‘এ দেশে ৮০ ভাগ প্রতিভা নিজেরাই হারিয়ে যায়’ 

মারুফুল হক: আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুশি। তবে ছেলেদের খুশি ও তৃপ্তি দেখে এবং দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশবাসীর উৎসাহ ও আনন্দের জন্য আমি আরও বেশি উচ্ছ্বসিত।

মারুফুল হক: বাংলাদেশ দলটাকে প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল, খেলোয়াড়দের কিছু অভিজ্ঞতা আছে এবং এদের নিয়ে কাজ করলে ভালো কিছু করা সম্ভব। যদিও প্রস্তুতির জন্য সময় পেয়েছি মাত্র দুই সপ্তাহ। দুই দিন গেছে বিশ্রামে। এত কম সময়ে দল তৈরি করা, ফুটবলারদের ম্যাচ খেলার ফিটনেস আনা বড় চ্যালেঞ্জই। সে জন্য কিছু নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করেছি।

মারুফুল: মনে হয়েছে, সাফের দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুব একটা নেই। দরকার হলো মাঠে সেরাটা দেওয়া। সেটা পারব বলেই বিশ্বাস ছিল। তাই আশা ছিল, চ্যাম্পিয়নও হতে পারি আমরা। শুরুতে যদিও লক্ষ্য ছিল ফাইনালে খেলা। সেটা পূরণ করে ফাইনালে নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব ছেলেদের।

মারুফুল: আমি মনে করি, এই ছেলেরা উন্নতির মাঝপথে যেন হারিয়ে না যায়, সেটি নিশ্চিত করার বড় দায়িত্ব কর্মকর্তাদের। তাঁদের দায়িত্ব এদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করা। ভালো পরিকল্পনা দরকার, যেটির বাস্তবায়নও হতে হবে। তবে আমি মনে করি, এই অনূর্ধ্ব-২০ সাফজয়ী দলটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আর সেটি নিশ্চিত করতে শুধু কর্মকর্তাদের কথা বলি কেন, তরুণ ফুটবলারদের ধরে রাখার দায়িত্ব সবারই। ক্লাবের এখানে বড় ভূমিকা আছে। কারণ, ক্লাবেই ফুটবলাররা বড় হয়।

মারুফুল: কোচদের দায়িত্ব হলো প্রতিভার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা। যেমন কে কোন পজিশনে খেলতে স্বচ্ছন্দ, তা বুঝতে হবে। কোন পজিশনে কার কী টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল, শারীরিক ও মানসিক উন্নতির প্রয়োজন, সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলেই একটা খেলোয়াড় সঠিকভাবে গড়ে ওঠে।

মারুফুল: ভীষণ ব্যথিত করে। তবে প্রতিভাদের হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। খেলোয়াড়দেরও সচেতনতা দরকার। খেলোয়াড়দের দায়িত্ব নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করা, নিজের ভালো–মন্দ বোঝা, কঠোর পরিশ্রম ও নিয়মের মধ্যে থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই ফুটবলাররা সবাই পেশাদার। সবাই শীর্ষ স্তরে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে পুরো মৌসুম খেলে। এখন তাদের আরও পরিণত করতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের দরকার।

মারুফুল: অনেক কিছু দরকার। ব্যক্তিগত প্রতিভা, ভালো করার তাড়না, যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারা, মাঠের বাইরে ও ভেতরে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকা। আসলে আমাদের দেশে যুব প্রতিভা অকালে হারিয়ে যায় কেন, জানেন? খোঁজ নিলে দেখবেন, বাংলাদেশে ৮০ ভাগ প্রতিভাবান খেলোয়াড় নিজেরাই নিজেদের হারিয়ে ফেলে। বাকি ২০ ভাগ ক্লাব রাজনীতি, চোট, পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে হারিয়ে যায়।

মারুফুল: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খুব সাধারণ। আল্লাহ যত দিন সুযোগ দেবেন, তত দিন দেশে কোচিং করাব; তবে স্বপ্ন আছে বিদেশে একটি এশিয়া মানের কোনো ক্লাবে কোচিং করানোর। কারণ, আমার বিশ্বাস উচ্চপর্যায়ের প্রতিভাদের নিয়ে আমি আরও ভালো করব।