বসুন্ধরা কিংসের সদ্য বিদায়ী কোচ অস্কার ব্রুজোন
বসুন্ধরা কিংসের সদ্য বিদায়ী কোচ অস্কার ব্রুজোন

‘কিছু কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ক্লাব পরিচালনা করছেন’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে বসুন্ধরা কিংস টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁর কোচিংয়ে। ছয় বছরে কিংসকে তিনি দিয়েছেন ১১টি শিরোপা। তবে দুই পক্ষের সমঝোতায় অস্কার ব্রুজোনের সঙ্গে কিংসের সফল যাত্রার সমাপ্তি ঘটেছে কদিন আগে। আজ রাতে দেশে ফিরে ফিরে যাচ্ছেন এই স্প্যানিশ কোচ। যাওয়ার আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গত ছয় বছরে বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ৪৭ বছর বয়সী ব্রুজোন।

প্রশ্ন

কিংসের সঙ্গে আপনার ছয় বছরের যাত্রাকে কীভাবে দেখেন?

অস্কার ব্রজোন: দুর্দান্ত এক যাত্রা। দেশের সেরা পেশাদারদের সঙ্গে কাজ করার এবং বেশ কয়েকটি শিরোপা জেতার সুযোগ হয়েছে। প্রতিটি বছরই ছিল ভিন্ন রকমের। সম্ভবত সেরা স্মৃতি গত মৌসুমে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের প্লে–অফে খেলার সুযোগ পাওয়া এবং ঘরোয়া ফুটবলে ট্রেবল জেতা।

প্রশ্ন

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবল নিয়ে কী বলবেন?

অস্কার: ক্লাব ফুটবলে ছয়টি পরিবর্তনের কথা বলতে পারি। এক. লিগ আয়োজন ভালো হয়েছে। দুই. সারা দেশে ভেন্যু বেড়েছে। তিন. মাঠে সমর্থকদের উপস্থিতি বেড়েছে। চার. আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘরোয়া সূচি হচ্ছে। পাঁচ. ভালো মানের বিদেশি খেলোয়াড় আসছে। ছয়. শীর্ষ লিগে ক্লাবের সংখ্যা কম, যা লিগটাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে। সব মিলিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের ফুটবল উন্নতির পথে আছে এবং বিকশিত হচ্ছে। তবে এখনো ফুটবলে দ্রুত উন্নয়ন ও উন্নতিতে বাধা হয়ে আছে কিছু শক্তি।

প্রশ্ন

নেতিবাচক কিছু কি চোখে পড়েছে?

অস্কার: আমি দেখেছি, এখানে কিছু কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ক্লাব পরিচালনা করছেন। ক্লাবের স্বার্থ ও বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতির চেয়ে তাঁদের কাছে ব্যক্তিস্বার্থটাই বড়।

প্রশ্ন

বাংলাদেশের ফুটবলের কী ভবিষ্যৎ দেখেন?

অস্কার: পুরোপুরি পেশাদার লিগ দাঁড় করাতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। যেখানে ক্লাবের নিজস্ব সমর্থককুল থাকবে, ভেন্যু হবে আধুনিক, দলগুলো খেলবে ইতিবাচক ফুটবল। লিগ যেকোনো ফুটবল জাতির হৃদয়। ক্লাব ও ফেডারেশনকে লিগের উন্নতির উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করা চাই। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ভারতীয় দলের সঙ্গে গুণগত ব্যবধান কমাতে হবে।

অস্কার ব্রুজোনের অধীনে টানা পাঁচ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস
প্রশ্ন

আপনি বিদায় ঘোষণার দিন বলেছেন, বসুন্ধরা কিংসের ম্যানেজার ওয়াসিমুজ্জামানের সঙ্গে আপনার কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। একটু কি বিস্তারিত বলবেন?

অস্কার: তিনি (বসুন্ধরা কিংসের) পাশাপাশি আরেকটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, যেটি (ক্লাবের সঙ্গে) সাংঘর্ষিক এবং ক্লাবের স্বার্থের সঙ্গে যায় না। আমি এর অংশ হতে চাই না। গত বছরই বিষয়টা আমার কাছে স্পষ্ট হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে চুক্তি নবায়ন না করার আলোচনার সময় ক্লাব সভাপতিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি।

প্রশ্ন

আপনার চলে যাওয়ার একমাত্র কারণ কি এটাই?

অস্কার: হ্যাঁ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ ছাড়া আমি মনে করি, আমরা আমাদের সাফল্যের সীমা স্পর্শ করে ফেলেছি। আমরা যা–ই অর্জন করেছি, সেটাকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়াটা সহজ হবে না।

প্রশ্ন

এত সাফল্য, তা–ও চলে যেতে হবে কেন?

অস্কার: একটা ক্লাবে কোচের কাজের সীমা সাধারণত দু-তিন বছর হয়। আমার ছয় বছর হয়ে গেছে। ক্লাবকে এখন এগিয়ে যাওয়ার নতুন পথ ঠিক করতে হবে। আমিও আমার ক্যারিয়ার সামনে এগিয়ে নিতে চাই। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এখন আমাকে সরে যেতে হবে।

প্রশ্ন

বাংলাদেশকে কতটা মিস করবেন?

অস্কার: অবশ্যই করব। এখানে অনেক ভালো বন্ধু হয়েছে আমার। যাঁরা আমাকে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। গত ছয় বছরে বাংলাদেশের মানুষ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে আমার দারুণ সখ্য গড়ে উঠেছে। ইউরোপের চেয়ে পুরো ভিন্ন সংস্কৃতিতে কীভাবে কাজ করতে হয়, সেটা শিখেছি এখানে। এটি আমার ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে কাজে লাগবে। কিংসের দলীয় ঐক্যটাকে বেশি মিস করব। খেলোয়াড় ও কোচদের নেতৃত্ব দেওয়া, আমরা একসঙ্গে যা অর্জন করেছি—সবই মনে পড়বে। বাংলাদেশিদের আতিথেয়তা ও ভালোবাসা ভুলব না।

কিংস–অধ্যায় শেষ অস্কার ব্রুজোনের
প্রশ্ন

নতুন কোনো প্রস্তাব আছে আপনার সামনে?

অস্কার: আছে, কিন্তু আপাতত তা নিয়ে ভাবছি না। পরিবারকে সময় দিতে হবে। কয়েক সপ্তাহ পর আমি প্রস্তাবগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করব। ১৩ বছর ধরে আমি কাজ বন্ধ করিনি। এই ছয় বছরে কিংসের জন্য আমার চেষ্টার কমতি ছিল না।

প্রশ্ন

বাংলাদেশের কোনো ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেলে কাজ করবেন?

অস্কার: এখন এসব মাথায়ই আনছি না। দেখা যাক, সামনে পরিস্থিতি কী হয়। তবে অবশ্যই আমি দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি না। সেটা এখানেই হোক বা অন্য কোনো দেশে।

প্রশ্ন

এত দিনের কর্মস্থল ছেড়ে চলে যাবেন। বিদায়বেলায় কেমন লাগছে?

অস্কার: আমি এখানে যা অর্জন করেছি, তার জন্য গর্বিত। বিদায় বলা সব সময়ই কষ্টের। আমি অবশ্য নিশ্চিত যে বিদায় নেওয়ার এটিই সঠিক সময়। আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। ক্যারিয়ার চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেব।