‘ভারত আমাদের হারায়নি, আমরা হেরে গেছি’

১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য যা অফুরন্ত এক আক্ষেপের নাম, ভারতের জন্য সেটাই আবার অবিশ্বাস্য এক প্রাপ্তি। হ্যাটট্রিক শিরোপার অভিযানে নেমে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে ৪৩ রানে হেরে গিয়েছিল ভারতের কাছে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল কপিল দেবের দল। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে ওটাই সম্ভবত একমাত্র ফাইনাল, যেখানে একটা দলের কাছে আরেকটা দলের হেরে যাওয়াটা ‘অঘটন’ বলা হয়।

খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই অঘটনের শিকার হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কোনো খেলোয়াড়েরই ১৯৮৩ বিশ্বকাপের স্মৃতিচারণা করতে ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, সেই বিশ্বকাপে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কোনো খেলোয়াড় এখনো ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেই অবধারিতভাবে সেই ফাইনালের প্রসঙ্গ চলে আসে। যথারীতি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা বিরক্ত হন এবং সেই বিরক্তি তাঁদের কথায়ও বোঝা যায়।

ভারতীয় সাময়িকী ‘স্পোর্টসস্টার’-এর সঙ্গে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে কিংবদন্তি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসকেও যেমন সেই ফাইনাল নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ বিশ্বকাপ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তির কথা শুনেও বোঝা যায়, ভারতের কাছে অবিশ্বাস্যভাবে সেই ফাইনাল হেরে যাওয়ার ক্ষোভ এখনো যায়নি তাঁর। সোজা বলে দিয়েছেন, ‘ভারত আমাদের হারায়নি, আমরা ম্যাচটা হেরেছি।’ এমনকি ফাইনালে কোনো ভারতীয় খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সেও মুগ্ধ নন রবার্টস। সবাইকেই নাকি তাঁর খুব সাদামাটা মনে হয়েছে।

১৯৮৩ বিশ্বকাপ হাতে কপিল দেব

১৯৮৩ সালের ২৫ জুন লর্ডসে সেই ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসলে খারাপ খেলেছে খুব অল্প সময়। আগে ব্যাট করা ভারতকে ১৮৩ রানে অলআউট করার পর টানা তৃতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ জয় সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই রানই তাড়া করতে নেমে অলআউট হয় ১৪০ রানে।

স্রেফ ভাগ্য সঙ্গে ছিল না বলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই ম্যাচটা হেরেছে বলে মনে করেন রবার্টস, ‘আমরা ফর্মে ছিলাম, কিন্তু একটা খারাপ দিন আসতই। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ আসলে ভারত জিতেছে স্রেফ ভাগ্যগুণে। আমাদের যে অসাধারণ দল ছিল, আমরা মাত্র দুটি ম্যাচ হেরেছি ওই বিশ্বকাপে, দুটোই ভারতের কাছে। বিশ্বকাপের পাঁচ-ছয় মাস পরই আমরা ভারতকে ৬-০ ব্যবধানে হারিয়েছি। সুতরাং শুধু ওই ম্যাচটাই আমাদের খারাপ গেছে। ১৮০ রানের আশপাশে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরও ভাগ্য ভারতের সঙ্গে ছিল।’

ভারত আসলেই ভালো খেলেছে, নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল—এই প্রশ্নেও রবার্টস বলেছেন, ‘ভারত ভালো খেলে আমাদের হারায়নি, আমরা হেরে গেছি। এখানে অতি আত্মবিশ্বাস বা আত্মতুষ্টির ব্যাপার ছিল না।’ তাড়া করতে নামার পর ২ উইকেটে ৫৭ রান ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ওই অবস্থায় ২৮ বলে ৩৩ রান করা ভিভ রিচার্ডসের আউট হওয়াই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বলে মনে করেন ৭২ বছর বয়সী রবার্টস, ‘ওই আউটের পর আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।’

সেই ফাইনালে ভারতীয় দলের কার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছেন, এমন প্রশ্নে রবার্টসের উত্তর, ‘ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউই আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনি। কেউ ফিফটিও তো করতে পারেনি। বোলারদের মধ্যে কেউ ৫ উইকেট বা ৪ উইকেট পায়নি। আমি আসলে কাউকে নিয়েই মুগ্ধ হইনি। আপনি তখনই কোনো ব্যাটসম্যানকে নিয়ে মুগ্ধ হবেন, যখন কেউ অসাধারণ কোনো ইনিংস খেলবে। ভারতের কেউই তো সেটা করতে পারেনি।’