সাঁতারু সামিউল ইসলাম
সাঁতারু সামিউল ইসলাম

সামিউলের প্রেরণা বিশ্ব সাঁতারের সাফল্য

প্যারিসে ২৬ জুলাই শুরু হচ্ছে অলিম্পিক গেমস। বাংলাদেশ থেকে এবারের অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন পাঁচ ক্রীড়াবিদ। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাইর ইকবালকে তাঁরা বলেছেন অলিম্পিককে ঘিরে তাঁদের স্বপ্ন আর রোমাঞ্চ নিয়ে। আজ তৃতীয় পর্বে থাকছে সাঁতারু সামিউল ইসলামের কথা—

প্রশ্ন

অলিম্পিকে এই প্রথমবার যাচ্ছেন। কীভাবে দেখছেন ব্যাপারটা?

সামিউল ইসলাম: অবশ্যই আমি ভাগ্যবান যে অলিম্পিকের মতো আসরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করব। অলিম্পিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর, সব ক্রীড়াবিদেরই স্বপ্ন থাকে অলিম্পিকে খেলার। আমি মনে করি, অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমি অনেক কিছু শিখব। এই অভিজ্ঞতা আমার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করবে। অলিম্পিক নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত।

প্রশ্ন

শুধুই তো শিখতে যাবেন না অলিম্পিকে, নিশ্চয়ই একটা লক্ষ্য সামনে রেখেছেন...

সামিউল: অলিম্পিকে আমার লক্ষ্য অবশ্যই ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিং করা। এখন পর্যন্ত আমার যে টাইমিং, সেটি ছাড়িয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছি, অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রশিক্ষণ নিতে বর্তমানে থাইল্যান্ডে আছেন সামিউল
প্রশ্ন

আপনি এ মুহূর্তে থাইল্যান্ডে আছেন। সেখানে কি অনুশীলনের জন্যই আছেন, না অন্য কোনো উপলক্ষে?

সামিউল: আমি ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিকসের একটা বিশেষ কোর্স করতে থাইল্যান্ডে আছি। এই কোর্সের অধীনেই প্রশিক্ষণ চলছে আমার। এর মধ্যেই অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার সুসংবাদ পেলাম। বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানাই, এই কোর্সে আমাকে পাঠানোর জন্য। প্রস্তুতিতে সহায়তা করার জন্য নৌবাহিনীকেও ধন্যবাদ।

প্রশ্ন

অলিম্পিক সামনে রেখে থাইল্যান্ডে কেমন প্রস্তুতি হচ্ছে?

সামিউল: এখানে আধুনিক সুযোগ–সুবিধার মধ্যে অনুশীলন করছি। দেশে থাকতেও আমি সারা বছর ধরেই অনুশীলন করেছি। তবে অলিম্পিক যে ধরনের প্রতিযোগিতা, তাতে শুধু অনুশীলন দিয়েই হয় না, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেওয়া জরুরি। আমি ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে আসবে। অলিম্পিক সামনে রেখে আমি নির্দিষ্ট একটা পরিকল্পনা অনুসরণ করছি।

২০২২ সালে জাতীয় সাঁতারে রেকর্ড গড়েন সামিউল
প্রশ্ন

২০১৬ সালের প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি থেকে উঠে এসেছিলেন আপনি। সাঁতারু হওয়ার ইচ্ছা কি আগে থেকেই ছিল?

সামিউল: ছোটবেলা থেকেই সাঁতার কাটতে ভালো লাগত। আমার জন্ম রাজবাড়ী জেলায়। সেখান থেকে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হই। এর আগে আসলে খেলোয়াড় হব, ক্রীড়াবিদ হব, এসব চিন্তা সেভাবে মাথায় আসেনি। প্রতিভা অন্বেষণে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সাঁতারে ক্যারিয়ার গড়েছি। সাত বছরের ক্যারিয়ার আমার। এ সময় অনেকের সহায়তা পেয়েছি। মায়ের কথা বিশেষ করে বলতে হয়, রাজবাড়ীতে আমার স্কুলের শিক্ষকদের কথাও বলতে হয়। তবে ২০১৬ সালে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির প্রথম ধাপে নির্বাচিত হওয়ার পর তিন বছরের যে প্রশিক্ষণ ছিল, সেটাতে আমি নির্বাচিত হতে পারিনি। পরে ঢাকায় একটি আন্তস্কুল প্রতিযোগিতায় আসার পর আমাদের ক্যাম্প কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমান স্যার আমাকে কী মনে করে যেন ক্যাম্পে নেন, সেটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ২০২২ সালে তো জাতীয় সাঁতারে রেকর্ড গড়ি।

প্রশ্ন

নিজেকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী করছেন?

সামিউল: থাইল্যান্ডে যে কোর্স করছি, নিজেকে আধুনিক সাঁতারের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে সেটি আমার ক্যারিয়ারে বড় একটা সুযোগ। অলিম্পিকে আমি ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে পুলে নামব। দেশে এই ইভেন্টে আমার টাইমিং ৫৬ সেকেন্ড। গত ৯ মাসে আমি টাইমিং ৫৩ সেকেন্ডে নামিয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। তবে বেশি করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে উন্নতিটা আরও দ্রুত করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।