২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দুই বছর ছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ, ওই সময়ই পালন করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব। এর আগে-পরে দুই দফায় মিলিয়ে ৯ বছর হলো নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন শেন জার্গেনসেন। তাঁর সময়ে নিউজিল্যান্ড পেয়েছে তাদের ইতিহাসের সেরা পেস আক্রমণ। বাংলাদেশের এই সফরে নিউজিল্যান্ড দলের সঙ্গে আসা জার্গেনসেন প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন কিউইদের এই পেস সাফল্যের গল্প। এসেছে বাংলাদেশের পেস বোলারদের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথাও—
এবার বাংলাদেশ বেশ উপভোগ করছেন মনে হচ্ছে?
শেন জার্গেনসেন: হ্যাঁ, অনেক পরিচিত মুখ। সবাই হাসিখুশি। এমন পরিবেশে বারবার ফিরে আসতে ভালো লাগে। ২০২১-এ যখন এসেছিলাম, তখন করোনার কারণে অনেক বিধিনিষেধ ছিল। এবার তেমন নয়। আমি এখানে প্রায় তিন বছরের মতো কাজ করেছি। অনেককেই ভালো চিনি, তাঁরাও আমাকে চেনে। খুব উপভোগ করছি।
কোচিংয়ের পাশাপাশি ট্যুর গাইডের কাজটাও করছেন তাহলে…
জার্গেনসেন: বাংলাদেশে এলে কিছু ব্যতিক্রম জিনিসের মুখোমুখি হতে হয়। আমরা সে জ্ঞান ছেলেদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। ছেলেরা যেন যতটা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে, সে চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশের কোচ থাকার সময় তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে নিশ্চয়ই দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন তাঁদের কেমন দেখছেন?
জার্গেনসেন: আমি তাসকিনকে আরও আগে থেকে দেখছি। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হলো একবার, তখন থেকেই তাসকিন ও মোস্তাফিজদের দেখছি। আমি চলে যাওয়ার পর ওরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে শুরু করে। তবে আমি থাকার সময় থেকেই ওদের দুজনকে নেটে দেখতাম। জাতীয় দলের অনুশীলনে তাঁরা নিয়মিত বোলিং করত।
প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের পেসারদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
জার্গেনসেন: দারুণ! অস্ট্রেলিয়ায় সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখুন, ইংল্যান্ডে সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ—দুটি বিশ্বকাপেই ওরা দারুণ করেছে। ওরা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই হুমকি। নতুন বলে নিয়ন্ত্রণ ও সুইংয়ে ওরা বেশ দক্ষ। ইনিংসের শেষের দিকে ইয়র্কার ও স্লোয়ার বলেও তাঁরা বেশ ধারাবাহিক। পুরো বোলিং বিভাগকে যদি দেখি, যেকোনো দলের জন্যই বড় হুমকি।
কোচ হিসেবে আপনি নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা বোলিং বিভাগের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, নিল ওয়াগনার, কাইল জেমিসন…তাঁদের হাত ধরেই নিউজিল্যান্ড দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে। এমন বোলিং আক্রমণ গড়ে তুলতে হলে কী করতে হয়?
জার্গেনসেন: অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। এ রকম পেসার উঠে আসাটা ভাগ্যের ব্যাপার। নির্বাচন একটা বড় ভূমিকা রাখে। ছেলেদের শেখার সুযোগ দিতে হবে। সে জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলিয়ে যেতে হবে। আমরা দল হিসেবে সেটাই করেছি। বিশেষ করে এই পেসারদের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সময় দিয়েছি। একটা সময় পর পারফরম্যান্স পেতে শুরু করেছি। এটা আসলে ধৈর্যের খেলা। নিউজিল্যান্ড কাজটা করেছে খুব ভালোভাবে।
বিশ্বকাপ নিয়ে কী ভাবছেন? এবার নিউজিল্যান্ড ‘থার্ড টাইম লাকি’ হতে পারবে?
জার্গেনসেন: কঠিন হবে অবশ্যই। ভারতে যেহেতু খেলা, কন্ডিশন অনেক দলকে কাছাকাছি নিয়ে আসবে। আর বিশ্বকাপ তো, যেকোনো কিছুই হতে পারে। গতবারই তো তা দেখলাম। সেমিফাইনালের দৌড়ে অনেকেই ছিল। মানিয়ে নিতে হবে, যে সুযোগ পাবেন সেটা লুফে নিতে হবে। বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হতে পারে। অনেক কিছু হতে পারে। বিশ্বকাপে অনেক দূর যেতে হলে ভালো পারফরম্যান্সের সঙ্গে ভাগ্যও লাগবে।
আহমেদাবাদে নিশ্চয়ই আরও একটি লর্ডস দেখতে চাইবেন না…
জার্গেনসেন: অবশ্যই না (হাসি)। দেখা যাক এবার কী হয়।
বাংলাদেশের কেমন সম্ভাবনা দেখেন?
জার্গেনসেন: অনেক দলের জন্য হুমকি হবে অবশ্যই। সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপ দেখুন, ওরা কিন্তু ভালো করেছে। এবারও তেমন কিছুই প্রত্যাশা করছি। দলের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশ্রণটা ভালো। কয়েকজন নতুন খেলোয়াড় এসেছে, যারা ভালো করছে। বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকাপে বড় হুমকি হবে।
নিউজিল্যান্ড আগামী নভেম্বরে দুটি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে ফিরবে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে নিশ্চয়ই…
জার্গেনসেন: হা হা হা। তেমন কিছু নয়। ওই জয়টা বাংলাদেশের জন্য দারুণ ছিল। আমাদের টেস্ট দলে যারা থাকবে, তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। এই কন্ডিশনে দুই-তিনবার সফর করেছে। ওই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই টেস্ট সিরিজে কাজে দেবে। কঠিন সিরিজ হবে।