স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনা ছিল। ছিল জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
বলা হচ্ছে, গত মাসে ফ্রেঞ্চ ওপেনের পুরুষ এককে নোভাক জোকোভিচ ও কার্লোস আলকারাজের সেমিফাইনালের কথা। আসলে সেই ম্যাচের প্রথম দুই সেটের কথা। টেনিসের সর্বকালের অন্যতম সেরার সঙ্গে টেনিসের ভবিষ্যতের সেই লড়াইয়ের প্রথম দুই সেট দেখেই পয়সা উশুল হয়ে গিয়েছিল রোলাঁ গারোতে ফাইনাল দেখতে যাওয়া দর্শকদের।
এরপর কী যেন হলো আলকারাজের! দ্বিতীয় সেটটা ৭-৫ গেমে জিতে সমতা আনার পর ক্র্যাম্প। তাতে আলকারাজের শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে বেশি প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসল তাঁর মানসিক সক্ষমতার পাশে। আলকারাজ তো নিজেই জানিয়েছিলেন, জোকোভিচের বিপক্ষে খেলা নিয়ে বেশি বেশি ভেবেই শরীরের সেই বিগড়ে যাওয়া। সেই ম্যাচের শেষ দুই সেট ৬-১, ৬-১ গেমে জিতে ফাইনালে ওঠার পর চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছেলেদের টেনিসে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ড গড়েন জোকোভিচ।
মাসখানেক পর আজ আবার আরেকটি গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে মুখোমুখি জোকোভিচ ও আলকারাজ। উইম্বলডনের পুরুষ এককের ফাইনাল। যে ফাইনালটা জিতলে ছেলে-মেয়ে মিলিয়েই টেনিস ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম একক জয়ের রেকর্ডে মার্গারেট কোর্টের পাশে বসবেন ২৩ বারের গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন জোকোভিচ। ছুঁয়ে ফেলবেন সবচেয়ে বেশি উইম্বলডন একক জয়ে রজার ফেদেরারের (৮) রেকর্ডও।
জোকোভিচ আজই ওই দুই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে পারবেন কি না, কে জানে! তবে বড় সেই কীর্তি গড়ার ম্যাচে সবচেয়ে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীকেই পেয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী জোকোভিচ। এটিপি র্যাঙ্কিংও সাক্ষ্য দিচ্ছে সেটির, আলকারাজ বিশ্বের ১ নম্বর খেলোয়াড়। সবচেয়ে বড় কৌতূহল, আজও না আবার ‘জোকোভিচ’ নামটা বড় হয়ে ওঠে আলকারাজের মনে।
ফাইনালের আগে আলকারাজের সবচেয়ে বড় প্রশংসাটা করলেন ২০১৩ সালের পর সেন্টার কোর্টে অপরাজিত জোকোভিচ। নিজের ছায়াই নাকি দেখতে পাচ্ছেন স্পেনের ২০ বছর বয়সী তারকার মধ্যে, ‘ক্যারিয়ারজুড়েই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সময়ের সঙ্গে নিজের উন্নতি করা, পরিস্থিতি মেনে সেই অনুযায়ী খেলা। আর সে (আলকারাজ) কিনা ক্যারিয়ারের শুরুতেই সেসব করে যাচ্ছে।’
মুখোমুখি লড়াইয়ে ১-১ সমতায় থাকা আলকারাজও কম যাননি জোকোভিচের প্রশংসায়, ‘তাঁর কোনো দুর্বলতা নেই। পরিপূর্ণ এক মানুষ, পরিপূর্ণ এক খেলোয়াড়। অসাধারণ। কোর্টে তিনি কোনো কিছুই ভুল করেন না। শারীরিকভাবে তিনি একটা দানব, মানসিকভাবেও। তাঁর সবকিছুই অবিশ্বাস্য।’
আজ অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্টে অসাধারণ এক ম্যাচ দেখার আশা নিয়েই চোখ রাখতে পারেন। জোকোভিচ যে জমজমাট এক ম্যাচের প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘ওর বয়স কম। সে ক্ষুধার্ত। আমিও ক্ষুধার্ত। তো হয়ে যাক এক ভোজ উৎসব।’
দুজনের বয়সের পার্থক্য ১৬। ১৯৭৪ সালের পর ছেলেদের গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল বয়সের এত ব্যবধান দেখেনি।
কিন্তু তাতে কী, বয়সটা যে শুধুই একটি সংখ্যা, সেই প্রমাণ তো তাঁরা প্রতিনিয়তই দিয়ে চলেছেন।