ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন অ্যাডহক কমিটি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে ৯টি ফেডারেশনের নতুন কমিটি। এই কমিটি কী সংস্কার করবে, কেন করবে—এসব জানতেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের এই ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার। আজ ষষ্ঠ দিনে প্রথম আলোর মুখোমুখি বাস্কেটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) মোহাম্মদ আতিকুল হাফিজ।
বাস্কেটবলের নির্দিষ্ট কোনো খেলার জায়গা নেই বছর তিনেক ধরে। ফেডারেশনের একটা অফিস পর্যন্তও নেই। এই শূন্যতার মধ্যে কাজ করবেন কীভাবে?
মেজর (অব.) আতিকুল হাফিজ: এটাই ভাবনার বিষয়। ১৪ নভেম্বর কমিটি ঘোষণার পর দেখি, অনেককে চিনি না সেভাবে। এ অবস্থায় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশনের নিজস্ব কোনো কোর্ট নেই। অফিসও নেই। ফলে এটা অনেক বড় উদ্বেগ আমাদের জন্য।
ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাব–সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে বাস্কেটবলের কোর্ট ও অফিস ছিল। শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অংশ হিসেবে সেখানে বহুতল ভবন হচ্ছে। কমপ্লেক্সে বাস্কেটবলের কোর্ট, অফিস পাওয়ার কথা। সেটি কি পাওয়া যাবে?
আতিকুল: অস্থায়ী কোনো কোর্ট বা অফিস বরাদ্দ হলেও চালিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু তা তো হলো না। ফলে কোর্ট-অফিস না থাকা বিরাট চ্যালেঞ্জই হয়ে গেছে আমাদের জন্য। নিজস্ব কার্যালয় না থাকায় দৈনিক কাজে আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।
তা প্রথম সভা কোথায় করলেন? কোনো কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেন?
আতিকুল: গুলশানে গ্রেগরিয়ান ক্লাবে ২২ নভেম্বর অনানুষ্ঠানিক সভা করেছি। আপাতত সিদ্ধান্ত, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ছেলে ও মেয়েদের একটা টুর্নামেন্ট করব।
বাস্কেটবলে কোনো সংস্কারের ব্যাপারে ভেবেছেন?
আতিকুল: প্রথম সংস্কার, ঢাকাকেন্দ্রিক না থেকে সারা দেশে খেলাটা ছড়াতে হবে। ফেডারেশনের কমিটিতে জেলার প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে আরও বেশি। তবে আমাদের প্রথম কাজ ভেন্যু ও অফিস পাওয়া। বৃহস্পতিবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও কথা বলব। ধানমন্ডি জিমনেসিয়ামের অগ্রগতিও দেখতে যাব।
বাংলাদেশে বাস্কেটবল খেলাটা থেকেও যেন নেই। এই খেলার ভবিষ্যৎ কী?
আতিকুল: গত পাঁচ বছর বাস্কেটবল খেলা হয়নি। বুঝতেই পারছেন সংকট কতটা গভীর।
কিন্তু ফেডারেশন বলছে, কোর্ট-অফিস না থাকলেও ২০২০ থেকে এ পর্যন্ত ৪৬টি প্রোগ্রাম করেছে গত কমিটি। মিরপুর ইনডোরে খেলা হয়েছে। এ বছর চ্যালেঞ্জ কাপ যশোরে, যুব ন্যাশনাল চট্টগ্রামে হয়েছে। শুধু প্রিমিয়ার লিগটা ২০২১-এর পর আর হয়নি।
আতিকুল: খেলা যা হয়েছে, খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে হয়েছে হয়তো। এগুলোয় অংশগ্রহণ সর্বজনীন ছিল কি না, সন্দেহ আছে। টুর্নামেন্ট হতে হবে ফলপ্রসূ, যা থেকে কিছু অর্জন হয়।
সেটা একসময় ছিল, সত্তর-আশির দশকে...
আতিকুল: সে সময় বাস্কেটবল অনেক জনপ্রিয় ছিল। মনে আছে, সত্তরের দশকে রাউজকের সামনে পল্টন ময়দানের এক পাশ ছিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, পাশে বাস্কেটবলের অফিশিয়াল কোর্ট। একদিন লিগের খেলা দেখতে ওয়ান্ডারার্সের টিনের চালে লোকজন উঠে পড়ে আর ভিড়ের চাপে সেটি ভেঙে যায়।
অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ডা. শামীম নেওয়াজ জাতীয় বাস্কেটবল দলের প্রথম অধিনায়ক। খেলাটা নিয়ে তাঁর কেমন আগ্রহ?
আতিকুল: অনেক আগ্রহ। তিনি বলেছেন, বাস্কেটবলের সমস্যাগুলো সমাধান করা গেলে জনপ্রিয়তা ফেরানো সম্ভব। সম্ভবত ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ বাস্কেটবল টিম প্রথম বিদেশে খেলতে জাপান যায়। আকা ভাই (ডা. শামীম নেওয়াজ) সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন। আমার সিনিয়র, ওনার বিপক্ষ দলে খেলেছি।
তাহলে তো আশা করা যায়, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জুটিটা ভালো কাজ করবে বাস্কেটবলে?
আতিকুল: অবশ্যই। চেষ্টা তো থাকবেই। আমি কিন্তু ২০০৬ কলম্বো সাফ গেমসে জাতীয় দলের কোচ ছিলাম। সেনাবাহিনীর কোচ হিসেবে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছি। একটা সময় তিন বছর স্কুলে বাচ্চাদের বাস্কেটবল শিখিয়েছি। ১৯৭৯-৯৭ পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে ছিলাম। আর্মি স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। বাস্কেটবল ফেডারেশনের সঙ্গে গত সাত-আট বছর বা তার বেশি সময় আমার যোগাযোগ ছিল না। তবে এখন দায়িত্ব নিয়ে সফল হব আশা করি।
আপনি একজন সেন্ট গ্রেগরিয়ান। এটা কি বাড়তি সুবিধা হবে কাজের ক্ষেত্রে?
আতিকুল: হতে পারে। লক্ষ্মীবাজারে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়েছি আমি। স্কুলটিতে ৯-১০ বছর বয়স থেকে বাস্কেটবল খেলা শুরু হয়। এটাই স্কুলটির ঐতিহ্য। আমিও খেলেছি। কলেজজীবনে খেলেছি। জাতীয় দলে খেলা না হলেও লিগে শান্তিনগর, ব্রাদার্সে খেলেছি। সেসব অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগবে আশা করি।