‘আমার ভেতরে কিছু নিশ্চয়ই আছে’

নাসুম আহমেদ: অবশ্যই বিরাট ব্যাপার আমার জন্য। শুরুটা টি-টোয়েন্টি দিয়ে হলেও ওয়ানডেতে সুযোগ করে নেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশ্বাস ছিল দলে জায়গা করে নেওয়ার। শেষ পর্যন্ত হয়েছে। সেদিক থেকে সন্তুষ্ট। আমার ভেতর যদি কিছু না থাকত, তাহলে আমি পারতাম না। ভেতরে কিছু নিশ্চয়ই আছে, তাই পেরেছি। তবে এখনো অনেক দূর যাওয়া বাকি।

নাসুম: অবশ্যই দেশকে ভালো এমন কিছু এনে দিতে চাইব, যা আগে হয়নি। আমার মনে হয়, সেটা সম্ভব।

নাসুম: নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই। কারণ, আমি যদি বলি, আমি ৯ ম্যাচে ২০টি উইকেট নিতে চাই, তাহলে এটা আমার মাথায় কাজ করতে থাকবে। ম্যাচের সময় আপনাকে এর চেয়েও বড় লক্ষ্য নিয়ে খেলতে হয়, সেটা হচ্ছে দেশের জন্য খেলা। তখন ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে ভাবলে হবে না। দল ভালো করলে সেই দলের অনেকের ব্যক্তিগত অর্জন ভালো থাকে।

নাসুম: আমি আসলে অ্যাটাকিং, ডিফেন্সিভ, কম্পিটিশন— এসব ভাবি না। আমার চিন্তা খুব সহজ–সরল। আমি খেলতে নেমেছি, আমাকে ভালো খেলতে হবে। আর তাইজুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া, এটা শুনতে আমি খুবই অপছন্দ করি। তিনি প্রায় ৫০টি টেস্ট খেলে ফেলেছেন, ২০০–এর কাছাকাছি তাঁর উইকেট। আমার ক্যারিয়ার সবে শুরু। তুলনাটা অমূলক। দলে যখন তাইজুল ভাইয়ের দরকার হবে, তখন তিনি খেলবেন। আমার দরকার হলে আমি...সিম্পল।

নাসুম: আমি নিজের সেরা ক্রিকেটটা খেলি যখন একদম ফ্রি মাইন্ডে থাকি। সে অবস্থায় যাওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ অবশ্যই। আমার চেষ্টা থাকে আমি যেন নিজেকে সে অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি। সবারই একটা প্রক্রিয়া থাকে, এটাই আমার প্রক্রিয়া।

নাসুম: আমি সবকিছুতে একটু সময় নিই যেমন ম্যাচের আগে ওয়ার্মআপের জন্য অন্যদের চেয়ে বেশি সময় নিই। একটু বেশি সময় নিয়ে বোলিং করি। নিজেকে প্রস্তুত করতে যতটা সময় লাগে তা নিই। আমার যদি মনে হয় সারা দিন বোলিং করা দরকার, সারা দিন হাত ঘুরাব। তবে আমি প্র্যাকটিস–নির্ভর খেলোয়াড় নই। প্র্যাকটিসে আমি যত ম্যাচের পরিস্থিতি কল্পনা করে বোলিং করি না কেন, সেটা কখনোই ম্যাচের মতো হবে না। যেমন ধরুন আমি ম্যাচে গিয়ে দেখলাম প্রতি বলেই বড় বড় টার্ন পাচ্ছি, কিন্তু প্রতিটি বলেই আমি টার্ন করাব? অবশ্যই নয়। সেখানে আমাকে বৈচিত্র্য আনতে হয়।

নাসুম: টার্নিং উইকেট আমার পছন্দ নয়। যে উইকেটে পেসাররা ভালো করবে, ওই উইকেট আমার পছন্দ। আমি জানি, ওই উইকেটে ব্যাটসম্যানরা আমাকে মারতে চাইবে।

নাসুম: না। ভালো উইকেটে বল করতে মজা লাগে। ওয়ানডেতে ভালো বোলিং করলেও এক-দুই করে ৩০-৩৫ রান হয়ে যায়। যখন ব্যাটসম্যান মারার চেষ্টা করে, তখন আসল চ্যালেঞ্জটা আসে। তখন আপনাকে অনেক কিছু ভাবতে হয়। মাথা খুলবে তখনই যখন ব্যাটসম্যানরা আপনাকে টার্গেট করবে। ওরা ডট কম দিতে চায়। তখন বোলার হিসেবে যে পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়, সেটা রোমাঞ্চকর।

নাসুম: আমার চিন্তাটা আলাদা হতে পারে। আমি চিন্তা করি কীভাবে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানো যায়, সে চিন্তা থেকেই বোলিংয়ে গতির বৈচিত্র্য যোগ করি। এটি এসেছে ম্যাচ খেলতে খেলতে। যত খেলেছি তত বুঝেছি কীভাবে পার্থক্য সৃষ্টি করা যায়। ভুল হবে, তবে সে ভুলটা নিজেরই ধরতে হবে। এরপর শিখতে হবে।

নাসুম: যারা মারতে চায়, তাদের আটকানো আমার জন্য তুলনামূলক সহজ। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান যখন আমাকে দেখে, তখন সে মনে করে এ ওভারেই ১০-১৫ রান আসবে। যেভাবেই হোক, সে সুযোগ নেবে। ও আমাকে মারবে, আর আমি কি শুধু মার খেতে থাকব? আমি ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করব। আমার বেশির ভাগ উইকেটই কিন্তু বাঁহাতি ব্যটসম্যানদের।

নাসুম: নতুন বলে আমি একটু সুবিধা পাই। বল স্কিড করে। বলটা সুন্দরভাবে হাত থেকে বের হয়। নতুন বলে আমি যা মনে চায় তা করতে পারি।

নাসুম: মাত্র দুজন ফিল্ডার বাইরে থাকে, সে সময় বাউন্ডারির জন্যই খেলে ব্যাটসম্যানরা। তখন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে খেলার জন্য দু-একটা ইয়র্কার মারা হয়। সে যেন ব্যাট তোলার আগে দুবার চিন্তা করে যে আমি শেষ মুহূর্তে লেংথ বদলে ইয়র্কার মারতে পারি। সে যেন বোঝে যে আমি এক রকম বল করি না। আস্তে, জোরে, ভেতরে, স্পিনও করাই, ইয়র্কারও মারি। সে যেন প্রতি বলেই ভাবতে থাকে। এ জন্য হয়তো আমার বলে ব্যাটসম্যানরা সুযোগ কম নেয়।

নাসুম: দেখুন, আমি যদি আস্তে বল করি, আর লেংথ যদি একটু পেছনে হয়; তাহলে ব্যাটসম্যান সহজেই ব্যাকফুট থেকে পুল করবে। যদি ফুল লেংথে করি, তাহলে যেন তার ব্যাট নামার আগেই বল পড়ে চলে যায়। আমি মূলত একটা জিনিসই চাই, ব্যাটসম্যান যেন ভাবে, ও যেকোনো সময় যেকোনো বল করতে পারে।

নাসুম: এটা পছন্দ করি না। উইকেট দেখলেই অনেক আগাম ভাবনা চলে আসে। এটা বাড়তি চিন্তা যোগ করার মতো। কী দরকার? এর চেয়ে ভালো ম্যাচে প্রথম দু-একটা বল করে বুঝে নেওয়া যে কী করতে হবে।  

নাসুম: কেউ না কেউ রিড করবেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি তিন বছর। আমাকে নিয়ে স্টাডি করা হয় তা বুঝতে পারি। আমি টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে মিলিয়ে প্রায় ৫০টি ম্যাচ খেলে ফেলেছি। আমার অনেক ভিডিও আছে। ব্যাটসম্যানরা নিশ্চয়ই এখন আমার সবকিছু দেখে খেলতে নামে। সে হয়তো ভাবে যে আমি ওভারের তৃতীয় বলটা আর্ম বল করি। আমি এখন আগের ম্যাচে যদি তৃতীয় বল আর্ম বল করে থাকি, পরের ম্যাচে সেটা প্রথমেই করি। বৈচিত্র্যগুলো ওলটপালট করে দিই।

নাসুম: যতটা দল থেকে পাই। আমি ঢাকায় যখন ফার্স্ট ডিভিশন খেলি, তখন প্রতিবছর ৪০০, ৩৫০ রান করেছি। চার-পাঁচে খেলেছি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও ৩০০-৪০০ রান করেছি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও রান পাচ্ছি। আমার আসলে ব্যাটিংয়ের কোনো বেসিক নেই। মারার কোনো সৌন্দর্য নেই, ডিফেন্সের কোনো সৌন্দর্য নেই; কিন্তু রান আসে। কোনো কিছুতেই সৌন্দর্য নেই, তবে কাজ হয়ে যায়।

নাসুম: আমি দেখতে একরকম, কিন্তু আমার খেলাটা অন্যরকম। আমাকে দেখে অনেকের মনে হতে পারে আমাকে দিয়ে হবে না। কিন্তু আমি কার্যকরী।