আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তামিমের হঠাৎ অবসরের কী কারণ? এটা কি ঝোঁকের বশে নেওয়া সিদ্ধান্ত, নাকি অনেক অভিমানের বহিঃপ্রকাশ? ক্রিকেট বোর্ড কীভাবে নিচ্ছে ওয়ানডে অধিনায়কের এই অবসর? বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন উৎপল শুভ্র—
উৎপল শুভ্র: কেমন আছেন?
নাজমুল হাসান: আর আছি! যা শুরু হয়েছে না, নাটক, আর ভালো লাগে না। অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম।
শুভ্র: তামিমের হঠাৎ করে এমন অবসর তো আগের সবকিছু ছাড়িয়ে গেল, তাই না?
নাজমুল: চিন্তা করেন, একটা সিরিজ চলছে। ওর যদি এ রকম কোনো প্ল্যান থাকে, আলাপ করতে অসুবিধা কোথায়? আমার সঙ্গে তো রোজই কথা হয়। কাউকে না জানিয়ে এ রকম করব, এই মানসিকতা থেকে ওরা বের হবে কবে! মানে এটা করে ওদের কী লাভ হয়, আমি বুঝি না। আমার মাথায়ই ঢোকে না।
শুভ্র: রাতে যখন তামিম পরদিন সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছেন, তখনই তো এমন একটা কথা ছড়িয়ে পড়েছিল। আপনি কি একদমই টের পাননি?
নাজমুল: আমি চট্টগ্রামে খেলা দেখে রাত দেড়টায় ঢাকায় এসেছি। আমার সঙ্গে তিন দিন আগে যখন ওর কথা হয়, আমি স্কোয়াড নিয়ে জানতে চেয়েছি, ও বলেছে সব ঠিক আছে। তারপর আবার কালও যখন গেছি, টিমের সঙ্গে বসেছি ১০ মিনিট, বেস্ট অব লাক বলে-টলে আমি খেলা দেখলাম। রাতে চলে এলাম। আসার পরে আমাকে বলা হলো, ও একটা প্রেস কনফারেন্স করতে পারে।
সঙ্গে সঙ্গে জালাল ভাইকে (ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান) ফোন দিলাম। তিনি ধরলেন না। সকালবেলা জালাল ভাই ফোন করার পর বললাম, এটা কী? কী নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করবে? তিনি বললেন, জানি না তো। যা–ই হোক, আমি ভেবেছি, ও বলবে, আমি ফিট না, সামনের দুইটা ম্যাচ খেলব না। কিন্তু ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেবে বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলবে না, এটা আমার মাথায়ই আসে নাই। কারণ, ও আমাকে কয়েকবার বলছে, ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আমারে নিজে বলছে যে ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত খেলবে।
শুভ্র: হ্যাঁ, তামিম আমাকেও বলেছিলেন, ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত খেলবেন।
নাজমুল: তারপর ওর হাবভাবে বুঝছিলাম যে, ও বোধ হয় বিশ্বকাপের পরে না–ও খেলতে পারে। এটুকুই জানি, আর কিছু জানি না, এই তো...এখন আমি কী বলব বলেন। এগুলো করে কী লাভ হয়, আমি জানি না, নিশ্চয়ই কোনো লাভ হয়। নইলে ওরা এমন করবে কেন। তুমি যদি ক্যাপ্টেন্সি না–ই করতে চাও, বসো না একবার, কথা বলতে অসুবিধা কী! ও যদি বসে বলত, ক্যাপ্টেন্সি করতে না চাইত, জোর করে খেলাতে পারতাম!
শুভ্র: ওয়ার্ল্ড কাপ পর্যন্ত অধিনায়ক হিসেবে তামিমের বিকল্প কোনো চিন্তা কি ছিল আপনাদের?
নাজমুল: ক্যামনে থাকবে! থাকার তো কারণও নাই। সবচেয়ে আশ্চর্য কাহিনি হলো, ও অবসরের কথা বলার পরেও আমি ওকে পাচ্ছি না। আমি ওর ভাই নাফিসকে মেসেজ দিলাম, দেখো, ও যা–ই করেছে, ইমোশনালি করে ফেলেছে, এই সিরিজটা অন্তত খেলুক। সিরিজটা শেষ করুক, তারপর আমাদের সঙ্গে বসে লেটস্ ডিসকাস। নাহ্, কোনো খবরই নাই ওদের।
শুভ্র: তামিম পর্যন্ত পৌঁছেছে আপনার এই কথা?
নাজমুল: তা তো নিশ্চয়ই পৌঁছেছে।
শুভ্র: কোনো উত্তর নাই?
নাজমুল: কোনো উত্তর নাই, কিছু নাই। আমি বুঝতে পারছি না হঠাৎ করে কী হয়ে গেল, যেটা আমিই জানলাম না। তিন দিন আগে ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। কাল কথা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ওই একটা ঘটনা। আমাকে কয়েকজন সাংবাদিক ফোন দিল পরশুদিন। ফোন করে বলল যে, কী ব্যাপার, একটা প্লেয়ারের ইনজুরি থাকতে পারে না? তাকে জোর করে খেলাচ্ছেন। আমার রাগ উঠে গেল। বললাম, এটা হতেই পারে না, কাকে জোর করে খেলানো হচ্ছে? তো বলল যে, একটু আগে তামিম এই কথা বলেছে। তো এটা শুনে আমি আরও রাগ হয়েছি। আরে তামিম বলল, ও ফিট, ও খেলবে। তারপর আমি আবার ফিজিওকে জিজ্ঞেস করেছি। বলছে, একদম ফিট। তারপর ও খেলার আগের দিন বলছে, ও ইনজুরড, ফিট না।এটা কী হিসাবে বলল, কী বুঝাইতে চাইল। এটা মিডিয়াকে বলে লাভ কী? মানে এটা একটা আশ্চর্যের জিনিস না? আপনি আমাদের বলছেন আপনি ফিট, পাস করছেন সব, আবার আপনি মিডিয়াতে খেলার আগমুহূর্তে বলছেন, আপনি ফিট না, তবু খেলছেন। এটা কিছু হলো!
আমার কথা হলো, তামিম–সাকিব–মুশফিক–রিয়াদ–মাশরাফি এরা হলো বাংলাদেশের লিজেন্ডস। এদেরকে ভবিষ্যতে সবাই ফলো করবে। এরা কী শেখাতে চাচ্ছে? কী রেখে যাচ্ছে এক্সাম্পল? একজন না, একের পর এক সবাই করছে। রিয়াদ খেলার মাঝখানে কথা নাই বার্তা নাই ওইখানে গিয়া বলল, আমি রিটায়ার করে ফেললাম। মুশফিক হঠাৎ করে বলে দিল, আমি টি-টোয়েন্টি থেকে রিটায়ার করলাম। মানে আমি বুঝতে পারছি না, হোয়াটস গোয়িং অন? এতে কী লাভ হচ্ছে জানি না। যাই হোক, অনেক দিন ধরে প্ল্যান করেই করছে।
শুভ্র: আমি যেটা শুনেছি, এই আলোচনাটা ফিজিও ও হাথুরুসিংহের সামনেই হয়েছে। তামিম বলেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, আমি পুরোপুরিই ফিট, আমি পারব, তবে পু্রো ম্যাচ না খেললে পরিষ্কার বুঝব না, যেহেতু অনেক দিন আমি খেলি না।’ তবে আপনি যেভাবে বলেছেন, তাতে আমার ধারণা, তামিম খুব আহত হয়েছেন...
নাজমুল: আমাকে যতবার যতজন বলবে, আমি একই রিঅ্যাকশনই দেব। আপনি আমাকে একটা সিম্পল জিনিস বলেন, হি ইজ দ্য ক্যাপ্টেন। ও কবে জানাবে আমাদের? ইন্ডিয়া সিরিজে বলল, সে খেলবে না, ফিট না, ভালো কথা। কোনো সমস্যা হয়েছে? এই যে আফগানিস্তানের টেস্ট। ও বলেছিল, আমি খেলব। আমাকে বলেছে। পরদিন অ্যানাউন্স করছে, ওর নাম নাই। কোচকে বললাম, কী হলো, ও নাই কেন? বলে যে, সে বলেছে খেলতে পারবে না। কোনো কথা বলি নাই। আপনি আমার জায়গায় নিজেকে চিন্তা করেন। আমরা কি এখন খেলার দিন ঠিক করব, কে খেলবে আর কে খেলবে না? আমার কাছে এসে বলবে সে ফিট আছে, মিডিয়ায় বলবে ফিট না, এই মেসেজটা দিয়ে সে কী বোঝাতে চাচ্ছে? জোর করে খেলাচ্ছি আমরা ওকে?
শুভ্র: একটা নিউজ দেখলাম, যেখানে তামিম বলেছেন, ‘আপনাকে একটা জিনিস দেওয়ার পর যদি ফিলিংস দেওয়া হয় সব সময় যে ফিরিয়ে নেওয়া হবে বা অন্য কাউকে দিলে ভালো, তাহলে তো আপনার অপমান লাগবেই।’ ওর একটা অভিমান ছিল, ওর ক্যাপ্টেন্সিটা অ্যাপ্রিশিয়েটেড হয়নি..
নাজমুল: কী করলে অ্যাপ্রিশিয়েটেড হয়? ওরা যখন ভালো খেলে, জেতে, আমরা ভালো বলি। কী করলে অ্যাপ্রিশিয়েটেড হয়? ওরা অবশ্য ভালো বলতে পারবে। আমি জানি না। আই হ্যাভ নো আইডিয়া।
শুভ্র: আপনার কি মনে হচ্ছে, নানা বিষয় নিয়ে চাপ তৈরি হচ্ছিল, এর সঙ্গে ইনজুরি, এরপর আপনার ওই কথাটা একটা ট্রিগার পয়েন্টের মতো কাজ করেছে?
নাজমুল: বিন্দুমাত্রও না। আবার বলছি, যতবার এমন পরিস্থিতি আসবে, যেকোনো প্লেয়ার, যদি সে মনে করে খেলার দিন সে ডিসাইড করবে খেলবে কি খেলবে না, এগুলো চলবে না। আইদার ইউ আর ফিট, অর নট ফিট। ইফ ইউ আর ফিট ইউ আর ইন দ্য স্কোয়াড, ইফ ইউ আর নট ফিট ইউ আর নট ইন দ্য স্কোয়াড, দিস ইজ দ্য মেসেজ ফর এভরিবডি। আমার মনে হয় না পৃথিবীর এমন কোনো দেশ আছে এটার ব্যত্যয় করে। এটার কারণে কেউ ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিতে পারে বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না।
শুভ্র: তামিমের প্রেস কনফারেন্স টিভিতে দেখেছেন?
নাজমুল: লাস্ট মোমেন্টে দেখেছি।
শুভ্র: সত্যি করে বলেন তো কেমন লেগেছে আপনার, হি ওয়াজ ক্রাইং…
নাজমুল: আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কান্নারই বা কী হইল। তারে তো কেউ বসতে বলে নাই, করতেও বলে নাই। নিজে থেকে করেছে, কাঁদছে কেন? আর এখন গায়েব হয়ে গেছে কেন? এত দিন না হয় ভাবছে, আমরা আটকাতে চেষ্টা করব যাতে না করে। এখন করেই ফেলছে। এখন ফোন বন্ধ করে রাখছে কেন? খুবই দুঃখজনক। যা–ই হোক, আমার কথা হলো, তামিম–সাকিব–মুশফিক–রিয়াদ–মাশরাফি এরা হলো বাংলাদেশের লিজেন্ডস। এদেরকে ভবিষ্যতে সবাই ফলো করবে। এরা কী শেখাতে চাচ্ছে? কী রেখে যাচ্ছে এক্সাম্পল?
একজন না, একের পর এক সবাই করছে। রিয়াদ খেলার মাঝখানে কথা নাই বার্তা নাই ওইখানে গিয়া বলল, আমি রিটায়ার করে ফেললাম। মুশফিক হঠাৎ করে বলে দিল, আমি টি-টোয়েন্টি থেকে রিটায়ার করলাম। মানে আমি বুঝতে পারছি না, হোয়াটস গোয়িং অন? এতে কী লাভ হচ্ছে জানি না। যাই হোক, অনেক দিন ধরে প্ল্যান করেই করছে। ও খুশি থাকলে আমরা খুশি। আমাদের কাছে ভাল্লাগে নাই। আমার কাছে তো না-ই। অ্যাট লিস্ট ওয়ার্ল্ড কাপ পর্যন্ত ওকে দরকার ছিল।
শুভ্র: ওয়ার্ল্ড কাপে কে হচ্ছেন ক্যাপ্টেন?
নাজমুল: জানি না। বসে ঠিক করতে হবে। আমার মাথাতেই ঢুকছে না। জানি না। বিলিভ মি, আমি জানি না।