গত বছর উইম্বলডনে খেলতে পারেননি রাশিয়া ও বেলারুশের কোনো খেলোয়াড়। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও সামরিক অভিযানের কারণেই ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী গত বছর রাশিয়াকে উইম্বলডনে নিষিদ্ধ করেছিল অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাব (এইএলটিসি)। সেই অভিযানের সমর্থক ও সহযোগী দেশ বেলারুশের খেলোয়াড়েরাও পেয়েছিলেন একই নিষেধাজ্ঞা।
তবে এই বছরের উইম্বলডনের জন্য তুলে নেওয়া হয় সেই নিষেধাজ্ঞা। ফলে বছরের তৃতীয় গ্র্যান্ড স্লামে খেলতে পারবেন রাশিয়া ও বেলারুশের খেলোয়াড়েরা। প্রশ্ন হচ্ছে, গত বছর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, এই বছর সেটা কেন তুলে নিল উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ?
গত বছর উইম্বলডনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা টেনিস-বিশ্বেই বিতর্ক তৈরি করেছিল। খোদ নোভাক জোকোভিচ বলেছিলেন, ‘এভাবে খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করা ভুল সিদ্ধান্ত’, রাফায়েল নাদাল ওই নিষেধাজ্ঞাকে বলছিলেন ‘খুবই অন্যায্য’, যা বিশ্বের অনেক সেরা খেলোয়াড়কে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল।
নিষেধাজ্ঞার ফলে সেই সময় পুরুষদের টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের ২ নম্বর খেলোয়াড় ও ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন রাশিয়ার দানিল মেদভেদেভ, মেয়েদের র্যাঙ্কিংয়ের ৪ নম্বর বেলারুশের আরিনা সাবালেঙ্কা খেলতে পারেননি উইম্বলডনে। ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল এটিপি ও ডব্লুটিএ কর্তৃপক্ষও, তারা উইম্বলডনের পয়েন্ট র্যাঙ্কিং থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিল। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত গ্র্যান্ড স্লাম অনেকটা প্রদর্শনী টুর্নামেন্টের মতো হয়ে পড়েছিল।
এ বছর মার্চে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাব (এইএলটিসি)। তবে সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় কিছু শর্তও। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হচ্ছে, রাশিয়া ও বেলারুশের খেলোয়াড়েরা নিজ দেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারবেন না, তাঁদের খেলতে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রতিযোগী হিসেবে। তাঁরা নিজ দেশ থেকে কোনো অর্থ সাহায্য নিতে পারবেন না। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রতি কোনো ধরনের সমর্থন প্রকাশ করতে পারবেন না।
অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাব (এইএলটিসি) তাদের বিবৃতিতে বলেছিল, ‘ব্রিটিশ সরকার, লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশন এবং আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে শর্তগুলো যত্নসহকারে তৈরি করা হয়েছে। শর্তগুলো ব্রিটেনের ক্রীড়া সংস্থাগুলোর জন্য সরকারের নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাবের সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষেও নানা রকম কথা হচ্ছে। উইম্বলডনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও মস্কোতে জন্ম নেওয়া কাজাখস্তানের ইয়েলেনা রিবাকিনা বলেছেন, ‘এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।’ অন্যদিকে মেয়েদের টেনিসের ১ নম্বর খেলোয়াড় পোল্যান্ডের ইগা সিওনতেক বলেছেন, ‘রাশিয়া ও বেলারুশের খেলোয়াড়দের এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ক্রীড়াবিশ্ব আসলে ব্যর্থ হলো মস্কোকে একটা কঠোর বার্তা দিতে।’
অল ইংল্যান্ড লন টেনিস ক্লাব অবশ্য বলছে, এরই মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশের অনেক খেলোয়াড় শর্ত মেনে ব্যক্তিগত ঘোষণাপত্রে সই করেছেন। এর পাশাপাশি এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়া ইউক্রেনের খেলোয়াড়দের আবাসন খরচও বহন করবে উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া উইম্বলডনের প্রতিটি টিকিট বিক্রির অর্থ থেকে ১ পাউন্ড করে দেওয়া হবে ইউক্রেন রিলিফ ফান্ডে।