ক্যারিয়ারে ৬টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন, এর অর্ধেকই উইম্বলডন। সে অবশ্য আশি-নব্বই দশকের কথা। আরেকটি উইম্বলডন যখন চলছে, একসময়ের টেনিস মাতানো কিংবদন্তি বরিস বেকারের জীবনে বয়সের সংখ্যা বদলেছে অনেক, তার চেয়ে বেশি বদলেছে জীবনের ধরন।
উইম্বলডনে নোভাক জোকোভিচ, রাফায়েল নাদালদের খেলা দেখার কথা ছিল তাঁর। চাই কি তাঁর সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী জন ম্যাকেনরোর মতো কোনো টিভি চ্যানেলে বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করতে পারতেন। কিন্তু উইম্বলডনের এই ব্যস্ত সময়ে বেকারের দিন কাটছে উইম্বলডনের ভেন্যু থেকে মাইলখানেক দূরের জেলে। ব্রিটেনের দেউলিয়া আইনে চারটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ৫৪ বছর বয়সী বেকারকে গত মাসে আড়াই বছরের জেলের শাস্তি দিয়েছেন আদালত।
জেলে বেকারের দিনগুলো কেমন কাটছে? গতকাল জার্মান টেনিস কিংবদন্তিকে জেলে দেখতে যান তাঁর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে। তাঁদের সৌজন্যে সেটির কিছুটা জানা গেছে, বাকিটা জানাচ্ছে ইংলিশ সংবাদমাধ্যম।
বেকারের সঙ্গ ত্যাগ করা স্ত্রী লিলিয়ান দে কারভালিও মন্তেইরো অবশ্য তেমন কিছু বলেননি। ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মেইল–এ তাঁর কথাগুলোয় কেমন যেন অভিমানের সুর, ‘বরিস ভালো আছে, আমি ভালো আছি। আমরা সবাই ভালো আছি। আমি অনেক ব্যস্ত, এখানে খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমরা ঠিকঠাকই আছি।’
এরপর প্রশ্ন যখন হলো উইম্বলডন নিয়ে, লিলিয়ানের উত্তর, ‘আমি উইম্বলডন দেখছি না। সেটা নিয়ে বা অন্য কিছু নিয়েও কথা বলতে চাইছি না। আমি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছি। আমরা সবাই ভালো আছি, কাউকে কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হবে না।’ তবে আরেক ইংলিশ দৈনিক দ্য টাইমস লিখেছে, জেলে নিজের কক্ষে টিভিতে উইম্বলডনে চোখ রাখছেন বেকার।
বেকারকে জেলে দেখতে যেতে চান তাঁর বন্ধু ও উইম্বলডনে তাঁর সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী জন ম্যাকেনরো-ও। বেকারের আর্থিক দুরবস্থায় আগেও বেশ কয়েকবার হতাশার কথা জানিয়েছেন তিনবারের উইম্বলডনজয়ী ম্যাকেনরো। বর্তমানে বিবিসিতে পণ্ডিত হিসেবে কাজ করা ম্যাকেনরো গত সপ্তাহেই এ নিয়ে বলেছিলেন, ‘বরিস আমার ভালো বন্ধু। যা হয়েছে, সেটা খুবই হতাশাজনক। সম্ভব হলে এবং ও দেখা দিতে রাজি হলে আমি ওকে দেখতে যেতে চাই।’
বেকার এত আর্থিক সমস্যায় থাকার পরও কখনো সেটা কারও কাছে প্রকাশ করেননি বলেই জানালেন ম্যাকেনরো, ‘এত লম্বা সময় ধরে একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে ও। কিন্তু সব সময় বলত সবকিছু ঠিক আছে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। বরিস এমনই। কোর্টেও এতটাই আত্মবিশ্বাসী খেলোয়াড় ছিল ও। তবে মাঝেমধ্যে এমন হতেই পারে যে আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো অত ভালো হয় না বা কোর্টের বাইরে আপনি নিজের অর্থ ঠিকভাবে গুছিয়ে রাখতে পারেন না।’
জেলে বসেই অবশ্য আরেক ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে বেকারকে। তাঁর আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে হাস্যরসাত্মক কথাবার্তা বলেছেন এক কৌতুক অভিনেতা অলিভার পোচার। জেলে বসেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন বেকার।
২০২০ সালে বেকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে ‘মেইক বরিস রিচ অ্যাগেইন’ নামে একটা তহবিল সংগ্রহের ক্যাম্পেইনও করেছিলেন।
সেখান থেকে পাওয়া প্রায় সাড়ে পাঁচ শ পাউন্ড এক টিভি অনুষ্ঠানে বেকারের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বেকার তা নিতে না চাইলে তখন চাতুর্যের আশ্রয় নেন ওই কৌতুকাভিনেতা অলিভার পোচার। একটা ভুয়া ট্রফি বানিয়ে আনেন বেকারের জন্য, সেটির ভেতরে টাকাগুলো ঢুকিয়ে দেন। সেই অনুষ্ঠানটা যাতে এখন আবার সম্প্রচারিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে চান বেকার। ওই কৌতুকাভিনেতার বিরুদ্ধে চাতুর্যের মামলা করেছেন তিনি।
জেলে তাঁর সময় নিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যমে যা প্রচারিত হচ্ছে, তা নিয়েও নাকি বিরক্ত বেকার। জার্মান কিংবদন্তির চোখে, সেসব বর্ণনা ‘কল্পনাপ্রসূত।’ জার্মান সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছে, লন্ডনের দক্ষিণে আগে যে ওয়ার্ডসওয়ার্থ হোটেলের সেলে ছিলেন বেকার, সেখান থেকে তিনি নাকি ক্লস্ট্রোফোবিয়ায় (বদ্ধ ঘরে আটকে থাকার কারণে প্রসূত মানসিক উদ্বেগ) ভুগছেন। খাবার নিয়েও নাকি আগে অভিযোগ করেছেন বেকার।