একত্রে’। কোর্টে চারটি ট্রফি আনা হবে, সঙ্গে দেখানো হবে টুর্নামেন্টের লোগো। জোকোভিচ দুটি সেট জিতলেই ট্রফিগুলো লকার থেকে বের করে কোর্টে যাওয়ার করিডোরে এনে রাখা হবে, পরিকল্পনা ছিল এমন।

চারটি ট্রফি একত্র করার পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে একটা ভাবনা ঘুরছিল আয়োজকদের মাথায়, ‘যদি জোকোভিচ না জেতেন, তাহলে কী হবে?’

জোকোভিচ শেষ পর্যন্ত জেতেননি। মেদভেদেভ ম্যাচটি জেতেন সরাসরি সেটে—৬-৪, ৬-৪, ৬-৪ গেমে। শুধু জোকোভিচকে ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্লাম জেতা থেকে বঞ্চিত করেননি সেদিন রুশ তারকা, ভেস্তে দিয়েছিলেন আয়োজকদের ‘খরুচে’ এক পরিকল্পনাও। পরদিন তিনটি ট্রফি নিজ নিজ গন্তব্যে নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা শুরু করে আবার।

এবার অবশ্য তেমন কোনো রেকর্ডের সম্ভাবনা নেই, যেহেতু এরই মধ্যে উইম্বলডনে কার্লোস আলকারাজের কাছে হেরে গেছেন জোকোভিচ। তবে এবারের ফাইনালেও পরিষ্কার ফেবারিট তিনিই। ২০২৩ সালে মেজর টুর্নামেন্টের ম্যাচে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছেন তিনি, ২৬টি জয়ের বিপরীতে। অন্যদিকে আলকারাজকে বিদায় করে ফাইনালে এসেছে মেদভেদেভ।