আর কিছুক্ষণ পরই টিভি পর্দায় চোখ রাখবেন কোটি দর্শক। সবার চোখের সামনে ভেসে উঠবে একটি ছবি। যেটির অন্য নাম হতে পারে ‘ঘরের যুদ্ধ’! ভেনাস ও সেরেনা উইলিয়ামস নিজেকে নিংড়ে দেবেন শেষ হাসি হাসতে। এখানে বোনকে ছাড় দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। এখানে পেশাদারিই সব। এক বোন আরেক বোনকে কত টুর্নামেন্টেই তো বিদায় করে দিয়েছেন। বাসায় গিয়ে হয়তো বোনের জন্য মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু টেনিস কোর্টে সেটি আর তাঁরা মনে রাখেননি।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও এমন দ্বৈরথ দেখেছে। ঘর থেকে বেরিয়ে দুই ভাই হয়ে গেছেন একে অন্যের শত্রু। উইলিয়ামস বোনদের আজকের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল মনে করিয়ে দিচ্ছে নান্নু আর মঞ্জুকে। বাংলাদেশের ফুটবল নস্টালজিয়ার দুই চেনা মুখ। শামসুল আলম মঞ্জুর চেয়ে পাঁচ বছরের বড় প্রয়াত মনোয়ার হোসেন নান্নু। তাঁদের নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে আছে কিংবদন্তি সব গল্প। স্বাধীনতার পর যে ফুটবল উৎসব রাঙিয়ে তুলেছিল এই ভূখণ্ডের মানুষের জীবনমান, নান্নু-মঞ্জু ছিলেন সেই উৎসবের অন্যতম দুটি নাম। দুজনই আবেগের কাছে ভাঙতেন না। প্রাধান্য দিতেন নিজ নিজ দলকে। তাতে যদি ভাইয়ে ভাইয়ে কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায়, হোক!
দুজনের সেই মাঠের বৈরিতার ছায়া তাঁদের ঘরেও পড়েছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা বলাও বন্ধ ছিল মাঝেমধ্যে! আটাত্তরে দুই ভাই বড় দুই দলের অধিনায়ক হিসেবে মাঠে মুখোমুখি হয়েছিলেন। নান্নু আবাহনীর অধিনায়ক, মঞ্জু মোহামেডানের। সেই লিগ ম্যাচ নিয়ে কত–কী কাণ্ড! আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের আগের দিন মোহামেডান কর্তারা বসেন মঞ্জুকে নিয়ে। কারণ, মঞ্জু ম্যাচ শুরুর আগে হ্যান্ডশেক করবেন না ভাইয়ের সঙ্গে, এটা আগেই জানিয়ে দেন। ওই বছরই ঢাকায় এশীয় যুব ফুটবলের সেই বিশাল আয়োজনে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অধিনায়ক হাত মেলাননি। কিক-অফের আগে দুই অধিনায়কের হাত মেলানো ফুটবল মাঠে রেওয়াজ। কিন্তু ফুটবল মাঠে দুই কোরিয়ার বৈরিতার ব্যাপারটা কেউই ভালো চোখে দেখেনি। এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক। তাই মোহামেডান কর্তারা চান, মঞ্জু যেন হাত মেলান ভাইয়ের সঙ্গে।
কিন্তু মঞ্জু তা করতে চাইছিলেন না। কেন চাইছিলেন না? এই লেখককে মঞ্জু বলছিলেন, ‘কিসের হ্যান্ডশেক। মাঠে যাব, টস করব। খেলে চলে আসব। হ্যান্ডশেক-ট্যান্ডশেকের দরকার কী? তখন এটাই ভেবেছি।’ কিন্তু মোহামেডান কর্তারা ছিলেন নাছোড়। নানা যুক্তি দিলেন তাঁরা। অন্তত হাত মেলাতে অনুরোধ করলেন। এই ছবিটাই তো নিতে চাইবেন ফটো সাংবাদিকেরা। পত্রিকার জন্য যে ওটাই মহার্ঘ এক ছবি!
শেষ পর্যন্ত মত পাল্টান মঞ্জু, ‘এত কথাবার্তার পর সেদিন আর হ্যান্ডশেক না করে আর পারিনি মাঠে। ও হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, আমিও দিলাম। ব্যস, এটুকুই।’ রোমাঞ্চকর সেই বিকেলে দর্শকদের জিবে জল আনা ম্যাচটা ড্র। তাঁদের মা রমেছা খাতুন সবচেয়ে খুশি হতেন ড্র হলে। দুই ছেলের কারওই মন খারাপ হোক, তা চাইতেন না মা। উইলিয়ামস বোনদের মা হয়তো আফসোস করেন টেনিসেও যদি ড্র থাকত!