আর কি দেখা যাবে এমন লড়াই!
নেটের এক পাশে রাফায়েল নাদাল, অন্য পাশে নোভাক জোকোভিচ—সম্ভবত আজই শেষবারের মতো টেনিসের দুই কিংবদন্তির দ্বৈরথ দেখে ফেললেন ভক্তরা। তাঁরা মুখোমুখি হয়েছিলেন কোর্ট ফিলিপে শাত্ররিয়েতে। এই সেই কোর্ট, যেখানে ১৪ বার ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা হাতে তুলে লাল দুর্গের রাজার খেতাবটা পেয়েছেন নাদাল।
তবে আজ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ৬০তম লড়াই শেষে বিজয়ীর হাসি হাসতে পারেননি নাদাল। প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিনদেশি হয়েও মশাল হাতে নেওয়ার বিরল সম্মান পাওয়া ফরাসিদের প্রিয় রাফাকে হারিয়ে অলিম্পিক টেনিসের পুরুষ এককের তৃতীয় রাউন্ডে উঠে গেছেন জোকোভিচ।
ছেলেদের টেনিসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম এককজয়ী জোকোভিচ ম্যাচটি জিতেছেন সরাসরি ৬-১, ৬-৪ গেমে। তাতে অলিম্পিক সোনা জয়ের অধরা স্বপ্নটাকে সত্যি করার পথে আরেকটি ধাপ পেরোলেন সার্বিয়ান তারকা।
ম্যাচের প্রথম ১১টি গেমের ১০টিই জিতেছেন জোকোভিচ। এ কোন নাদাল—খেলা দেখে তখন বোঝা যায়নি এই রোলাঁ গারোতেই ১৪টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন তিনি। গত দুই বছরে একের পর এক চোটের সঙ্গে লড়া নাদালকে নিয়ে যে শেষ কথা বলা যায় না, এরপরই সেটির প্রমাণ আরেকবার দিলেন ৩৮ বছর বয়সী মহাতারকা। হঠাৎ করেই যেন ফিরে এলেন সেই পুরোনো নাদাল। টানা চারটি গেম জিতে দ্বিতীয় সেটটাকে ৪-৪ বানিয়ে ম্যাচটাকে তৃতীয় সেটে নেওয়ার জোগাড়ও প্রায় করে ফেলেছিলেন। দারুণ এক ফোরহ্যান্ড উইনার মেরেই জোকোভিচের সার্ভিস ব্রেক করে সমতা এনেছিলেন নাদাল। কোর্ট ফিলিপে শাত্ররিয়েতে তখন ‘রা-ফা! রা-ফা’ স্লোগানে কান পাতা দায়!
তবে সেই স্লোগান মিইয়ে যেতেও সময় লাগল না। ৩৭ বছর বয়সী জোকোভিচ আবারও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেন ম্যাচে। আর বিদায় দিলেন লাল দুর্গের রাজাকে।
২০০৬ সালে এই রোলাঁ গারোতেই প্রথম দেখা হয়েছিল গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের হিসেবে টেনিস ইতিহাসের সেরা দুই খেলোয়াড়ের। ১৮ বছর পর সেই রোলাঁ গারোতে নাদালের বিপক্ষে ৩১তম জয় পাওয়ার পর জোকোভিচ স্মরণ করলেন সেই সময়টাকে, ‘২০০৬ সালে আমি ভাবতেও পারিনি প্রায় ২০ বছর পরেও আমরা একে অন্যের বিপক্ষে খেলব।’
দুই বছর পর হওয়া দুই মহারথীর দ্বৈরথের ফলটা জোকোভিচের পক্ষে গেল, তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। চোটের সঙ্গে লড়াই করে টেনিসে ফেরা নাদালের তো অলিম্পিকের এককে খেলা নিশ্চিত হয়েছে একদম শেষ মুহূর্তে। না খেলে নাদাল পেছাতে পেছাতে র্যাঙ্কিংয়ের ১৬১ নম্বরে নেমে যাওয়াতেই দ্বিতীয় রাউন্ডে দেখা হয়ে গেছে নাদাল-জোকোভিচের। একক থেকে বিদায় নিলেও প্যারিসে এখনো টিকে আছেন নাদাল। টেনিসের ভবিষ্যৎ কার্লোস আলকারাজকে নিয়ে যে ডাবলস খেলছেন নাদাল।
২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে এককে সোনা জিতেছিলেন নাদাল। আট বছর রিওয়ে ডাবলসের সোনা গলায় ঝুলিয়েছেন ২২ বারের গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন। জোকোভিচের অবশ্য এখনো সোনার পদকটা গলায় ঝোলানো হয়নি। ২০০৮ সালে বেইজিংয়ে ব্রোঞ্জ জেতাটাই অলিম্পিকে তাঁর সেরা সাফল্য হয়ে আছে।