টানা দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী গোলকিপার হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের গোলপোস্টে সব সময়ই আস্থার প্রতীক রুপনা চাকমা। কাঠমান্ডুতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের মেয়েদের সাফ জয়ের উদ্যাপন-উৎসবের মধ্যেই কাল বাফুফে ভবনে প্রথম আলোর সঙ্গে রুপনা কথা বললেন সাফ শিরোপা জয় নিয়ে—
দুই বছর আগে সাফের সেরা গোলকিপার হয়েছিলেন, এবারও হলেন। দুটির মধ্যে এগিয়ে রাখবেন কোনটিকে?
রুপনা চাকমা: দুটি অনুভূতিই দুর্দান্ত। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে দুই বছর আগের সেরা হওয়াটাকেই এগিয়ে রাখতে চাই। কারণ, গতবার পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র একটি গোল খেয়েছিলাম, নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে। এবার প্রতি ম্যাচেই গোল খেয়েছি। এমনকি সেমিতে ভুটানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জেতা ম্যাচটিতেও। এবার যে সেরা হব, সেটা ভাবিনি।
এবার কোন ম্যাচটি বেশি কঠিন ছিল?
রুপনা: সত্যি বলতে কি, প্রতিটি ম্যাচই ভীষণ কঠিন ছিল। প্রতিটি ম্যাচই আমাদের সর্বোচ্চটা নিংড়ে নিয়েছে। সাফ অঞ্চলে মেয়েদের ফুটবলে সব দলই উন্নতি করছে। আমরাও যেমন করেছি, অন্যরাও করছে। ফাইনালটা ছিল ভীষণ চাপের। পুরো স্টেডিয়াম আমাদের বিপক্ষে ছিল। সেই চাপ অতিক্রম করেই আমাদের জিততে হয়েছে। ভারতের সঙ্গে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আমরা ৩-১ গোলে জিতেছি। ওটাও একধরনের ফাইনালই ছিল।
ফাইনালের দর্শক-চাপ গোলকিপার হিসেবে কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?
রুপনা: এমন দর্শক ২০২২ ফাইনালেও ছিল। তাই বিপক্ষ দর্শকের চিৎকার সামলানোর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আমি মাঠের খেলায় মনোযোগ দিয়েছি। নিজের মতো করে খেলেছি।
ভারতের বিপক্ষে আপনি দুর্দান্ত খেলেছেন। কিন্তু ভারত যে গোলটি করেছিল, সেটি আপনার হাত ফসকেই। কী হয়েছিল আসলে?
রুপনা: খুবই বাজে গোল খেয়েছি। সহজ একটা বল এল, শুধু গ্রিপ করব, তখনই কী যেন হলো! হাত ফসকে বেরিয়ে গেল। কপাল খারাপ বলটা হাত থেকে বের হয়ে ভারতের বালা দেবীর হেডের নাগালে গেল। দল না জিতলে নিজেকে অপরাধী মনে হতো।
টুর্নামেন্টের মধ্যেই কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে খেলোয়াড়দের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এটা নিয়ে কী বলবেন?
রুপনা: দূরত্ব তৈরি হওয়া নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে কোচ হিসেবে পিটার বাটলার অনেক ভালো। তাঁর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি, উপকৃত হয়েছি।
(ফাইনালের) আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। কিছুই খেতে পারছিলাম না। সাবিনা আপুসহ অন্যরা বুঝিয়েছে, টেনশন করা মানে নিজেদের খেলার ক্ষতি করা। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছিল, গোল ঠেকানোর কাজটা তো আমাকেই করতে হবে।রুপনা চাকমা
নেপালের বিপক্ষে ফাইনালের আগে দলের পরিবেশ কেমন ছিল? জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?
রুপনা: অন্যদের কথা বলতে পারব না, তবে আমি খুব টেনশনে ছিলাম। আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। কিছুই খেতে পারছিলাম না। সাবিনা আপুসহ অন্যরা বুঝিয়েছে, টেনশন করা মানে নিজেদের খেলার ক্ষতি করা। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছিল, গোল ঠেকানোর কাজটা তো আমাকেই করতে হবে। শেষ পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক হয়েছে।
ফাইনালে ঋতুর জয়সূচক গোলটি দূরের পোস্টে দাঁড়িয়ে দেখছেন। ওই মুহূর্তের অনুভূতিটা কেমন ছিল?
রুপনা: ঋতুর গোলটা যে কী দুর্দান্ত হয়েছে, সেটা মাঠে থেকেও বুঝতে পারিনি। আমি তো অনেক দূরে ছিলাম। আমি দেখলাম ঋতু ক্রস করছে, সেটা নেপালি গোলকিপারকে ফাঁকি দিল। পরে গোলের ভিডিও দেখে আমার কাছে অবিশ্বাস্য লেগেছে।
ফুটবলার হিসেবে ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
রুপনা: আমি বিদেশি লিগে খেলতে চাই। আর দেশে নিয়মিত লিগ আয়োজিত হোক, সেটা চাই। নিজের দুর্বলতা নিয়ে কাজ করতে চাই।