নোভাক জোকোভিচ আর করোনা নিয়ে বিতর্ক যেন শেষই হচ্ছে না। বিতর্ক ছড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে গেলেও শেষ পর্যন্ত পারেননি, অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর দুই দফায় তাঁর ভিসা বাতিল করে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলার জন্য যেসব কাগজপত্র দেখিয়েছেন জোকোভিচ, সেসবও পড়েছে প্রশ্নের মুখে।
করোনার টিকা নেননি সার্বিয়ান টেনিস তারকা, সে কারণে চিকিৎসাবিষয়ক ছাড়পত্র পেতে হতো তাঁকে। সেটির জন্য জোকোভিচ কারণ দেখিয়েছেন, ১৬ ডিসেম্বর তিনি করোনা পজিটিভ হয়েছেন। কিন্তু যে পরীক্ষার কাগজ দেখিয়ে তিনি পজিটিভ হওয়ার প্রমাণ দিয়েছেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। বিবিসির হিসাবে, জোকোভিচের করোনা পরীক্ষার সিরিয়াল নম্বর ১৬ ডিসেম্বর ও এর আগে-পরে সার্বিয়ায় হয়ে যাওয়া অন্য সব করোনা পরীক্ষার সিরিয়াল নম্বরের সঙ্গে মিলছে না!
তবে কি সেখানেও ছলছাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন জোকোভিচ? প্রশ্নটা উঠছেই!
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে ‘চিকিৎসাবিষয়ক ছাড়পত্র’ নিয়ে ৪ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকেন জোকোভিচ। কিন্তু তাঁর টিকা না নেওয়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে প্রথমে, এর মধ্যে প্রমাণ মেলে, ১৬ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ হয়েছেন দাবি করা জোকোভিচ ১৭ ডিসেম্বর জনসমাগমে গেছেন, তার পরের দিন মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এক সাংবাদিককে। অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার আগের ১৪ দিনে স্পেন ও সার্বিয়ায় ভ্রমণ করলেও সেটি অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার পথে ফর্মে সেটা লেখেননি জোকোভিচ।
শেষ পর্যন্ত জোকোভিচকে অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে দিলে সেটি অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষকে টিকাবিরোধী করে তুলতে পারে, সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে পারে...এই যুক্তি দেখিয়ে ১১ দিনের নাটকের শেষে জোকোভিচের ভিসা বাতিল করে দেয় অস্ট্রেলিয়ার সরকার।
কিন্তু এখন বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, জোকোভিচ যে ১৬ ডিসেম্বর করোনা পরীক্ষা করিয়ে পজিটিভ হয়েছেন, সেই পরীক্ষা নিয়েই সন্দেহ আছে। ১৬ ডিসেম্বর জোকোভিচের করোনা পরীক্ষার সিরিয়াল নম্বর ৭৩৭১৯৯৯, অথচ সে সময়ে সার্বিয়ায় দেশজুড়ে করোনা পরীক্ষার যে সিরিয়াল নম্বর চলছিল, সেগুলোর অঙ্ক এর চেয়ে অনেক কম।
এমনকি ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় করোনা পরীক্ষা করিয়ে জোকোভিচ যে করোনা নেগেটিভ হয়েছেন, সেই পরীক্ষার সিরিয়াল নম্বরও (৭৩২০৯১৯) তাঁর ১৬ ডিসেম্বরের পরীক্ষার সিরিয়াল নম্বরের পেছনে!
জার্মানির একটি গবেষণা গ্রুপ জেরফরশুং এই অমিলের দিকটি প্রথম বের করেছিল, সেটি নিয়ে লেখা ব্লগে প্রতিষ্ঠানটি শিরোনাম দিয়েছিল, ‘নোভাক জোকোভিচের টাইম ট্রাভেল করা পিসিআর টেস্ট।’
বিবিসি এ নিয়ে গবেষণা চালাতে তাদের সার্বিয়ান প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সার্বিয়ায় ১৬ ডিসেম্বর ও এর আগে-পরে হয়ে যাওয়া ২১টি টেস্টের প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সার্বিয়ান গবেষক মিলোভান সুভাকভের কাছ থেকে আরও ৩৫টি করোনা টেস্টের প্রতিবেদন পেয়েছে বিবিসি। সেগুলোর সিরিয়াল নম্বর মিলিয়ে বিবিসি দেখিয়েছে, ক্রম অনুসরণ করেই সার্বিয়াতে করোনার টেস্টের সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, যত আগে পরীক্ষা হয়েছে, সেটির সিরিয়াল নম্বর তত আগের। সে হিসেবে জোকোভিচের প্রথম পরীক্ষার (১৬ ডিসেম্বরের) সিরিয়াল নম্বর তাঁর দ্বিতীয় পরীক্ষার (২২ ডিসেম্বর) সিরিয়াল নম্বরের আগে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব হওয়ার কথা নয়।
বিবিসির হাতে থাকা টেস্টের প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও চোখে পড়েছে। জোকোভিচের ১৬ ডিসেম্বরের পরীক্ষার কোড বা সিরিয়াল নম্বর (৭৩৭১৯৯৯) বিবিসির হাতে থাকা ২৫ ডিসেম্বরের করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে লেখা কোড (৭৩৬৬৯৬৯) ও ২৮ ডিসেম্বরের পরীক্ষার প্রতিবেদনের (৭৪১৫৩১২) মাঝে পড়ে।
সে ক্ষেত্রে জোকোভিচ আসলে ১৬ ডিসেম্বরের বদলে ২৬ ডিসেম্বরের দিকে করোনা পজিটিভ হয়েছেন কি না, সে সন্দেহ উঠে যাচ্ছে। ২৫ থেকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষায় পজিটিভ দেখালে সেটি জানুয়ারির শুরুতে জোকোভিচের অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার পথে বাধার সৃষ্টি করত কি না, সেই সন্দেহও উঠছে।