বাংলাদেশ নারী দলের শ্রীলঙ্কান প্রধান কোচ হাশান তিলকারত্নে
বাংলাদেশ নারী দলের শ্রীলঙ্কান প্রধান কোচ হাশান তিলকারত্নে

সাক্ষাৎকারে হাশান তিলকারত্নে

ভাবতে পারিনি আমাদের খেলোয়াড়েরা এ রকম খেলবে

অস্ট্রেলিয়ার পর ভারত সিরিজেও টানা হারের মধ্যে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সিলেটে আজ শেষ ম্যাচেও হারলে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হতে হবে তাদের। এ ব্যর্থতার কারণ, ঘুরে দাঁড়ানোর উপায়, ঘরের মাঠে সামনের বিশ্বকাপে প্রত্যাশা—প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ রকম অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন বাংলাদেশ নারী দলের শ্রীলঙ্কান প্রধান কোচ হাশান তিলকারত্নে—

প্রশ্ন

দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে নিশ্চয়ই অনেক হতাশ, আরেকটু লড়াই কি আশা করেছিলেন?

হাশান তিলকারত্নে: অবশ্যই, আমাদের আরও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে। হতাশাজনক পারফরম্যান্স। কখনোই ভাবিনি আমাদের খেলোয়াড়েরা এ রকম খেলবে। সিরিজের পর ভুলগুলো খুঁজে বের করে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। ক্রিকেটে ভুল হবেই, সেগুলো শোধরানো গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপ আসছে, অজুহাত দিলে চলবে না।

প্রশ্ন

স্কিল বা দক্ষতার দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দলগুলোর চেয়ে আসলে কতটা পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের মেয়েরা?

তিলকারত্নে: অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বড় একটা পার্থক্য আছে স্কিলের দিক দিয়ে। তবে আমার মনে হয় না ভারতের সঙ্গে ততটা আছে। ব্যাপারটা মানসিকতার—ক্রিজে গিয়ে আপনি কীভাবে নিজেকে মেলে ধরছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের মেয়েরা ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই অনেক খারাপ করেছে। তবে আগামী দুই-তিন মাসে আমাদের মূল উন্নতিটা করতে হবে ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে।

প্রশ্ন

ব্যাটিংয়ের কথা যদি বলি, পরিসংখ্যান বলে বাউন্ডারি মারার দিক থেকে বাংলাদেশ অন্য দলগুলোর তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে...

তিলকারত্নে: বলছি না যে টি-টোয়েন্টিতে ১৫টি আর ওয়ানডেতে ২৫টি বাউন্ডারি মারতেই হবে। তবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য তো থাকে, কিছু ম্যাচ আছে যেখানে বাউন্ডারির সেই চ্যালেঞ্জটা তারা নিতে পেরেছে। আবার কিছু ম্যাচে পারেনি। আবার কখনো যদি বাউন্ডারির সুযোগ না থাকে, তখন এক-দুই করে নিতে হবে। কীভাবে পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে শট খেলার জন্য ওয়েট ট্রান্সফার করতে হয়—টেকনিক্যাল সব ব্যাপারই তারা জানে। শুধু মাঠে গিয়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে পারছে না।

প্রশ্ন

না পারার কারণ কী মনে হয়?

তিলকারত্নে: এটা আসলে ব্যর্থতার ভয়, তারা আউট হওয়ার ভয় পায়। একই সঙ্গে ঠিক উপায়টা বের করতে না পারা, হিসাব করে ঝুঁকিটা নিতে পারে না। ওদের আরও সাহসী হতে হবে, আরও মন খুলে খেলতে হবে। আমরা তাদের কাছ থেকে এটাই চাই।

প্রশ্ন

ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে তো ফিটনেসও জড়িয়ে। সে প্রসঙ্গে কী বলবেন?

তিলকারত্নে: ফিটনেসের উন্নতি হচ্ছে। ইয়ান ডুরান্ট (নারী দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ) অনেক ভালো কাজ করছেন। ডায়েট থেকে শুরু করে সবকিছু ভালো হচ্ছে প্রতিদিন। তবে সম্প্রতি ফিল্ডিংটা গড়পড়তার চেয়েও নিচে ছিল। অস্ট্রেলিয়ার পর এ সিরিজেও কিছু ক্যাচ পড়েছে। এসব নিয়ে কাজ করছি।

প্রশ্ন

দলের মধ্যে কি কোনো মানসিক চাপ কাজ করছে?

তিলকারত্নে: আমার মনে হয় না, সে রকম কিছু। ড্রেসিংরুমে আমরা খুবই শান্তিপূর্ণ ও উপভোগ্য একটা আবহ তৈরি করতে পেরেছি। আমাদের মন্ত্র ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা। টি-টোয়েন্টিতে ২৪০ বল, ওয়ানডেতে ৬০০। এখানে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাওয়াই হলো কথা, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে পরিকল্পনায় অটল থাকা। তবে শেষ কয়েক ম্যাচে আমরা কন্ডিশন ও লক্ষ্যের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারিনি। তাদের আত্মবিশ্বাসটা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, এখন সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন

এই দুই সিরিজের আগে ভালো খেলছিল দল। সে জন্য প্রত্যাশার একটা চাপ তো নিশ্চয়ই তৈরি হয়েছে...

তিলকারত্নে: হতে পারে। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভালো করায় প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। ক্রিকেটে এসব হয়। কিন্তু লোকে কী বলছে, সেটি নিয়ে বেশি ভাবলে চলবে না। মাঠে নেমে নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে। তাদের কাছে ২০ কোটি মানুষের প্রত্যাশা আছে, ফলে তাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা যথার্থ, মানুষ তাদের গ্রহণ করছে।  

প্রশ্ন

খারাপ খেলার পেছনে অভিজ্ঞতার ঘাটতিও কি কোনো ভূমিকা রাখছে?

তিলকারত্নে: সে রকম কিছু নয়। এক বছর ধরেই এ দলটা খেলছে। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা—এসব সিরিজে তেমন কোনো বদল আসেনি। যেকোনো দলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের আছে। মাঠে নেমে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। সামনে আরও খেলা আছে—এশিয়া কাপ, থাইল্যান্ড আসবে। ভালো খেলে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে হবে।

অধিনায়ক হিসেবে নিগার সুলতানাকে এগিয়ে রাখেন হাশান তিলকারত্নে
প্রশ্ন

অধিনায়ক হিসেবে নিগার সুলতানাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

তিলকারত্নে: সে দারুণ কাজ করছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অন্যরা ভালো খেলতে পারছে না। অধিনায়ক নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করছে। অনেক ভালো অধিনায়ক সে, অনেক ভালো খেলোয়াড়।

প্রশ্ন

এবার ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের বাস্তব প্রত্যাশাটা কেমন হওয়া উচিত?

তিলকারত্নে: যদি শেষ চারে যেতে পারি…আমরা ভালো একটা গ্রুপে পড়েছি, যদি ভালো খেলতে পারি। মিরপুরে আমাদের কন্ডিশনে খেলা। শেষ চারে যেতে পারলে আমি অনেক খুশি হব।

প্রশ্ন

বিশ্বকাপে প্রথম পছন্দ কি বর্তমান দলটিই হবে?

তিলকারত্নে: আমি এখনো নিশ্চিত নই। সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আছে। কেউ ভালো করলে তার ওপর নজর রাখব। আমাদের দরজা সবার জন্যই খোলা।