বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন
বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন

রিশাদকে কোহলি, ‘ভালো যাচ্ছে, ক্যারি অন’

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স থেকে ইতিবাচক কিছু খুঁজতে গেলে রিশাদ হোসেনের নামটাই আগে আসবে। বাংলাদেশের ৭টি ম্যাচের একাদশেই ছিলেন ২১ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার। এবারই প্রথম আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে ৭.৭ ইকোনমি রেট ও ১৩.৮৫ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৪টি, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকায় চতুর্থ। সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রিশাদমোহাম্মদ জুবাইরকে জানিয়েছেন তাঁর বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতার কথা—

প্রশ্ন

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেললেন। যাওয়ার আগে ব্যক্তিগতভাবে কী প্রত্যাশা ছিল, আর সেটা কতটা পূরণ করতে পারলেন?

রিশাদ হোসেন: এখানে আসার আগে বলেছিলাম, আগের বিশ্বকাপের তুলনায় এবার দলগতভাবে আমরা ভিন্ন কিছু করতে চাই। আর ব্যক্তিগতভাবে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার লক্ষ্য ছিল। যখন ভালো যাচ্ছিল, তখন চেষ্টা ছিল আরও ভালো করার। দলকে আরও ভালো কিছু দেওয়ার তাড়না ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি যেহেতু ভালো করছি, আমারই আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত, দলকে জেতানো উচিত।

প্রশ্ন

বিশ্বকাপে আপনার ১৪ উইকেটের বেশির ভাগই এসেছে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে। আপনাকে বলও দেওয়া হয়েছে উইকেট নেওয়ার জন্য। দলের ইমপ্যাক্ট বোলারের দায়িত্ব পালন করতে পেরে কেমন লাগছে?

রিশাদ: আমাকে বলা হয়েছিল, যখনই আমি বোলিংয়ে আসব, তখনই যেন উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করি। আমি সে চেষ্টা করেছি। স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনেই বোলিং করেছি। এমন কিছু করিনি, যেটা গত এক বছরে করিনি। স্বাভাবিক বোলিং করেই সফল হয়েছি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে রিশাদ হোসেন নিয়েছেন ৩ উইকেট। এমন দুর্দান্তই কেটেছে তাঁর বিশ্বকাপ
প্রশ্ন

বিশ্বকাপ, বড় মঞ্চ—এসব মাথায় আসেনি?

রিশাদ: তেমন একটা না। প্রতিটি ম্যাচকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ম্যাচের মতোই দেখেছি, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছি। বিশ্বকাপের ম্যাচ মনে করে মঞ্চটাকে বড় করে দেখতে চাইনি।

প্রশ্ন

অনেক সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার আপনার বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন। বিশ্বকাপে সামনাসামনি এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে, যেটা বলা যায়?

রিশাদ: অনেকের সঙ্গেই দেখা হচ্ছিল। সবাই বলছিল, ভালো হচ্ছে, ক্যারি অন। সামনে আরও ভালো হবে। রশিদ খানও বলেছেন, খুব ভালো যাচ্ছে টুর্নামেন্ট। ভারতের ম্যাচের পর বিরাট কোহলি বলেছেন, ভালো যাচ্ছে, ক্যারি অন।

প্রশ্ন

প্রায় প্রতি ম্যাচেই উইকেট পেয়েছেন। কোন ম্যাচটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে?  

রিশাদ: নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ম্যাচটা মনে রাখব। আমাদের ওই ম্যাচ জিততেই হতো।

প্রশ্ন

আপনি তো সেই ম্যাচে চাপের মুহূর্তে ২টি উইকেট নিয়ে খেলাই ঘুরিয়ে দিয়েছেন…

রিশাদ: আসলে চাপের মুহূর্তে ঠান্ডা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি সে চেষ্টা করি। স্বাভাবিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করি। অতিরিক্ত কিছু যেন না করি, সেদিকে খেয়াল রাখি।

বিশ্বকাপে রিশাদের ব্যাটিংটা প্রত্যাশামতো হয়নি
প্রশ্ন

ব্যাটিংটা প্রত্যাশামতো হয়েছে?

রিশাদ: যতটুকু সুযোগ এসেছে, চেষ্টা করেছি। বাকিটা তো দেখেছেনই।

প্রশ্ন

বেশির ভাগ ম্যাচে নিচে খেলেছেন। একটা ম্যাচে ওপরে নামার সুযোগ এসেছিল...

রিশাদ: বড় মঞ্চে হঠাৎ করে সুযোগ দেওয়া…আমার ভালো লেগেছে, আমাকে যখন ওপরে নামানো হয়েছে, দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিনি। তবে এটা অভিজ্ঞতার ব্যাপার। সামনে এমন সুযোগ এলে ইমপ্যাক্ট রাখার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন

এবারের বিশ্বকাপে বিভিন্ন ধরনের উইকেটে খেলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একরকম, ক্যারিবিয়ানে আরেক রকম। ক্যারিবীয় উইকেটও কোথাও স্লো, ডাবল পেস, আবার কোথাও ধারাবাহিক বাউন্স। প্রায় সব উইকেটেই আপনি দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন, কীভাবে?

রিশাদ: আমি উইকেটটা দ্রুত বোঝার চেষ্টা করেছি। কোথায় কোন ধরনের বোলিং ভালো হবে, কেমন গতিতে করলে ভালো হবে, এসব আগে থেকে চিন্তা করেছি। উইকেট দেখার পর বোঝার চেষ্টা করেছি, এ রকম বোলিং করলে মনে হয় ভালো হবে। এই উইকেটে পেসে একটু বৈচিত্র্য আনতে হবে, একটু জোরে করতে হবে, আবার আস্তে...এসব আরকি।

রিশাদ হোসেন: বাংলাদেশের লেগ স্পিন বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ
প্রশ্ন

এর আগে আপনার যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। আপনি কি নিজের প্রথম ওভারেই কন্ডিশন বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতেন নাকি আরেকটু সময় লাগত?

রিশাদ: প্রথম এক-দুইটা বল করার পরই বুঝতে পারি, কী হতে পারে। ম্যাচের আগে উইকেট দেখার পরও বোঝা যায় কিছুটা। তখন একটা মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

প্রশ্ন

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ইতিবাচক দিক খুঁজতে গেলে আপনার নামই আগে আসবে। বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?

রিশাদ: এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু অনুভব করিনি। স্বাভাবিক আছি, স্বাভাবিক থাকতে চাই। মাত্র শুরু, দেশকে অনেক কিছুই দেওয়ার আছে। অনেক কিছু করে ফেলেছি, আবার খুব খারাপ করে ফেলেছি, এসব কিছুই ভাবছি না। আমি খেলতে এসেছি, ভালো করতেই এসেছি, এটাই আমার দায়িত্ব। কখনো হবে, কখনো হবে না। তবে ভালো করে যাওয়ার চেষ্টাটা অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রশ্ন

মুশতাক আহমেদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন…  

রিশাদ: উনি আসাতে আমার অনেক উপকার হয়েছে। সাহস নিয়ে বোলিং করা, ভয় নিয়ে যেন বোলিং না করি, এসব দিকে অনেক সাহায্য করেছেন। মনে করেন, সামনে বল করতে গিয়ে ছক্কা হলো। ভয় ঢুকে গেলে পরের বলটা সামনে করতে দুবার চিন্তা করবেন। আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। তবে খুব বেশি সময় তো পাইনি। নিয়মিত অনুশীলনের বাইরে ওনার সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ হয়নি। এর মধ্যেই অবশ্য উনি অনেক কিছু শিখিয়েছেন, যা সাহায্য করেছে। সামনে সময় আছে, তার সঙ্গে আরও কাজ করার বাকি আছে।