নোভাক জোকোভিচ
নোভাক জোকোভিচ

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন: টানা ৩৩ জয়ের পর সেমিফাইনাল থেকে বিদায় জোকোভিচের

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে আজ ইয়ানিক সিনারের কাছে প্রথম দুই সেটে ৬-১ ও ৬-২ গেমে পিছিয়ে পড়ায় হার চোখ রাঙাচ্ছিল নোভাক জোকোভিচকে। তবে এমন অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য নতুন নয়। এর আগে গ্র্যান্ড স্লাম ক্যারিয়ারে ৮ বার প্রথম দুই সেটে হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে জেতার অভিজ্ঞতা ছিল সার্বিয়ান তারকার। এবারও তৃতীয় সেটে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতলেন ৭-৬ (৮/৬) গেমে।

কিন্তু চতুর্থ সেটে আর শেষ রক্ষা হলো না। হেরে গেলেন ৬-৪ গেমে। এর আগে ১০ বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনাল থেকে প্রতিবারই ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেছেন জোকোভিচ। এবার আর পারলেন না ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। তাতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সামাজ্র্যও হাতছাড়া হলো এই টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১০ বারের চ্যাম্পিয়নের।

এই হারে মেলবোর্ন পার্কে জোকোভিচের টানা ৩৩ ম্যাচ জয়ের ধারাতেও ছেদ পড়ল। ইতালিয়ান চতুর্থ বাছাই সিনার শীর্ষ বাছাই জোকোভিচকে হারিয়ে শুরু করলেন নতুন এক দিগন্তের। তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম ক্যারিয়ারে এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম ফাইনাল।

ইতিহাসের প্রথম ইতালিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে একক ইভেন্টের ফাইনালে উঠলেন সিনার। বছরের প্রথম এই গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে জোকোভিচ সর্বশেষ হেরেছিলেন ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি—দক্ষিণ কোরিয়ার হেইন চুংয়ের কাছে হেরেছিলেন চতুর্থ রাউন্ডে। এরপর মাঝে ২১৯৫ দিনের ব্যবধানে টানা ৩৩ ম্যাচ জিতেছেন জোকোভিচ, টেনিসের উন্মুক্ত যুগে যা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে টানা জয়ের যৌথ রেকর্ড।

প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালের দেখা পেলেন ইয়ানিক সিনার

আজকের ম্যাচে চিরায়ত সেই ধারাবাহিক জোকোভিচকে দেখা যায়নি। ৫৪টি ‘আনফোর্সড এরর’ করেছেন, একটি ব্রেক পয়েন্টও নিতে পারেননি। র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানীয় এ তারকার ছন্দহীন খেলার সুযোগ নিয়ে এবং নিজেও মাথা ঠান্ডা রেখে দুর্দান্ত খেলে ২০০৮ সালের পর সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ছেলেদের এককে ফাইনালে উঠলেন সিনার (২২ বছর ১৬৩ দিন)। ১৬ বছর আগে (২০০৮) অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পুরুষ এককে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনালে ওঠার রেকর্ড জোকোভিচের (২০ বছর ২৫০ দিন)। সেবার ক্যারিয়ারের প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপাও জিতেছিলেন তিনি। তবে আজ তাঁর হারটি তাৎপর্যপূর্ণ

জোকোভিচের সঙ্গে আজকের ম্যাচসহ সর্বশেষ চারবারের মুখোমুখিতে তিনবারই জিতলেন সিনার। সাম্রাজ্যের হাতবদল? সময়ই তা বলে দেবে। তবে ৩৬ বছর বয়সী জোকোভিচ বিদায় নিয়ে একটি সুযোগও হাতছাড়া করলেন। এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিততে পারলে ক্যারিয়ারে ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে মার্গারেট কোর্টকে পেছনে ফেলে নারী-পুরুষ মিলিয়ে এককভাবে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লামের মালিক হতেন, কিন্তু তার আগেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ায় সেটি আর হলো না।

রোববার পুরুষ এককের ফাইনালে সিনার প্রতিপক্ষ এখনো ঠিক হয়নি। সেমিফাইনালের অপর ম্যাচে দানিল মেদভেদেভ এবং আলেক্সান্দার জভেরেভের মধ্যে জয়ী খেলোয়াড় শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সিনারের মুখোমুখি হবেন। সিনার যে জোকোভিচের বাজে খেলার সুযোগ নিয়েছেন, সেটি বোঝা গেল ম্যাচ শেষে তাঁর কথায়, ‘ম্যাচটা খুব কঠিন ছিল। শুরুটা ভালো করেছিলাম। সে প্রথম দুই সেটে পারেনি। আমার মনে হয়েছে, কোর্টে সে নিজের সেরাটা অনুভব করছিল না। তাই আমি চেষ্টা করে গেছি।’

হারের পর সিনারকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান জোকোভিচ

সিনারের সেই চেষ্টার ফলটা হলো এমন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জোকোভিচ কখনো সেমিফাইনালে হারেননি—সেই ইতিহাসটা আজ পাল্টে গেল। ছেলেদের টেনিসে ‘বিগ থ্রি’-এর মধ্যে রজার ফেদেরার ২০২২ সালেই অবসর নিয়েছেন, রাফায়েল নাদাল চোটের কারণে এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলেননি। ছিলেন শুধু জোকোভিচ। তিনিও সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ায় ২০০৫ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ছেলেদের এককের ফাইনালে এই তিনজনের মধ্যে কাউকে দেখা যাবে না।