অ্যাথলেটিকসেও হবে সংস্কার
অ্যাথলেটিকসেও হবে সংস্কার

অ্যাথলেটিকস

‘অ্যাথলেটিকস আমার ব্যবসা নয়’ 

ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন অ্যাডহক কমিটি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে ৯টি ফেডারেশনের নতুন কমিটি। এই কমিটি কী সংস্কার করবে, কেন করবে—এসব জানতেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের এই ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার। আজ মুখোমুখি বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। 

প্রশ্ন

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ফেডারেশনগুলোয় একই পদে দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না। আপনি অ্যাথলেটিকসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দুবার। আবার কীভাবে সাধারণ সম্পাদক হলেন?

শাহ আলম: প্রথমে ছিলাম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। সম্ভবত ২০০১-০২ সালে। তখন সরকার বদল হলে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস দেশ ছাড়েন। সেই কমিটিতে আমি সহসভাপতি ছিলাম এবং আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সেটা আমার পূর্ণাঙ্গ মেয়াদ নয়। পরে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত।

প্রশ্ন

২০১০ সালে ঢাকায় এসএ গেমসের পর আপনার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদনও বেরোয়। আপনি অ্যাথলেটিকস থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হন। যে কারণে আপনাকে আবার অ্যাথলেটিকসে সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকে মানতে পারছেন না। 

শাহ আলম: আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ একটা ষড়যন্ত্র ছিল। সাংবাদিকদের আমি তখন সব ব্যাখ্যা দিয়েছি। চ্যালেঞ্জও দিয়েছিলাম, ৭-৮টি অভিযোগের একটিও প্রমাণিত হলে আমি ফেডারেশন ছেড়ে চলে যাব। আজ পর্যন্ত কোনোটাই প্রমাণিত হয়নি।

প্রশ্ন

আর বহিষ্কারের ব্যাপারটা?

শাহ আলম: আমি তখন হজে যাই। এই সুযোগে ফেডারেশনে আমার বিরোধী দু–তিনজন কাউন্সিল মিটিং ডাকে। সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কেউ কাউন্সিল মিটিং ডাকতে পারে না। ষড়যন্ত্র করেই তারা আমাকে বহিষ্কার করে। আমার বিরুদ্ধে কেউ একটা আর্থিক অনিয়মের উদাহরণ দেখাক তো দেখি। ফেডারেশনে তো সব ফাইল আছে। আমি অনিয়ম করলে এত দিনে ব্যবস্থা নিল না কেন? বিজেএমসির কর্মকর্তা হিসেবেও আমি কোনো অনিয়ম করেছি বলে কেউ দেখাতে পারবে না। 

অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম
প্রশ্ন

সাবেক এক দ্রুততম মানবীকে জড়িয়ে আপনার নামে অনেক কথাই বলছেন অ্যাথলেটিকসের কেউ কেউ। এ নিয়ে কী বলবেন?

শাহ আলম: এগুলো মিথ্যা, বানোয়াট। কমিটিতে আসতে পারেনি, এমন কেউ হয়তো এসব ছড়াচ্ছে। 

প্রশ্ন

অ্যাথলেটিকসের অ্যাডহক কমিটির কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা কথা বাতাসে ভাসছে। কমিটিতে জায়গা পাওয়া দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নাকি দুদকে মামলা হয়েছে। অ্যাডহক কমিটি গঠনে টাকাপয়সার লেনদেনের কথাও শোনা যায়।

শাহ আলম: এসব বাজে কথা। কমিটি করেছে মন্ত্রণালয়, তারা যা ভালো মনে করেছে, তা–ই করেছে। আর দুই ভাই আগেও ছিলেন অ্যাথলেটিকসের কমিটিতে। 

প্রশ্ন

অ্যাথলেটিকসের এই দ্বন্দ্ব কীভাবে দূর করবেন? 

শাহ আলম: চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে চলতে। সবার উচিত আমাকে উৎসাহিত করা। আমি দুবার সহসভাপতি, দুবার সাধারণ সম্পাদক থাকায় অনেক কিছু জানি অ্যাথলেটিকসের। রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছি। জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ১৪টি সোনা জিতেছি, ৪টি রেকর্ড করেছি। ১০০, ২০০, ৪০০ মিটার দৌড়...এসব ইভেন্ট করতাম। ৪টি সাফ গেমসে আমি কোচ ছিলাম। ৪টিতেই সোনা জিতেছি। সেরা কোচ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেডেল দিয়েছেন। আমি জানি কী করতে হবে। 

প্রশ্ন

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ভালোর চেয়ে খারাপ কথাই শোনা যায় বেশি। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

শাহ আলম: এটা ঠিক, অনেকে ফেডারেশন থেকে সুবিধা নিতে চায়। বেশির ভাগ সেক্রেটারির আর্থিক অনিয়মের বদনাম হয়। তবে আমি এসবে নেই। অ্যাথলেটিকস আমার ব্যবসা নয়। এখান থেকে আমি কিছু নিতে আসিনি।  

প্রশ্ন

অ্যাথলেটিকের মৃতপ্রায় অবস্থা অনেক দিন ধরে। এই অ্যাথলেটিকস নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? 

শাহ আলম: দ্রুতই জাতীয় অ্যাথলেটিকস করব। সেখান থেকে অ্যাথলেট বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দেব। ডিসেম্বরে ম্যারাথন করব। ফেডারেশনের নতুন সভাপতি পাকিস্তানে আছেন। তিনি ফিরলে ডিসেম্বরের শুরুতে প্রথম সভা করে পরিকল্পনা ঠিক হবে। 

দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারকে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের কমিটিতে রাখা হয়েছে
প্রশ্ন

এগুলো তো গৎবাঁধা কাজ। নতুন কী করবেন?

শাহ আলম: মিটিংয়ের মাধ্যমে ঠিক করব সব। মূল উদ্দেশ্য তো আন্তর্জাতিক পদক পাওয়া। সেটার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। এ জন্য দেশি কোচদের প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশি কোচও আনতে চাই। আর্থিক অনটনে থাকা রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করার ভাবনা আছে ।

প্রশ্ন

অ্যাথলেটিকসের গঠনতন্ত্রে কোনো বদল আসবে?

শাহ আলম: রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাউন্সিলর করতে সুপারিশ করব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে। তাঁরা এলে ভালো হবে।