বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন ইতিবাচক দিক খুঁজতে গেলে ঘুরেফিরে আসে পেস বোলিং নিয়ে আলোচনা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হোক কিংবা বড় কোনো টুর্নামেন্ট, ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছেন শুধু পেসাররাই। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। খুব স্বাভাবিকভাবেই পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড এতে খুশি। তাঁর আশা—এই ধারাবাহিকতা পেসাররা ধরে রাখবেন বিশ্বকাপেও। গতকাল প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচ আলাদা আলাদা করে সব পেসারকে নিয়ে কথা বলেছেন। এসেছে ইবাদত হোসেনের না থাকা ও বিশ্বকাপে পঞ্চম পেসারের প্রসঙ্গও।
এশিয়া কাপে পেসারদের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অ্যালান ডোনাল্ড: ওরা যেমন করেছে, তাতে আমি যথেষ্ট খুশি। পাকিস্তানে ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, জায়গাটা একেবারেই অন্য রকম। মানসিকতাও ভিন্ন হতে হয়। খেলার ধরনও ভিন্ন। লাহোরে যদি আগে ব্যাটিং করেন, তাহলে তিন শর বেশি করতে হবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঠিক সেটাই করেছি। সে রানটা ভালোভাবে ডিফেন্ড করেছি। এই বোলিং আক্রমণের অনেকেই হয়তো এবারই প্রথম পাকিস্তানে খেলেছে। দুটি ম্যাচেই ভালো করেছে। পাকিস্তানের ম্যাচে কম রান ছিল ডিফেন্ড করার জন্য। কিন্তু বোলাররা দারুণ লড়াই করেছে। কলম্বোতে লেংথের সঙ্গে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারতাম। উইকেট মন্থর ছিল। কাভারে ঢাকা থাকায় উইকেটে কিছুটা সিম মুভমেন্টও ছিল। সেখানেও একেবারে খারাপ করিনি। তবে আরেকটু ভালো জায়গায় বল করা যেত। যেমন ফুল লেংথটা খুঁজে নেওয়া, বাউন্সারটা কাজে লাগানো, যা আমরা করে এসেছি। ভারতের বিপক্ষে চাপের মুখে ঠিক সময়ে উইকেট এনে দেওয়া দরকার ছিল। মোস্তাফিজ, সাকিবরা (তানজিম হাসান) সেটা করেছে। খুবই ভালো লেগেছে সাকিবের বোলিং দেখে।
পেসারদের প্রত্যেকেই নতুন বলে বেশ ধারাবাহিক...
ডোনাল্ড: আমি যখন প্রথম এই চাকরিটা নিই, তখন পাওয়ারপ্লেতে বাউন্সার মারায় আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। আমি ওদের বলেছি, ফল নিয়ে না ভেবে আক্রমণাত্মক হতে। আমরা পাওয়ারপ্লেতে নির্মম বোলিং চাই, সেটা যেভাবেই হোক। সাদা বলের ক্রিকেট এখন এমনই। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আউট করতে হবে। আপনি যদি রয়েসয়ে খেলেন, তাহলে সারা দিন বল কুড়াতে হবে। আমরা গত এক-দেড় বছরে সামগ্রিকভাবে এই মানসিকতাটা গ্রহণ করেছি।
আমি যখন প্রথম এই চাকরিটা নিই, তখন পাওয়ারপ্লেতে বাউন্সার মারায় আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। আমি ওদের বলেছি, ফল নিয়ে না ভেবে আক্রমণাত্মক হতে। আমরা পাওয়ারপ্লেতে নির্মম বোলিং চাই, সেটা যেভাবেই হোক।অ্যালান ডোনাল্ড, বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ
শরীফুল ইসলাম গত ছয় মাসে অনেক উন্নতি করেছেন। বিশেষ করে নতুন বলে ইনসুইং রপ্ত করেছেন, যা পাওয়ারপ্লেতে খুব গুরুত্বপূর্ণ...
ডোনাল্ড: শরীফুলের উন্নতিতে আমি খুব খুশি। আমরা ওর রিস্ট পজিশন নিয়ে কিছু কাজ করেছি। আগে রিস্ট লক ছিল না। এখন সে খুবই ভালো লকড ইন পজিশনে বল ছাড়ছে। যে কারণে সুইং পাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। সে এক্সপ্রেস গতির নয়, তবে ব্যাটে যতটা জোরে আঘাত করা দরকার, তা করছে।
এই বিশ্বকাপে তাসকিন আহমেদকে কোথায় দেখতে চান?
ডোনাল্ড: তাসকিন গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করেছে। ওই কন্ডিশনে তাঁর কাছ থেকে আমরা যা চেয়েছি, তা পেয়েছি। এবারও সে বড় মঞ্চে জ্বলে উঠবে, পেস বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দেবে, তাসকিনের কাছে এ প্রত্যাশা থাকাটাই স্বাভাবিক।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হাসানও ভালো করেছেন...
ডোনাল্ড: শুধু তা–ই নয়, সে বেশ পরিণতও হচ্ছে। যত খেলবে, তত পরিণত হবে। বিশেষ করে বড় টুর্নামেন্টগুলো ওর উন্নতির জন্য আদর্শ। কারণ, তাকে সব সময় চাপের মধ্যে পারফর্ম করতে হয়। আর হাসানের মতো শেখার মানসিকতার ছেলেরা এসব টুর্নামেন্ট থেকে খুব দ্রুত শেখে।
মোস্তাফিজকে কি বিশ্বকাপে পাওয়ারপ্লের বাইরেই বোলিং করতে দেখা যাবে?
ডোনাল্ড: হয়তো তা–ই। কারণ, পাওয়ারপ্লেতে হয়তো তাসকিন, হাসানরা বল করবে। ‘ফিজ’ আসবে মাঝের ওভারে, শেষের দিকে। তাঁর দক্ষতা, অভিজ্ঞতাটা ম্যাচের ওই মুহূর্তেই খুব কার্যকরী। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেই তো দেখেছেন, সে কী করেছে।
পেসারদের উন্নতির পরের ধাপটা কী?
ডোনাল্ড: আমি এখন সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে একটা কথাই বলি, তারা সবাই যেন যে যার জায়গা থেকে নিজের মান ধরে রাখে। আর এই মানে হলো আক্রমণাত্মক বোলিং, ঝাঁজালো বোলিং। এবং সেটা যেকোনো কন্ডিশন ও যেকোনো পরিস্থিতিতে।
ইবাদত হোসেনের বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না। দলের জন্য এটি নিশ্চয়ই বিরাট ক্ষতি...
ডোনাল্ড: কী ফর্মেই না সে ছিল, তাই না? এটা আমাদের পরিকল্পনা ওলটপালট করে দিয়েছে, এটা ঠিক। কারণ, সে শুরুতে আমাদের স্ট্রাইক বোলারদের একজন, যে মাঝের ওভারেও ভয়ংকর। বিরাট ক্ষতি। আমি খুবই দুঃখিত তার জন্য। সে যে চোটে পড়েছে আর যেভাবে পড়েছে, খুবই হতাশাজনক। তাঁর শূন্যতা সবাই অনুভব করছে। আমরা তাঁকে আমাদের ওয়ার্ল্ডকাপ পেস বোলিং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রেখেছি।
কে হতে পারেন ইবাদতের বিকল্প?
ডোনাল্ড: সাকিব খুবই ভালো করছে। জানি, এটা শুধু এক ম্যাচ, তবে অনুশীলনেও তো তাকে দেখছি। সে ১৪০ কিলোমিটারের কাছাকাছি বোলিং করছে। দারুণ নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে পেস অফ ও পেস অনের ক্ষেত্রে। আমরা দেখেছি, সে কীভাবে দারুণ একটা ছক্কা মারল। ভারতের অন্যতম সেরা পেসারকে ক্রিজ ছেড়ে মিড অনের ওপর দিয়ে ছক্কা! সাকিবের মতো পেসারের জন্য এটা বিশাল এক সুযোগ, বিশ্বকাপে গেলে তা কাজে লাগানোর। ইবাদতকে যতটাই মিস করি না কেন, সাকিবকেও আমাদের গ্রুপে স্বাগত জানাই।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে খালেদ আহমেদকেও রাখা হয়েছে। তিনিও নিশ্চয়ই ভাবনায় আছেন?
ডোনাল্ড: খালেদ এই গ্রুপের পুরোনো সদস্য। টেস্ট দলে সে আগে থেকেই নিয়মিত। এবার সে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ পাবে। সাদা বলের ক্রিকেটে সে কী করতে পারে, সেটা দেখানোর সুযোগ পাবে। আমি তাঁকে নিয়ে আশাবাদী। পঞ্চম পেসারের জায়গাটা শেষ পর্যন্ত কে নেয়, সেটা দেখতে হবে।