ঘটনা একই—খেলা শেষে হাত না মেলানো। তবে ‘নিশানা’ পাল্টে গেছে।
ফ্রেঞ্চ ওপেনে হাত না মিলিয়ে দুয়ো শুনেছিলেন ইউক্রেনের এলিনা সভিতোলিনা। এবার উইম্বলডনে সেই সভিতোলিনার সঙ্গে হাত না মিলিয়ে দুয়ো শুনলেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। এ নিয়ে পরে প্রশ্ন উঠলে টেনিসের সাবেক নাম্বার ওয়ান অসহায়ত্বের সুরেই প্রশ্ন তুললেন, ‘আমার কী করার আছে?’
আজারেঙ্কার এই দুয়ো শোনা আর অসহায়ত্বের প্রশ্নটি উঠেছে রোববারের উইম্বলডনে। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে সভিতোলিনার মুখোমুখি হন আজারেঙ্কা। দুজনের লড়াইটা টেনিস কোর্ট ছাড়িয়ে যুদ্ধবিষয়ক আলোচনায় গড়ায় ম্যাচের আগেই।
ইউক্রেনে হামলা করা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সহযোগী রাষ্ট্র বেলারুশ। যে কারণে ইউক্রেনের খেলোয়াড়েরা রাশিয়া ও বেলারুশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত না মেলানো বা দৃশ্যত সৌহার্দ্যমূলক আচরণে আগ্রহী নন। ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলারুশের আরিয়ানা সাবালেঙ্কার কাছে হারের পর হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সভিতোলিনা। এ কারণে গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকেরা তাঁকে দুয়ো দেন। তবে রাশিয়া ও বেলারুশের কারও সঙ্গে হাত মেলাবেন না বলে স্পষ্টই জানিয়ে দেন সভিতোলিনা।
সেই ধারাবাহিকতায় এবারের উইম্বলডনে আজারেঙ্কার সঙ্গেও সভিতোলিনা হাত মেলাননি। দুজনের লড়াইয়ে প্রথম সেটটা ৬-২ ব্যবধানে জেতেন আজারেঙ্কা। তবে পরের দুই সেট ৬-৪ ও ৭-৬ (১১-৯) জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেন র্যাঙ্কিংয়ের ৭৬ নম্বরে থাকা সভিতোলিনা। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর প্রথমে আম্পায়ারের দিকে এগিয়ে যান আজারেঙ্কা, সভিতোলিনা পরে। উভয়ে আম্পায়ারের সামনে গেলেও মুখোমুখি হতে হয়নি, হাতও মেলাননি।
নিজের বাক্সপেটরা গুছিয়ে আজারেঙ্কা যখন কোর্ট ছেড়ে যাচ্ছিলেন, তখন গ্যালারি থেকে তাঁকে উদ্দেশ্য করে দুয়ো দেওয়া হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে নিজের প্রতি দর্শকের এই প্রতিক্রিয়াকে ‘অন্যায্য’ বলে উল্লেখ করেন বেলারুশিয়ান এই তারকা, ‘আমার কী করার ছিল? ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর অপেক্ষা করতাম? সে (সভিতোলিনা) তো রাশিয়া এবং বেলারুশের কারও সঙ্গে হাত মেলাতে চায় না। আমি তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মানও করি।’
সভিতোলিনা অবশ্য আজারেঙ্কার হাত না মেলানোর কারণে দুয়ো শোনার বিষয়টিতে পুরোপুরি একমত নন। তাঁর মতে ব্যাপারটা খানিকটা ভিন্ন, ‘আমার মনে হয়েছে, কেউ হেরে যাওয়ার পর যদি হাত না মেলায়, তাহলে দুয়ো শোনে। তবে টেনিসের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা যেন রুশ ও বেলারুশিয়ানদের সঙ্গে ইউক্রেনিয়ান খেলোয়াড়দের হাত মেলানো বন্ধ থাকবে উল্লেখ করে একটা বিবৃতি দেয়।’
২৮ বছর বয়সী সভিতোলিনা এখনো কোনো গ্র্যান্ড স্লাম জিততে পারেননি। দুবার সেমিফাইনালে খেলেছেন, ২০১৯ সালের উইম্বলডন ও ইউএস ওপেনে। এবার আজারেঙ্কাকে হারিয়ে উইম্বলডনের কোয়ার্টারে ওঠা এই ইউক্রেনিয়ান রাশিয়ান ও বেলারুশিয়ানদের বিষয়ে আরও একবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, ‘আগেও কয়েকবার বলেছি, যতক্ষণ না রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভূমি না ছাড়বে, ততক্ষণ ওদের সঙ্গে আমি হাত মেলাব না। এটা পরিষ্কার করেই বলা আছে। জানি না, আরও কতটুকু পরিষ্কার করতে হবে।’
আগামীকাল কোয়ার্টার ফাইনালে সভিতোলিনার প্রতিপক্ষ ইগা সিওনতেক, যিনি গত মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ট্রফি হাতে তুলেছেন।