বাংলাদেশের টেনিস শুধু পিছিয়ে যাচ্ছে
বাংলাদেশের টেনিস শুধু পিছিয়ে যাচ্ছে

টেনিস ফেডারেশন

নির্বাচন ছাড়াই ১৩ বছর

১৯৯৮ থেকে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনের প্রথা শুরু। গত প্রায় দুই যুগে অনেক ফেডারেশনই নির্বাচনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও ব্যতিক্রম টেনিস।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার অমলকান্তি হতে চেয়েছিল রোদ্দুর। কিন্তু বাংলাদেশের অমল রায় হতে চেয়েছিলেন টেনিস তারকা। সেই স্বপ্ন কবেই ধূসর হয়ে গেছে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন অমলের! তিনি এখন কাজ করেন মোটর পার্টসের দোকানে। জাতীয় টেনিস দলের আরেক খেলোয়াড় আক্তার হোসেন দেশের টেনিসে ভবিষ্যৎ না দেখে পাড়ি জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।

টেনিস বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হলেও বাংলাদেশে অবহেলিত। ফেডারেশন কর্মকর্তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার প্রভাব পড়ছে কোর্টে। কর্মকর্তাদের অনাগ্রহ, মামলা— এ রকম নানা কারণে ১৩ বছর ধরে ফেডারেশন চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে টেনিস ফেডারেশন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক পেয়েছে মাত্র একবার। ২০০৪ সালে হওয়া একমাত্র নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হন ছানাউল হক। তিনি দায়িত্ব ছাড়েন ২০০৯ সালে। এরপর গত এক যুগে পাঁচবার কমিটি বদল হলেও সেসব কমিটি ‘আহ্বায়ক’–এর ব্র্যাকেট থেকে বের হতে পারেনি। এতে বিরক্ত খোদ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানও।

স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলত। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচনের ধারা চালু করে। ১৯৯৮ থেকে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনের প্রথা শুরু। গত প্রায় দুই যুগে অনেক ফেডারেশনই নির্বাচনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও ব্যতিক্রম টেনিস।

২০১৬ সালে টেনিস ফেডারেশনে নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। কিন্তু কাউন্সিলর আবু সালেহ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বির করা এক মামলায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। গত মাসে অবশ্য মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি।

টেনিস ফেডারেশনের নির্বাচনবিমুখ আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীও। গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘গত বছর শাহ আলম সরদারকে (এনএসসির পরিচালক) প্রধান করে টেনিসের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। কিন্তু যখনই নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, ফেডারেশন কোনো না কোনো সমস্যা তৈরি করে।’ মন্ত্রী জানান, কাউন্সিলরদের তালিকা চেয়ে অন্তত পাঁচবার চিঠি পাঠানো হয়েছে ফেডারেশনে। তবু এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা পাননি তাঁরা। জাহিদ আহসান বলেন, ‘আমার মনে হয় ফেডারেশনে যাঁরা আছেন, তাঁদের নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ কম। তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করছেন না।’ ফেডারেশনের সহযোগিতা না করলে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি, ‘তাঁরা এমন করতে থাকলে কমিটি ভেঙে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না।’

টেনিসের সর্বশেষ পাঁচ সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একমাত্র ইশতিয়াক আহমেদই ছিলেন সংগঠক। বাকিদের মধে৵ বেশির ভাগই
ছিলেন সরকারি আমলা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাসুদ করিমকে। তিনি ছিলেন এনএসসির সচিব। বর্তমানে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে আছেন।

ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের লোকদের ফেডারেশনের দায়িত্ব দেওয়ায় বর্তমান কমিটির অনেকে ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্তমান কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, এটা তাঁদের বাড়তি দায়িত্ব। খেলার উন্নতি নিয়ে ভাবেন না তাঁরা। সেটির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কোর্টে।

রমনার টেনিস কোর্ট এখন বেশির ভাগ সময় ফাঁকাই পড়ে থাকে। গত ছয় বছরে মাত্র দুবার হয়েছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেই সাফল্য। ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ জেতার পর টেনিসে বাংলাদেশের আর কোনো অর্জন নেই। এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের ডেভিস কাপে উল্টো হয়েছে অবনমন।