মিরাজুল ইসলাম
মিরাজুল ইসলাম

‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন বড় অনুপ্রেরণা ছিল’

ফুটবলে হাতেখড়ি বাফুফের এলিট একাডেমিতে। গত বছর এলিট একাডেমির যে কয়জন খেলোয়াড়কে বাফুফে ক্লাবগুলোর কাছে নিলামে বিক্রি করেছে, মিরাজুল ইসলাম তাঁদের অন্যতম। প্রিমিয়ার লিগে গত মৌসুমে খেলেছেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের জার্সিতে। নেপালের সাফ অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিনশিপ ফাইনালে জোড়া গোল করে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি, হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই তরুণ ফুটবলার জানিয়েছেন ফুটবল নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা—

প্রশ্ন

নেপালে দুর্দান্ত খেলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন, ফাইনালে করেছেন জোড়া গোল। বুধবার সন্ধ্যা থেকে কি সময়টা একটু অন্যরকম যাচ্ছে?

মিরাজুল ইসলাম: সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি বিরাট কিছু যে করে ফেলেছি, সেটি বলব না। দেশকে একটা শিরোপা উপহার দিতে পেরেছি, এটিই আমার কাছে মূল। আমার কাজ গোল করা, আমি করেছি। দলকে সাহায্য করতে পেরেছি। তবে ফাইনালের পরেও বলেছি, এখনো বলছি, আল্লাহপাকের সাহায্য ছাড়া এসবের কিছুই আমার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। জীবন বা পৃথিবী বদলে যাওয়ার কিছু নেই।

প্রশ্ন

সবাই তো এখন আপনাকে চিনছে। সাফল্যের জন্য অভিনন্দিত করছে...

মিরাজুল: এটা ঠিক, একটা সাফল্য পেয়েছি। আমার নিজেরও কিছু অবদান আছে এর পেছনে। তবে আমি মনে করি, আল্লাহর রহমত না থাকলে আমি এসব অর্জন করতে পারতাম না। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধটা আমরা ভালো খেলিনি। ভারত ১–১ করে ফেলল। টাইব্রেকারে আসিফ দুটি শট আটকে বাংলাদেশকে জেতাল। ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল।

সাফ অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিনশিপ বাংলাদেশ
প্রশ্ন

ফুটবলার হতে চাইলেন কেন?

মিরাজুল: ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হতে চেয়েছি। আমার বাড়ি ঝালকাঠি, সেখানেই খেলা শুরু করি। মা–বাবা উৎসাহ দিয়েছেন। এই যে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় বাফুফের এলিট একাডেমিতে থাকছি, মা–বাবা মেনে নিয়েছেন। তাঁরা চান, আমি যেন ভালো একজন ফুটবলার হয়ে তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করি। তবে চোট পেলে ওনারা সহ্য করতে পারেন না। কিছু দিন আগে চোটে পড়েছিলাম। তখন মা বলেছিলেন, সব ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে (হাসি)। 

প্রশ্ন

ফুটবলার হয়ে উঠতে বাফুফের একাডেমি কতটা সাহায্য করেছে?

মিরাজুল: একাডেমির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এখানে ফুটবলার হিসেবে মৌলিক অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি। কিছুদিন আগে চোটে পড়েছিলাম। তখন ফিজিও সাকিব ভাই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। কোচ আলতাফ স্যার অনেক কিছু শিখিয়েছেন। রাশেদ আহমেদ স্যারের কথাও বলতে হয়। সপ্তাহ তিনেক ইংলিশ কোচ জেমস পিটার বাটলারের অধীন অনুশীলন করেও অনেক কিছু শিখেছি। 

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরাজুল ইসলাম
প্রশ্ন

ফাইনালে জোড়া গোলের একটি দুর্দান্ত ফ্রি–কিক থেকে। শটটি নেওয়ার আগে কী ভেবেছিলেন?

মিরাজুল: রাব্বি হোসেন (রাহুল) আমাকে বলল, ‘তুই গোলকিপারকে খেয়াল কর। ও ঠিক পজিশনে নেই।’ তাকিয়ে দেখি, সে ফার্স্ট বারের দিকে দাঁড়িয়ে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই দ্বিতীয় বার দিয়ে মারব।

প্রশ্ন

ফ্রি–কিক কি নিয়মিত অনুশীলন করেন?

মিরাজুল: সেট পিস নিতে আমার ভালো লাগে। ইউরোপীয় লিগের খেলাগুলোতে সেট পিস খুব মনোযোগ দিয়ে দেখি। সেগুলো অনুসরণ করে নিজেও অনুশীলন করি।

প্রশ্ন

ইউরোপিয়ান লিগের প্রসঙ্গ যখন এলই, আপনি কোন ক্লাবের সমর্থক?

মিরাজুল: আমি বার্সেলোনার অন্ধ ভক্ত। লিওনেল মেসি যখন ছিলেন, তখন তো ছিলামই, এখনো বার্সেলোনাই আমার সবচেয়ে প্রিয় দল। ওদের খেলার ধরন আমার সব সময়ই ভালো লাগে।

আবু সাঈদ ভাইয়ের মৃত্যু আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। একজন মানুষকে এভাবে গুলি করে মেরে ফেলা যায়!
মিরাজুল ইসলাম
প্রশ্ন

তাহলে আপনার প্রিয় খেলোয়াড় নিশ্চয়ই মেসি?

মিরাজুল: জানতাম, আপনি এই প্রশ্নটা করবেন। আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। তবে মেসি আমার একমাত্র প্রিয় খেলোয়াড় নন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও আমি অনুসরণ করি। কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার—সবাইকে অনুসরণ করি যেন কিছু শিখতে পারি।

কোচ মারুফুল হকের প্রশংসা করেছেন মিরাজুল
প্রশ্ন

কোচ হিসেবে মারুফুল হককে পেলেন। কেমন লাগল?

মিরাজুল: এককথায় অসাধারণ। তিনি আমাদের সবাইকে নিজেদের মতো করে খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন। এই প্রথম মারুফ স্যারের অধীন খেললাম। দারুণ একটা অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোল করার পর জার্সির ওপর শহীদদের নাম লেখা টি–শার্ট চাপিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করেছেন। আপনি তো জানতেন, এটা করলে হলুদ কার্ড পাবেন। তা–ও করলেন কেন?

মিরাজুল: জুলাই মাসে যখন অনূর্ধ্ব–২০ দলের ক্যাম্প চলছে, তখন আন্দোলন শুরু হয়। আবু সাঈদ ভাইয়ের মৃত্যু আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। একজন মানুষকে এভাবে গুলি করে মেরে ফেলা যায়! মীর মুগ্ধ তো সবাইকে পানি খাওয়াচ্ছিলেন। তাঁকেও মেরে ফেলা হলো! একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, আমিও আন্দোলনে যোগ দিই। মনটা অস্থির হয়ে থাকত। সাফের প্রথম ম্যাচে আবু সাঈদ ভাই, মুগ্ধ ভাইদের মতো শহীদদের স্মরণ করাটা দায়িত্ব মনে করেছি। আমি তাঁদের শুধু স্মরণই করেছি, ওনারা তো জীবন দিয়েছেন। তাঁদের জন্য একটা হলুদ কার্ড না হয় দেখেছি। ছাত্র–জনতার আন্দোলনই সাফে আমাদের বড় অনুপ্রেরণা ছিল।