বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার

বাটলারের সাফ কথা: টিকটক, রিলস...এসবে মত দেব না

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে গতকাল রাতেই ঢাকা ছেড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। সাবিনা-রুপনাদের রেখে একেবারে নতুন একটা দল নিয়ে বিমানে উঠেছেন কোচ পিটার বাটলার। বাফুফের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের পর এটাই তাঁর প্রথম পরীক্ষা। তার আগে গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন কোচ হিসেবে তাঁর দর্শন, নারী ফুটবলের সাম্প্রতিক সংকট এবং বর্তমান দলের নানা প্রসঙ্গে—

প্রশ্ন

নতুন একটা দল নিয়ে আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন। কতটা আশাবাদী?

বাটলার: এটা আমাদের পরবর্তী টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি। আমি চাই মেয়েরা নির্ভার হয়ে পারফর্ম করবে, নিজেদের মেলে ধরবে। কোনো রকম চাপ অনুভব করবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাদের কাছ থেকে একটা আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স দেখতে চাই।

প্রশ্ন

বেশ কিছুদিন ধরেই এই দলটাকে নিয়ে কাজ করছেন। আগের দল আর বর্তমান দলের মধ্যে মূল পার্থক্যটা কোথায়?

বাটলার: বয়স আর অভিজ্ঞতায়। এটা আমাদের নতুন এক যাত্রা, নতুন করে শুরু করা আর এরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এদের মধ্যেও তারকা আছে। হয়তো সেই তারকার দেখা পেতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

কাঠমান্ডুতে সাফ জয়ের পর দলের সঙ্গে কোচ পিটার বাটলার
প্রশ্ন

প্রতিটা দলের শক্তি আর দুর্বলতার জায়গা থাকে। আপনার এই দলের শক্তির জায়গা কোনটা?

বাটলার: এই দলটা মাত্র তিন থেকে চার সপ্তাহ অনুশীলন করেছে, এটা খুব বেশি কিছু নয়। তবে আমি যেটা দেখলাম, তারা নিয়মিত শিখছে, উন্নতি করছে। আসলে আমাদের সবারই শক্তি ও দুর্বলতার দিক আছে। তারাও ব্যতিক্রম নয়। তবে প্রতিদিনই তাদের মনোবল বাড়ছে এবং শক্তির জায়গাগুলো সমৃদ্ধ হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমি এই দলটাকে নিয়ে খুবই ইতিবাচক।

প্রশ্ন

১৮ ফুটবলারের বিদ্রোহ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আপনিও অনেক কিছু বলেছেন। নতুন কিছু কি বলবেন?

বাটলার: শৃঙ্খলা সব ক্ষেত্রেই জরুরি, সেটা ব্যক্তিজীবন বলি আর খেলাধুলা। আমি মনে করি, সাফল্যের সঙ্গে শৃঙ্খলার যোগসূত্র থাকে। ১৮ ফুটবলার যেটা করেছে, সে জন্য তাদের শাস্তি হোক অথবা শাস্তি না হোক, কোনোটাই আমি বলতে চাই না। আমার সব মনোযোগ এখন নতুন দলটা নিয়ে। তাদের পেছনে শ্রম দিচ্ছি, তাদের নিয়েই ভাবছি।

নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুশীলনে পিটার বাটলার
প্রশ্ন

বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলার বলেছিলেন, আপনার অধীন অনুশীলন করবেন না। এখন সিদ্ধান্ত বদলে তাঁরা ফিরতে চাইছেন। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

বাটলার: আপাতত তাদের নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। তাদের ফেরা না–ফেরা নিয়ে কিছু জানি না। নতুন দলটাকে নিয়ে অনেক দূর যেতে হবে। সেই চেষ্টাই করে যাব।

টিকটক, রিলস...এসবে আমি কখনো মত দেব না। শুধু এই দলের খেলোয়াড়দের বলব, আপনারা বাংলাদেশের লক্ষাধিক কিশোর-কিশোরীর জন্য রোল মডেল। অন্যদের আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হবেন না, মনে রাখবেন, শৃঙ্খলাই জীবনের চাবিকাঠি।
পিটার বাটলার, কোচ, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল
প্রশ্ন

নারী ফুটবলারদের টিকটক করা নিয়ে আপনি নাকি খুব বিরক্ত। আসলে টিকটক-রিলস একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে?

বাটলার: আপনিই আমাকে বলুন, ফোন নিয়ে অনুশীলনে কেন আসতে হবে? আপনি ফোন বাড়িতে রেখে এসে ফুটবলে মন দিন। আমি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি না, এটা বিভ্রান্তিকর। আর টিকটক, রিলস...এসবে আমি কখনো মত দেব না। শুধু এই দলের খেলোয়াড়দের বলব, আপনারা বাংলাদেশের লক্ষাধিক কিশোর-কিশোরীর জন্য রোল মডেল। অন্যদের আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হবেন না, মনে রাখবেন, শৃঙ্খলাই জীবনের চাবিকাঠি।

বাটলারের অধীনে খেলতে চাননি বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা
প্রশ্ন

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সাফে নিয়মিত ভালো করছে, কিন্তু এএফসির প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ। এমন হওয়ার কারণ কী?

বাটলার: সাফ গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের একটি। তবে আপনি আরও এগোতে চাইলে এএফসির প্রতিযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ওই পর্যায়ে খেললে অনেক কিছু শেখাও যাবে। তা ছাড়া এএফসিতে খেলার পরই বোঝা যাবে, আমরা কোথায় আছি। সেখানে ভালো করতে হলে এখনকার মতো পারফর্ম করলে চলবে না। আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে। পাশাপাশি র‌্যাঙ্কিংয়েও উন্নতি করতে হবে।

প্রশ্ন

নতুন চুক্তি অনুযায়ী আপনি ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়েদের কোচ। এই সময়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট রয়েছে। এসব নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

বাটলার: আমাকেও নিয়মিত অনেক কিছু জানতে হচ্ছে। আসলে এখানে নির্দিষ্ট করে পরিকল্পনা সাজানো কঠিন। কারণ, লিগ নেই, অনেক সুযোগ–সুবিধার অভাব। এরপরও আমি বাস্তবতা মেনে কাজ করে যাচ্ছি। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ফুটবল যেখানে দাঁড়িয়ে, আমি বলব, সাফে ফিরে তাকানো ঠিক হবে না। অতীত নিয়ে পড়ে থাকা বন্ধ করতে হবে। আরেকটা বিষয়, আপনি যদি এই সফরের পর মেয়েদের লম্বা সময়ের জন্য ছুটি দেন, তাহলে আগের পরিশ্রমটাই বৃথা যাবে। তবে আমি ছুটির বিপক্ষে নই। আপনি তাদের ছোট্ট একটা বিরতি দিতে পারেন, হতে পারে সেটা ঈদের ছুটি। এরপর দ্রুত আবার অনুশীলনে ফিরতে হবে। এভাবে নিয়ম মেনে না চললে ইতিবাচক কিছু করা কঠিন।