বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করছেন পাঁচ বছর ধরে। তবে এখন আর জামাল ভূঁইয়াকে সব ম্যাচে ৯০ মিনিটে মাঠে রাখেন না হাভিয়ের কাবরেরা। কোচ তাঁর পজিশনও বদলে দিচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও কিছু বলতে চান না জামাল। মনোযোগ রাখছেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার দিকেই। বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে আজ বেলা সাড়ে তিনটায় সেমিফাইনালে কুয়েতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। জিতলে ফাইনাল, হারলে বিদায়। তবে বেঙ্গালুরু থেকে মুঠোফোনে এই মিডফিল্ডার প্রথম আলোকে বললেন, ফাইনালে উঠে এবারের সাফ টুর্নামেন্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান তিনি—
আপনার নেতৃত্বে ১৪ বছর পর সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে কুয়েতের বিপক্ষে বাংলাদেশের বাস্তব সম্ভাবনা আসলে কতটুকু?
জামাল ভূঁইয়া: সম্ভাবনা তো আছেই। ফাইনালে ওঠার জন্যই আমরা সেমিফাইনালে আছি, তাই না? ফাইনালে যেতে হলে সবাইকে ভালো খেলতে হবে। তবে এটা মানতে হবে, ফাইনাল থেকে এক পা দূরে দাঁড়িয়ে আমরা। আমাদের কোচ বলেছেন, সাফে আমরা শুধু অংশ নেওয়ার জন্য আসিনি। আমরা কিছু পেতে এসেছি। ভালো কিছু করতে এসেছি।
সাফে তিনটি ম্যাচ খেলে ফুটবলাররা ক্লান্ত। সেমিফাইনালের আগে আপনাদের মানসিক অবস্থা কী?
জামাল: সবার মানসিক অবস্থা ভালো। সবাই আত্মবিশ্বাসী, ইঙ্গিতটা ভালো। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া যাবে না, সেটা ভালোও নয় আমরা জানি। সবাই চেষ্টা করছে যাতে আমরা ফাইনালে যেতে পারি। তবে কুয়েতের প্রতি আমাদের অনেক বেশি সম্মান আছে। কারণ, ওরা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
কোথায় এগিয়ে কুয়েত?
জামাল: ওরা লেবাননের মতো শারীরিকভাবে বেশ শক্তিশালী, লম্বাও। দলীয় সমন্বয় ভালো, ফলে ওরা অনেক ভালো খেলে। মালদ্বীপ বা ভুটানের চেয়ে কুয়েতের মান বেশ ভালো। ফলে আমাদের জন্য কঠিন একটা ম্যাচ অপেক্ষা করছে।
কী মনে হয়, অঘটন ঘটাতে পারবেন?
জামাল: কুয়েত ম্যাচের দিকে বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে জানি। সেটা মাথায় রেখে বলব, আমাদের ওপর এখন অনেক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আমরা পালন করতে চাই। দেখুন, আমরা যখন সাফের জন্য দেশ ছাড়ি, তখন আমাদের কাছে কেউ কিছু আশা করেনি। তবে সেই পরিস্থিতি বদলেছে। সাফে এসে আমরা ভালো ফুটবল খেলেছি। যে কারণে আমাদের কাছে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এতে আমি অবাক হইনি। কারণ, নিজেদের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে। ফাইনালে যেতে পারলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের ফুটবলে। তাই আমরা জানপ্রাণ দিয়েই লড়াই করব।
কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচ পরিকল্পনা কেমন হতে পারে?
জামাল: কুয়েতের আক্রমণভাগ অনেক শক্তিশালী। ফলে তাদের আক্রমণ সামলাতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের আক্রমণাত্মকও হতে হবে। আমাদের খেলবে হবে নিজেদের খেলাটা। কোনো গোল যাতে না খাই, নজর রাখতে হবে সেদিকে। রক্ষণ কীভাবে ভালো রাখা যায়, সেটা ভাবতে হবে।
আপনার নিজের কথা বলুন। নিজের খেলা নিয়ে খুশি আছেন?
জামাল: আমার নিজের খেলা ঠিক আছে। কিন্তু প্রতি ম্যাচে আমি নতুন পজিশনে খেলছি, কিছু করার নেই। টিমের জন্য খেলছি।
ঘরোয়া ফুটবলে আপনি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেলেন। সাফে ওপরে খেলাচ্ছেন কোচ। আক্রমণে ভূমিকা রাখতে হচ্ছে...
জামাল: সব খেলোয়াড়ের একটা ফেবারিট পজিশন আছে। আমারও আছে। তবে আমরা এখানে একটি টুর্নামেন্ট খেলছি। তাতে আপনার ব্যক্তিস্বার্থটা ত্যাগ করতে হবে। আমি সেই ত্যাগই করছি।
আপনি নিজে কী মনে করেন, মাঠে সেরাটা কি দিতে পারছেন?
জামাল: কোচ আমাকে যেখানে দিচ্ছেন, সেখানেই আমি খেলছি এবং চেষ্টা করছি নিজের সেরাটা দিতে। কতটা কী করতে পারছি, সেটা মূল্যায়ন করবেন দর্শকেরা।
আপনি নিজে কোন পজিশনে খেলতে চান?
জামাল: আমি সব সময় মিডফিল্ডে খেলেছি। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে আমি সব জায়গায় খেলছি। মাঝমাঠে মাঝখানে, ওপরে, ডান পাশে। আমি কোন পজিশনে খেলব, সেটা ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা করলে হবে না। টিম যেখানে চায়, সেখানে খেলতে হবে।
এবারের বেঙ্গালুরু সাফের প্রথম দুই ম্যাচে ৬০ মিনিটের আশপাশে কোচ আপনাকে তুলে নিয়েছে। গত মার্চে সিলেটে সেশেলসের বিপক্ষে ম্যাচেও একইভাবে আপনাকে তুলে নেওয়া হয়। এটাকে কীভাবে নিচ্ছেন?
জামাল: সাফে আমি প্রথম দুই ম্যাচে ৬০ মিনিটের মতো খেলেছি। আসলে ম্যাচে সবাই খেলতে চায়। বেঞ্চে যারা আছে, তারা খেলতে চায়। আমরা সবাই এখানে এসেছি খেলতে। এটা শুধু আমার বেলায় নয়, সবার বেলাতেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, কোচের সিদ্ধান্তে আপনার কোনো ক্ষোভ আছে কি না...
জামাল: না, এটা ক্ষোভের বিষয় নয়। কোচ বলেছেন, সাফ একটা লম্বা টুর্নামেন্ট। তাই তিনি আমাকে বদল করেছেন। ভুটানের সঙ্গে সর্বশেষ ম্যাচে আমি নিজেই চেয়েছি আমাকে বদল করতে। সেমিফাইনালের কথা চিন্তা করে আমি তাঁকে বলেছিলাম আমাকে তুলে নিতে। আমি সেমিফাইনালের জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোচ দেখেছেন, অন্য খেলোয়াড়েরাও ক্লান্ত। তাই আর আমাকে বদল করেননি ভুটান ম্যাচে। কোচ বলেছেন, “তুমি পুরো ম্যাচ খেলো।” আমি বলেছি, ঠিক আছে। চেষ্টা করব, বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলে এবারের সাফ টুর্নামেন্টটা স্মরণীয় করে রাখতে।