ইন্টারভিউ কথাটা শুনলেই আফগানিস্তান দল যেন আঁতকে ওঠে। ভাষাগত সমস্যা এর একটা কারণ। তবে বড় কারণ তাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সে জন্য আলাদা করে সাক্ষাৎকার তো দূরের কথা, সংবাদ সম্মেলনেও কোচ ও অধিনায়কের বাইরে কাউকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। হামিদ হাসান এ বছরের মার্চে খেলা ছেড়ে সরাসরি জাতীয় দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। দুই গালে আফগান পতাকা, মাথায় পতাকা রঙের হেডব্যান্ড—খেলোয়াড়ি জীবনে হামিদের এমন চেহারাটা কার না মনে আছে! কাল সেই হামিদ হাসানই প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোনালেন আফগান ক্রিকেটের অতীত-বর্তমানের কিছু কথা। তবে তার আগে প্রশ্নগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন সাবেক এই আফগান ফাস্ট বোলার।
খেলা ছেড়েই কোচ হয়ে গেলেন। কেমন লাগছে?
হামিদ হাসান: উপভোগ করছি। অনেক ক্রিকেট খেলেছি। ২০০৬ সাল থেকে জাতীয় দলে। অনেকবার চোটে পড়েছি। ফিরে এসেছি। পাঁচ-ছয় বছর ধরেই চিন্তা করছিলাম, কোচ হয়ে গেলে হয়তো নিজের জন্য ভালো, দেশের জন্যও। ভালো লাগছে। এখন যারা আছে দলে, ওদের সবাইকেই চোখের সামনে বড় হতে দেখেছি, যা আমার কাজটা সহজ করে দিচ্ছে।
দলও ভালো করছে, এটাও তো তৃপ্তির?
হামিদ: হ্যাঁ, পাকিস্তান সিরিজ দিয়ে শুরু করেছি। সেখানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছি। এরপর শ্রীলঙ্কায় ২-১–এ হারলেও এখানে ২-০। পেসাররা ভালো করছে, স্পিনাররাও।
এই দলের ক্রিকেটারদের কাছে তো আপনি নায়কের মতো…
হামিদ: হ্যাঁ, তা ঠিক। আমি আফগানিস্তানের জন্য অনেক কিছু করেছি। কিছুদিন আগেই লেভেল থ্রি করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাও আছে যথেষ্ট। যখন দেখি, দল ভালো করছে, তখন মনে হয় আমি কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছি।
আফগানিস্তানে ফাস্ট বোলিং পাইপলাইন এখন কেমন?
হামিদ: সামনে আরও হামিদ হাসান, আরও ফারুকি, আরও শাপুর জাদরান দেখতে পাবেন। যারা ১৪৫–এর ওপরে বল করবে। ফজল এখন ভালো করছে। আজমত আছে। সেও ১৪৫–এ করতে পারে। প্রতিদিনই ওরা উন্নতি করছে। আশা করি, সেটা অব্যাহত থাকবে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে।
একজন সাবেক ফাস্ট বোলার হিসেবে সারা বিশ্বে আফগান স্পিনের জয়জয়কারকে কীভাবে দেখছেন?
হামিদ: আমি যখন খেলছিলাম, তখন তো সবাই ফাস্ট বোলারই ছিল। নবী ছাড়া আর কোনো স্পিনার ছিল না। এরপর রশিদ এসেছে, মুজিব খেলছে। এখন আবার ফারুকি এল, আজমতরা ভালো করছে। ফরিদ মালিকও ১৪০–এ বল করে। আমাদের এখন ওদের দেখভাল করার পালা। তাহলে দারুণ এক ভারসাম্য সৃষ্টি হবে।
আপনি যখন খেলা শুরু করেন, তখন নিশ্চয়ই ফাস্ট বোলারদের কোনো কোচ ছিল না। ফারুকিদের ভাগ্য ভালো, তাঁরা এখন আপনাকে পাচ্ছেন।
হামিদ: তা তো অবশ্যই। আমরা সবকিছু নিজে শিখেছি। ২৫ বার মাঠ চক্কর দিতে হবে। ২ ঘণ্টা বল করতে হবে। এটুকুই জানতাম। এখন তো ট্রেনার, ফিজিও, ডাক্তার আছে। ওদের খুব সহজেই সঠিক পথটা দেখাতে পারছি। ওরা শিখছেও খুব দ্রুত। আমি ওদের বারবার বলি, ‘তোমরা খুবই ভাগ্যবান। আমাদের সময় কিছুই ছিল না। টাকা, অবকাঠামো, জ্ঞান কিছুই না।’ আর এখন ওরা সারা বিশ্বে খেলছে। এখন এটা তাদের ওপর নির্ভর করছে ওরা কত দূর যাবে। ফাস্ট বোলারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী, জনেন তো? ভালো ঘুম আর ভালো খাওয়া। আমি ওদের এটাই বারবার মনে করিয়ে দিই।
আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হামিদ: পরিপূর্ণ বোলিং আক্রমণ একেই বলে। স্পিনার আছে। পেসাররাও ভালো করছে। আজমত, করিম জানাতরা ভালো অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ে ইব্রাহিম, গুরবাজরা আছে। অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার আছে। আমরা ভালো ছন্দে আছি। যেকোনো দলের জন্যই আমাদের বিপক্ষে জেতা কঠিন হবে। আমরা ২৫০ রান করলেই প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারব।
ওয়ানডে সিরিজ আফগানরা জিতেছে। নিশ্চয়ই এখন লক্ষ্য ধবলধোলাইয়ের?
হামিদ: সত্যি কথা বলতে কি, আমি খেলোয়াড় হিসেবে এসব নিয়ে ভাবতাম না। কোচ হিসেবেও তেমনই আছি। আমাদের কাল (আজ) ম্যাচ আছে, সে জন্য যা যা প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার, তা নিচ্ছি। ঠিকমতো কাজগুলো করতে পারলে হয়তো কালও ভালো ফল আসবে। সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সেটা ধরে রাখতে পারলে ভালোই হবে।
আপনার হেডব্যান্ডটা দেখছি না যে?
হামিদ: এখন আর পরা হচ্ছে না। তবে সেটা আমার সঙ্গেই থাকে। আমি চিন্তা করেছি, ফারুকিকে সেটা দিয়ে দেব। ওই হেডব্যান্ড এখন ফারুকির। সে যেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে ওই হেডব্যান্ডটা পরে। এখন ওদেরই সময়।