নাজমুল হোসেন, সিলেট স্ট্রাইকার্সের অনুশীলনে, মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে
নাজমুল হোসেন, সিলেট স্ট্রাইকার্সের অনুশীলনে, মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে

অধিনায়কত্ব হোক লম্বা সময়ের জন্য: নাজমুল

ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্ম, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হয়েই দেখিয়েছেন নিজের নেতৃত্বগুণ। সব মিলিয়ে নাজমুল হোসেনকেই এখন ভাবা হচ্ছে বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক। কিন্তু নেতৃত্বের অর্থ আসলে তাঁর কাছে কী, ক্রিকেটটাকেই–বা কীভাবে দেখেন? মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল প্রথম আলোকে দেওয়া দীর্ঘ একান্ত সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের এই টপ অর্ডার অকপটেই বলেছেন সব কথা—

প্রশ্ন

সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট, ওয়ানডে দুই জায়গাতেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবেও নিউজিল্যান্ডে মোটামুটি সফল। স্বপ্নের মতো একটা সময় যাচ্ছে কি না?

নাজমুল হোসেন: ব্যাটিংয়ের কথা বললে আমার মনে হয় ভালো যাচ্ছে। ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে যত ম্যাচ খেললাম, মোটামুটি সবই মাশা আল্লাহ ভালো গেছে। যেসব জায়গায় উন্নতি দরকার ছিল করতে পেরেছি। আমার মনে হয়, আমি যেভাবে ব্যাটিং করতে চেয়েছি, যেসব জায়গায় কাজ করেছি, সেগুলোতে সফল হয়েছি। সব মিলিয়ে আমি সন্তুষ্ট। অধিনায়কত্ব প্রসঙ্গে যেটা বললেন, সফল হয়েছি, আমি নিজে কিন্তু এখনই এটা বলতে চাই না যে আমি সফল। যে কয়টা ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টা করেছি দলের জন্য ভালো কিছু করার। কিছু ম্যাচে খুব ভালো ফল এসেছে। সেগুলো হয়তো আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। তবে এটা এখনই আমি বলতে চাই না যে আমি সফল। তবে আবারও বলি, ব্যাটসম্যান হিসেবে সময়টা খুবই উপভোগ করছি। এই ভালো সময়টা আমাকে যতটা সম্ভব লম্বা করতে হবে। নিজের স্কিলটাকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে হবে। ওটা নিয়েই এখন কাজ শুরু করব।

প্রশ্ন

এখন তো একজন ক্রিকেটারকে সব সংস্করণের জন্যই সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। তারপরও তিন সংস্করণের মধ্যে আপনার সবচেয়ে পছন্দের কোনটি?

নাজমুল: পছন্দের সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেট। প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই কিন্তু পছন্দের খেলা টেস্ট। তবে বর্তমান সময়ের ক্রিকেট যেভাবে যাচ্ছে, বিশ্বমানের খেলোয়াড় হতে হলে তিন সংস্করণেই ভালো পারফর্ম করতে হয়। আমিও সেভাবেই প্রস্তুতি নিই। সে হিসেবে তিনটা সংস্করণই উপভোগ করি। কিন্তু ছোটবেলায় যখন খেলা শুরু করি, তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল আমি বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলব।

ছোটবেলা থেকেই নাজমুলের ইচ্ছা ছিল, তিনি বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলবেন
প্রশ্ন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুটা ভালো ছিল না আপনার। আর শুরু ভালো না হলে যে চাপ চলে আসে, সেটা কাটিয়ে পরবর্তী সময়ে ফিরে আসা সবার জন্যই কঠিন। আপনার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। শুরুর সেই চাপ কীভাবে সামলে উঠেছিলেন?

নাজমুল: আমার মনে হয় শুরুতে আমার নিজের প্রতি বিশ্বাসটা একটু কম ছিল। যে কারণে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেললেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হচ্ছিলাম না। এক–দুই বছর খারাপ যাওয়ার পর মনে হলো স্কিলে উন্নতি আনা দরকার। কারণ, আমি সফল হচ্ছি না মানে কিছু তো একটা ভুল হচ্ছে কোথাও। একটু ঘাটতি তো আছে। ওটা নিয়ে নিজে চিন্তা করেছি, কোচের সঙ্গে আলাপ করেছি এবং সে অনুযায়ী স্কিলটা আমি বদলানোর চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে নিজের ওপর বিশ্বাস আনার চেষ্টা করেছি। বাইরের নেতিবাচক কথাবার্তা কানে এলেও আমি মনোযোগ দিয়েছি কোন জায়গাগুলোতে উন্নতি করতে হবে, সেদিকে। একটু একটু করে যার ফল আমি পাচ্ছি। তবে আমি মনে করি, এর চেয়েও ভালো ক্রিকেট আমি খেলতে পারি।

প্রশ্ন

শুরুতে কেন নিজের ওপর বিশ্বাস কম ছিল? তখনই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়ে যাওয়াটা কি আপনার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল?

নাজমুল: এ রকম কিছু নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে তো আমি নিয়মিত রান করছিলাম। আবাহনীর মতো বড় দলে খেলেছি, প্রতিবছরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল করে তারা। সেই দলের হয়ে আমি নিয়মিত রান করেছি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, ‘এ’ দল, এইচপি—সব জায়গায় মোটামুটি রান করেছি।

'ঘরোয়া ক্রিকেটে তো আমি নিয়মিত রান করছিলাম', বলছেন নাজমুল।
প্রশ্ন

টেস্টে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। কিন্তু ওয়ানডেতে আটটি ফিফটি হলেও সেঞ্চুরি মাত্র দুটি। যেহেতু টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, আপনার কি মনে হয় ওয়ানডেতে আরও কয়েকটা ফিফটি তিন অঙ্কে যেতে পারত?

নাজমুল: এ রকম তিন–চারটা ইনিংস তো আছে, যেগুলো তিন অঙ্কে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কিছু ইনিংস আছে, যেগুলোতে দলের জন্য ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে গিয়ে একটা সময় ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে হয়েছে, আউট হয়ে গেছি। তবে আটটি ফিফটির মধ্যে তিন–চারটি তো ১০০ হতেই পারত। সামনে চেষ্টা করব এটা যত বেশি করা যায়।

প্রশ্ন

ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গা কোথায়?

নাজমুল: দুর্বলতাটা বলব না (হাসি)…দুর্বলতা বলতে চাই না। শক্তির জায়গা বলতে যেটা মনে হয়, আমি এখন খেলাটা ভালো বুঝতে পারছি। যখন বাউন্ডারি মারার দরকার, তখন আমি বাউন্ডারিটা মারতে পারি। হাতে এখন আগের থেকে শট অনেক বেশি। মাঠে গিয়ে তাই শান্ত থাকতে পারি। যখন বাউন্ডারি মারার প্রয়োজন নেই, বুঝি যে এখন বাউন্ডারি না মারলেও চলবে। যখন প্রয়োজন হবে, বড় শট খেলার তখন খেলায় ওই বদলটা আনতে পারি।

প্রশ্ন

নিজের অনুশীলন নিয়ে চিন্তাটা একটু বলবেন। মুশফিককে দেখা যায় ছুটির দিনেও অনুশীলন করেন, আবার সাকিবকে দেখা যায় ম্যাচের আগের দিন তেমন একটা অনুশীলন করেন না। অনেকের অন্য কোনো প্রক্রিয়া থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনি কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পছন্দ করেন?

নাজমুল: আমার কাছে টেকনিক্যাল বিষয়, স্কিল নিয়ে কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি ব্যাটিং অনুশীলনটা নিয়মিত করি। তবে যখন লম্বা সময় ধরে খেলি, মাঝে ৮–১০ দিন বিরতি পেলে আমার জন্য আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে সহজ হয়। আমার কাছে অনুশীলন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কঠোর পরিশ্রম করতে হয় আমার। তবে বলব না যে মুশফিক ভাইয়ের মতো ছুটির দিনেও আমার মাঠে আসা লাগে। ওই ব্রেকটা আমার দরকার। রানিং, জিম, ব্যাটিং—এসব আমাকে অনেক করতে হয়। অনেকে বলে আমি অনেক ফিট। তবে এর জন্য আমাকে অনেক সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করতে হয়।

স্কিল নিয়ে কাজ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ তাঁর কাছে
প্রশ্ন

বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করলেন। এই ম্যাচগুলো অধিনায়ক হিসেবে আপনাকে কতটা আত্মবিশ্বাসী করেছে?

নাজমুল: অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। যখন আমি ক্রিকেট বলে অনুশীলন শুরু করি, তখন ওইভাবে চিন্তা করিনি যে অধিনায়ক হব। কিন্তু যখন বোঝা শিখলাম, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলা শুরু করলাম, তখন থেকেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হওয়ার ইচ্ছাটা এসেছে। আমি এইচপিতে অধিনায়ক ছিলাম, ‘এ’ দলে ছিলাম। বয়সভিত্তিকেও করা হয়েছে। জাতীয় দলে যখন সুযোগটা পেলাম, অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ, বড় দুটি দলের বিপক্ষে, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া—হারার পর একটু খারাপ লেগেছিল। এই রকম একটা জায়গায় অধিনায়কত্ব করলাম, জিততে পারলাম না! বাজেভাবে হারলাম। পরবর্তী সময়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতলাম, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জিতলাম, তখন আত্মবিশ্বাস আসে। বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ হারের পর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমি খুব প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম যে আমি এই জায়গায় ভালো করব। ওই বিশ্বাসটা থেকেই আমি সংবাদ সম্মেলনে জয়ের কথা বলি। কথাটা বলার জন্য বলিনি। অনেকে হয়তো বিশ্বাস করেনি, কিন্তু বুঝেই বলেছিলাম। ড্রেসিংরুমে আমি ওই প্রেস কনফারেন্সের আগেই বলে গিয়েছিলাম, এখানে আমরা খেলার জন্য আসিনি। জেতার জন্য এসেছি। বিশ্বকাপের ওই দুটি হারের পর আমার মনে হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা যেন ওই পরিবেশটা তৈরি করতে পারি দলের মধ্যে। নিউজিল্যান্ডে গিয়েই দুই ম্যাচেই প্রতিযোগিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে পেরেছি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেটা আমরা কখনোই চিন্তা করিনি। খুব ভালো একটা অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন

অধিনায়কত্ব একেকজনের ওপর একেক রকম প্রভাব ফেলে। কেউ চাপ অনুভব করে, কেউ অনুপ্রাণিত হয়। আপনার ক্ষেত্রে কি তাহলে দ্বিতীয়টা ধরে নেব?

নাজমুল: আমার ওপর এটা কোনো চাপ নয়। আমি যখন ব্যাটিং করি, তখন আমার কিন্তু মনে থাকে না আমি অধিনায়ক। এখানে একটা মজার বিষয় আছে। আমার পরিবারেও এটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমি বলছিলাম যে দু-একটা ম্যাচে রান না হলে মনে করো না যে অধিনায়কত্বের চাপে রান হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো অনেক কথাই হয়। একটা-দুইটা ইনিংস এদিক–ওদিক হলেই কথা হয়। অতীতে অনেক অধিনায়ককে নিয়ে হয়েছে। আমার কোচরা জানেন আমি যদি ১০ ম্যাচেও রান না করি, এটার কারণ অধিনায়কত্ব হবে না। আমাকে অধিনায়ক অনুপ্রাণিত করে।

প্রশ্ন

সাকিব আগেই বলেছেন, ভারত বিশ্বকাপের পর আর অধিনায়কত্ব করবেন না। বোর্ড কি অধিনায়কত্বের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে আলোচনা করেছে?

নাজমুল: না, এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমাকে ওনারা বলেছেন, যাঁকেই অধিনায়কত্ব দেবেন, লম্বা সময়ের জন্য দেবেন। যখন নিউজিল্যান্ড সিরিজটা করতে বলা হয়েছিল, তখন আমি প্রশ্ন করেছিলাম যে আমি কত দিনের জন্য করছি বা পরিকল্পনাটা কী। তখন আমাকে বলা হলো যে এই সিরিজটা আপাতত করতে। তখন আমি বলেছিলাম, আমাকে দেওয়া হোক বা অন্য কাউকে, তাঁকে যেন লম্বা সময়ের জন্য দেওয়া হয়। যদি আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে আমি যেন দলটাকে এক করার সময়টুকু পাই।

'বলব না যে মুশফিক ভাইয়ের মতো ছুটির দিনেও আমার মাঠে আসা লাগে। ওই ব্রেকটা আমার দরকার'
প্রশ্ন

তিন সংস্করণে আলাদা অধিনায়ক থাকা ভালো নাকি একজন হওয়া ভালো?

নাজমুল: আমার তো মনে হয় একজন হলেই ভালো। আমরা এখনো ওই পর্যায়ে যাইনি যে আমাদের দুই বা তিনজন অধিনায়কের প্রয়োজন। একজন অধিনায়ক থাকলে সে ওইভাবে পরিকল্পনা করতে পারবে। খেলোয়াড়দের কাকে কোন সময় কোন সংস্করণে খেলাবে। আমার মনে হয় আমাদের দল অনুযায়ী একজন অধিনায়ক থাকা ভালো।

প্রশ্ন

অধিনায়ক হিসেবে আপনার রোল মডেল কে?

নাজমুল: আমার সাকিব ভাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা খুব ভালো লাগে। তাঁর সঙ্গে বরিশালে বিপিএলে খেলেছি, জাতীয় দলে অনেক ম্যাচ খেলেছি। দলের বাইরে খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করার জন্য একজন অধিনায়কের যেমন হওয়া উচিত, উনি তেমন। খেলোয়াড়েরা তাঁর কথায় অনেক অনুপ্রাণিত হয়। এ ছাড়া দেশের বাইরে এমএস ধোনিকে ভালো মনে হতো।

সাকিব ভাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা খুব ভালো লাগে নাজমুলের
প্রশ্ন

মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ—তাঁদের কার কোন জিনিসটা আপনি নিজের মধ্যে নিতে চাইবেন?

নাজমুল: সাকিব ভাইয়ের প্ল্যানিং, সাহস, নিজের ওপর বিশ্বাস—এগুলো নিতে চাইব। মুশফিক ভাইয়ের ওয়ার্ক এথিকস, সর্বশেষ ১৫-২০ বছর ধরে একই রকম। এখনো আমার মনে হয় তাঁর সঙ্গে একটু জিমে যাই। তামিম ভাইয়েরর ব্যাটিং স্কিল। ওয়ান অব দ্য বেস্ট ব্যাটসম্যান। উনি যেভাবে ব্যাটিং করেন, বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে যখন নন-স্ট্রাইকে থাকি, মনে হয় না উনি স্ট্রাগল করছেন। মাঝেমধ্যে তো মনে হয় ওনার ব্যাটিং না–ই দেখি। রিয়াদ ভাইয়ের (মাহমুদউল্লাহ) হাল না ছাড়ার মানসিকতা। যেকোনো অবস্থায় লড়াই করা। মাশরাফি ভাইয়ের নেতৃত্বগুণ। যেকোনো পরিবেশকে নিজের করে নিতে পারেন।

প্রশ্ন

আর তাঁদের কোন জিনিসগুলো আপনি চাইবেন না আপনার মধ্যে আসুক?

নাজমুল: একটা সময় ছিল যখন মানুষের নেতিবাচক জিনিস নেতিবাচকভাবেই চোখে পড়ত। কিন্তু গত তিন-চার বছর কেউ যদি নেতিবাচক কথাও বলে, সেখান থেকে কীভাবে ইতিবাচকটা নেওয়া যায়, সে চেষ্টা করি। কেউ হয়তো আমাকে পছন্দ করছে না। আমি চিন্তা করি, উনি আমাকে হয়তো এভাবে বলে আমার কাছ থেকে পারফরম্যান্স আদায় করে নিতে চাইছেন। এখন তাই এই জিনিসটা আমার জন্য বলা খুবই কঠিন যে কারও কাছ থেকে অমুক জিনিসটা নিতে চাই না। ভাববেন না আমি কোন টেকনিক্যাল উত্তর দিলাম, আমি আসলেই এভাবে চিন্তা করি।

সিলেটের অনুশীলনে এসেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, এবারও সিলেটের অধিনায়কত্ব করবেন তিনি
প্রশ্ন

আপনাকে নিয়ে বলতে শুনি, আপনার মধ্যে নাকি একটা ‘এক্স–ফ্যাক্টর’ আছে, যেটা আপনাকে এগিয়ে দেয়। সেটা আসলে কী?

নাজমুল: ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো কিছু করার মানসিকতা। আমি একবার ব্যর্থ হতে পারি, দুবার হতে পারি, কিন্তু আমার যতটা কঠোর পরিশ্রম করা দরকার, বিশ্বাসের সঙ্গে আমি তা করব। কাউকে দেখানোর জন্য নয়। কারণ, আমার এই জায়গায় ভালো করার সামর্থ্য আছে, এই কারণেই করব। আমি যখন কাজ করি, আমি ওই বিশ্বাসটা নিয়েই কাজ করি। প্রতিদিন যখন মাঠে আসি, ওই বিশ্বাসটা নিয়েই মাঠে আসি। আমি ফলাফল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। প্রক্রিয়া ঠিক রাখাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন

মাঠে আপনার শরীরী ভাষা, প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মানসিকতা, এগুলো কি সহজাতভাবেই পেয়েছেন? নাকি খেলে এসেছে?

নাজমুল: শুরু থেকেই মনে হতো, যেকোনো কাজেই আমাকে সবার সেরা হতে হবে। আমি যেকোনো খেলাই জিততে চাই। জিততে হলে খেলার রুলস অনুযায়ী যা যা আছে, সব করতে চাই। জেতার জন্য যা যা করা দরকার, সব করব। ওই ফাইটিং স্পিরিটটা মনে হয় আমার মধ্যে আছে। সেটা পড়াশোনায়, পাড়ার ক্রিকেটে…সব জায়গায়। আমার মনে আছে পাড়ায় ফুটবল ম্যাচ খেলতাম। আমাদের খুব ভালো খেলোয়াড় ছিল না। পাশাপাশি গ্রাম। প্রতিদিন যেতাম, হারতাম। কিন্তু কমিটমেন্ট ছিল যে নাহ, একদিন জিতবই। ওদের সঙ্গে দরকার হয় প্রতিদিন খেলব। একদিন জিতলাম। জেতার পর একটা তৃপ্তি পেলাম। আমার মনে আছে টানা তিন ম্যাচ হারের পর জিতেছি। ছোটবেলা থেকে এটাই আমার মানসিকতা—খেলার অবস্থা যা-ই হোক, জিতবই।

প্রশ্ন

শুনেছি স্টিভ রোডস যখন কোচ ছিলেন, অন্য ব্যাটসম্যানদের শেখানোর জন্য আপনাকে শ্যাডো হিসেবে ব্যবহার করতেন। ভিডিওতে আপনার ব্যাটিং, আপনার শট দেখাতেন তাদের…

নাজমুল: এটা আমি জানতাম না। যদি করে থাকেন, তাহলে তো এটা আমার জন্য অবশ্যই অনেক বড় কিছু।

'আমার ১০০ রান দলকে কীভাবে সাহায্য করছে, তা গুরুত্বপূর্ণ'
প্রশ্ন

ক্যারিয়ারের শুরুতে খুলনা টাইটানসের হয়ে একটা বিপিএল খুব খারাপ খেললেন। টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছিল আপনাক বাদ দিতে। কিন্তু কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনে আপনাকে সব ম্যাচ খেলিয়ে গেছেন। তিনি বলতেন, আপনার কাছ থেকে কিছু না কিছু পাবেন। মাহেলার মতো ব্যক্তিত্বের এমন কথা আপনার ভেঙে না পড়ার ক্ষেত্রে কতটা কাজে দিয়েছে?

নাজমুল: এটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে ওই সময়। টিম ম্যানেজমেন্ট বলার আগে আমি নিজেই ছয় ম্যাচ পর বলেছিলাম আমাকে ড্রপ করে দাও। কিন্তু মাহেলা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তুমি এক ম্যাচেও যদি রান না করো, তারপরও তুমি সব ম্যাচ খেলবে। আমি তখন প্রশ্ন করেছিলাম, কেন? আমার মধ্যে কী এমন আছে যে তুমি আমাকে খেলাবে? আমি অস্বস্তিবোধ করছি। আমি পারফর্ম করছি না, কিন্তু আমাকে ম্যাচ খেলাচ্ছ! তখন সে আমাকে বলেছে যে তোমার ফিল্ডিং, তোমার ওয়ার্ক এথিক, দলের জন্য খেলার যে ব্যাপারটা, ওটা তোমার আছে। তখন আমার মনে হলো, আমি পারফর্ম করি না করি, আমি তো দলকে ফিল্ডিং করেও কিছু দিতে পারি। একজন পেসার লম্বা স্পেল করছে, তাকে একটু সাপোর্ট করে আসতে পারি। এখন আমি কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলার সময় এই জিনিসটা বলি। আমার ১০০ রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার ১০০ রান দলকে কীভাবে সাহায্য করছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসটা ওই সময় শিখেছিলাম।

প্রশ্ন

অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গে ফিরে আসি, ড্রেসিংরুমে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সামলানোর অভিজ্ঞতা কেমন?

নাজমুল: খুবই ভালো। আমি যে পাঁচ-ছয়টা ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছি, কখনোই ভাবিনি যে তাঁরা বড় ভাই। আমি মনে করেছি এখানে ১৫ জন খেলোয়াড়। এই ১৫ জন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে  আমি কী চাচ্ছি? অধিনায়ক হিসেবে চেয়েছি সবাই যেন দলের জন্য কিছু করে। আমি সিনিয়রদের সঙ্গে যেমন ছিলাম, জুনিয়রদেরও সেই বার্তাটাই দিয়েছি। পরিষ্কার বলেছি যে আমি এই জিনিসটা চাই, এই জিনিসটা চাই না। সবচেয়ে বড় বিষয়, আমি সাহস করে সবার সঙ্গে আমার মনমতো কথা বলেছি, তাঁরাও আমাকে সেটা সম্মান দিয়েছেন। আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করেছেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে সমর্থন দিয়েছেন।

প্রশ্ন

শুনেছি অধিনায়কত্ব করার আগেও ড্রেসিংরুমে আপনি দল বা খেলা নিয়ে নিজের মতামত স্পষ্টভাবে দিতেন। সিনিয়র ক্রিকেটাররা সেটা কীভাবে নিতেন এবং আপনার সেই চর্চাটা কি ভবিষ্যতেও কাজে লাগবে মনে করেন?

নাজমুল: আমার একটা অভ্যাস হলো, ভেতরে কিছু থাকলে, আমি যদি মনে করি বলা উচিত, আমি বলি সেটা। সিনিয়র খেলোয়াড় বা অধিনায়ক, সিদ্ধান্তটা তাদের; তবে দলের জন্য ভালো মনে করলে আমি আমার কথাটা বলে ফেলি। আমি যতবার এ রকম বলেছি, যাকে বলেছি, সবাই সেটা ভালোভাবে শুনেছেন। কিছু সময় তাঁরা আমার কথা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অনেক সময় নেননি। না–ই নিতে পারেন। আমিও তো সবার কথা শুনলেও অনেক সময় সবার কথা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব না। ভিন্ন চিন্তা থাকতেই পারে। সেটাকেও সম্মান করতে হবে। যে কয়টা ম্যাচে অধিনায়ত্ব করেছি, সেই অভ্যাস আমাকে সাহায্য করেছে। যখন অধিনায়ক হিসেবে কথা বলি, নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। নিউজিল্যান্ডের একটা ঘটনা বলি। রিশাদ খুব ভালো বোলিং করল ২ ওভার। আমি তবু ভাবছিলাম রিশাদকে টানা ৩ ওভার না করাই। অন্য কাউকে এনে রিশাদকে কয়েক ওভার ওভার পর আনি। কিন্তু আমি যখন অন্য কয়েকজনের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বললাম, ওখানে কোনো সিনিয়র খেলোয়াড় ছিল না, জুনিয়ররাই ছিল, তারা বলল রিশাদকে দিয়ে আরেক ওভার করাতে। আমি তাদের কথা অনুযায়ী রিশাদকে দিয়েই করালাম।

প্রশ্ন

এ প্রসঙ্গে তো আলোচনাটা তুলতেই হয়। বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বিপক্ষে টাইমড আউটের আপিলের বুদ্ধিটা নাকি আপনিই সাকিবকে দিয়েছিলেন…

নাজমুল: (হাসি) আবার টাইমড আউট! ওই ম্যাচটা আমাদের জিততে হতো। নয়তো আমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারতাম না। এটা তো ছোটখাটো বিষয় নয়! ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এটা যদি খেলার চেতনার বিরুদ্ধে যায়, তাহলে এই আইনটাই খেলায় থাকবে না। কেন রেখেছে এটা? ঘটনাটা হলো, আমি তখন কাভারে দাঁড়ানো ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম ও (ম্যাথুস) তো আসতে দেরি করছে! আম্পায়ার মারেকে গিয়ে বললাম, এখন তো আমরা আপিল করলে সে আউট! কারণ, ম্যাথুস ততক্ষণে দেরি করে ফেলেছে। হেলমেটের ফিতা ছিঁড়েছে কিন্তু পরে। আমি বুঝতে পারছিলাম ও তার আগেই দেরি করে ফেলেছে। আম্পায়ারও বলেছেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী তোমরা আপিল করলে ও আউট। কিন্তু তোমরা তো আপিল করবে না।’ আমি তখন সাকিব ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম, ‘ভাই, এখন কিন্তু আপিল করলে ম্যাথুস আউট।’ সাকিব ভাই চমকে উঠে বলেন, ‘তাই নাকি!’ তখন উনি আপিল করেন। আমরা দলের প্রত্যেকটা খেলোয়াড় অধিনায়কের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছি। মানকাডিং আউটের ক্ষেত্রেও একসময় বলা হয়েছে ওটা ক্রিকেটের চেতনার বাইরে। এখন তো ওটা নিয়ে কোনো কথাই নেই। সেদিন এমন যদি হতো একজন খেলোয়াড় অসুস্থ, চোট পেয়েছে, পায়ে ব্যথা, সেটা ভিন্ন কিছু ছিল। কিন্তু ম্যাথুস আসতেই দেরি করেছে। ও যখন ক্রিজেও আসেনি, ক্রিজ থেকে ৮–১০ স্টেপ দূরে, তখনই আমি আম্পায়ারকে বলি এবং আম্পায়ারও বলেছেন আপিল করলে সে তখনই আউট।

'আবার টাইমড আউট! ওই ম্যাচটা আমাদের জিততে হতো। নয়তো আমরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারতাম না। এটা তো ছোটখাটো বিষয় নয়!'
প্রশ্ন

ক্রিকেটের আইনকানুন নিয়ে কি অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন আপনি?

নাজমুল: না, আমি যে ক্রিকেটের অনেক আইন জানি, তা নয়। যতটুকু যেভাবে সুযোগ পাই চেষ্টা করি জানার। তবে এই আইন সম্পর্কে তো সবারই ধারণা আছে। আপিল করার সাহস হয়তো কারও হয় না বা করতে লজ্জা পায়। আমরা ওটা করার কয়েক দিন পরই মনে হয় কোনো একটা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এটা হয়েছে। এখন দেখবেন এ নিয়ে আলোচনা কমে যাবে। বাংলাদেশ দল প্রথমে করেছে বলেই এত কথা হয়েছে, বড় কোনো দল করলে হতো না। তখন বলত, আইনে তাহলে আউট দিয়েছে কেন?

প্রশ্ন

ক্রিকেট খেলার বাইরে আর কী করতে পছন্দ করেন?

নাজমুল: এখন পরিবারকে সময় দিয়ে খুব মজা পাচ্ছি। বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটে। এমনিতে বাইরে ঘোরাঘুরি খুব ভালো লাগে। আড্ডা মারতেও খুব পছন্দ করতাম, যেটা এখন কমে গেছে। ক্রিকেটের বাইরে সুযোগ পেলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে খুব ভালো লাগে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনা নিয়ে এখন আর ভাবেন না নাজমুল
প্রশ্ন

টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখেন?

নাজমুল: ক্লাব ফুটবলের ম্যাচ অত বেশি দেখা হয় না। তবে বিশ্বকাপটা খুব ভালোভাবে দেখি। আর্জেন্টিনা প্রিয় দল, মেসি প্রিয় খেলোয়াড়। লিগে মেসি যেই দলে খেলে, স্বাভাবিকভাবেই আমার সমর্থন সেই দিকে। এমনিতে বার্সেলোনাকে ভালো লাগে।

প্রশ্ন

ব্যাটিংয়ে কী ধরনের শট আপনি খেলতে পছন্দ করেন? সঙ্গে ব্যাটিংয়ে নিজের পছন্দ–অপছন্দ নিয়ে যদি আরও কিছু বলেন…

নাজমুল: আমার পছন্দের শট স্ট্রেট ড্রাইভ। তবে পেস বল, স্পিন বলে ও রকম আলাদা কিছু নেই। এটা উইকেটের ওপর নির্ভর করে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে ব্যাটিং করলে লাল বলে চ্যালেঞ্জ থাকেই। তখন চিন্তা করি কখন একটা স্পিনার আসবে। যেদিন শুরুতে একটা–দুইটা শট ভালো খেলি, সেদিন স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসী মনে হয় নিজেকে। কিন্তু সেসব দিনেই বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, আমার আত্মবিশ্বাস একটু বেশিই বেড়ে যায় তখন। আসলে নার্ভাস থাকলেই আমি বেশি ভালো ব্যাটিং করি। ২০২২–এর অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত আমার প্রতিটি সিরিজই ভালো গেছে এবং প্রতিটি ইনিংসেই আমি প্রচণ্ড পরিমাণে নার্ভাস ছিলাম।

প্রশ্ন

এটা কেন হবে? যখন ভালো খেলবেন, তখন তো নার্ভাস থাকার কথা নয়…

নাজমুল: আসলে চ্যালেঞ্জ অনুভব করি অনেক, একটু টেনশনে থাকি। একটা সেঞ্চুরির পর স্বাভাবিকভাবেই পরের ম্যাচে একজন ব্যাটসম্যান অনেক আত্মবিশ্বাসী থাকে। কিন্তু আমি ও রকম নই। উইকেটে গিয়ে ৮–১০টা বল ঠিকভাবে খেলতে পারলে তবে আমি স্বাভাবিক হই। এটা অবশ্য আমাকে সাহায্যই করে। কারণ, আমি তখন আরও মনোযোগী হই। বল আমার ব্যাটের মাঝখানে লাগতে শুরু করে। শট খেলতে ভয় পাই না। টেনশন নেই, নার্ভাসনেস নেই…এ রকম কিছু ম্যাচে দেখা গেছে আমি আগে আগে আউট হয়ে গেছি। গত কয়েকটা ম্যাচে ভালো করায় সবাই বলে আমি নাকি খুব আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করি। কিন্তু আমি তো জানি আমি আসলে অনেক নার্ভাস ছিলাম। এটা বললে সবাই মনে করে আমি মিথ্যা বলছি।

ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করাটাই ঠিক মনে হয় নাজমুলের কাছে
প্রশ্ন

টি–টোয়েন্টির প্রভাবেই হোক বা যে কোনো কারণে, টেস্টের ব্যাটিংটা যে এখন বদলে যাচ্ছে, সেটাকে কীভাবে দেখেন?

নাজমুল: গত কয়েকটি টেস্ট ম্যাচ আমি যেভাবে খেলেছি, আমার কাছে এখন লাল বল আর সাদা বল আলাদা কিছু নয়। রান করছি কি না, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আমি ডিফেন্স করে করতে পারি বা মেরেও করতে পারি। গত কয়েকটা টেস্টে আমি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছি। কিন্তু এখন যে বাজবল নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, আমার কাছে সেগুলো কোনো বিষয় নয়। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করাটাই ঠিক মনে হয়। নিউজিল্যান্ডে যে ইনিংসটাতে সেঞ্চুরি করলাম, সেটায় মাঝের এক–দেড় ঘণ্টায় আমি মাত্র ৭–৮ রান করেছিলাম। কারণ, আমার মনে হয়েছে পরিস্থিতি আমার কাছে ও রকম ব্যাটিংই চেয়েছে তখন।

প্রশ্ন

টেস্ট, ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে নিজের সেরা ইনিংস কোনটাকে বলবেন?

নাজমুল: টেস্টে দুটি ইনিংসের কথা বলব। প্রথম সেঞ্চুরিটা, আগের ছয়–সাত বছরে আমি যা শিখিনি আমার মনে হয় ওই একটা ইনিংসে আমি তা শিখেছি। ৯ ঘণ্টার মতো ব্যাটিং করেছিলাম। বিশেষ একটা ইনিংস এটা আমার জন্য। এরপর এবার নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে করা ১০০। ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করা প্রথম সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরি বলে নয়, যেভাবে ম্যাচটা জিতেছিলাম সে কারণে। আর টি–টোয়েন্টিতে গত বছর মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা অপরাজিত ৪৬ রান, যে ম্যাচে আমরা সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিলাম।

প্রশ্ন

পরিবারে আর কেউ ক্রিকেটার আছেন?

নাজমুল: না, আব্বু বিজনেস করতেন। আম্মু একটা কলেজে চাকরি করতেন, এখন করেন না। আর এক বোন আছে। পরিবারে বেশির ভাগ মানুষই ব্যবসায়ী।

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টেই নিজেকে চিনিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন
প্রশ্ন

দুজন সিনিয়র ক্রিকেটারের কারণে অদৃশ্য হলেও মাঝে দলে দুটো স্রোত ছিল। যদি লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলের নেতৃত্ব পান, আপনি কি সেটা দূর করতে চাইবেন?

নাজমুল: অনেকে হয়তো স্বীকার করবে না, তবে বিশ্বকাপের আগে যা ঘটেছে, সেটার কিছু প্রভাব অবশ্যই বিশ্বকাপে আমাদের দলে পড়েছে। বাইরের আলোচনা না চাইলেও আমাদের কানে এসেছে। আমার ব্যক্তিগত মত, এটা না হলে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম, হয়তো বিশ্বকাপটা আরেকটু ভালোভাবে যেতে পারত। ভবিষ্যতের কথা যদি বলেন, যদি নেতৃত্ব পাই, আমি কখনো এই জিনিসটা ঠিক করতেই যাব না। আমি মনে করি, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কাজ হলো মাঠে গিয়ে পারফর্ম করা এবং সেটা দলের কাজে লাগা। আমার নিজের সেঞ্চুরিও আমার কাছে কোনো অর্থ বহন করে না, সেটা যদি দলের কাজে না আসে। প্রত্যেক খেলোয়াড় দলের জন্য জান দিয়ে খেলছে কি না, দলের জন্য ভাবছে কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। দলে প্রভাব না ফেললে ড্রেসিংরুমে কে কার সঙ্গে কথা বলছে না, তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই।

প্রশ্ন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনা আপনার মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলে?

নাজমুল: শুরুতে প্রভাব ফেলত, তিন–চার বছর আগে। কারণ, প্রথম দিকে আমাকে নিয়ে ভালো কথাই হয়েছে সেখানে। আমি সেটা দেখেছি। এরপর যখন হঠাৎ করে খারাপ বলা শুরু হলো, তখনো তো সেটা আমি দেখেছি! তখন সেসব নিতে পারা আমার জন্য কঠিন ছিল। তবে এখন আর এগুলো নিয়ে ভাবি না। এখনো আলোচনা দেখি, চোখের সামনে আসে। তবে এখন এসব উপভোগ করি, হেসে উড়িয়ে দিই।