মেহেদী হাসান মিরাজ
মেহেদী হাসান মিরাজ

‘আমি সব সময় সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করি’

খেলাটা পাকিস্তানে, কাল ছুটির দিনেও তাই বাংলাদেশ দলের সময় কেটেছে হোটেলে। আগের রাতের ম্যাচের ধকল কাটাতে অখণ্ড বিশ্রামে ছিলেন সবাই। তার মধ্যেই আফগানিস্তান ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ কথা বলেছেন বাংলাদেশ থেকে আসা দুই সাংবাদিকের সঙ্গে। জানিয়েছেন, কীভাবে হঠাৎ বদলে যাওয়া ভূমিকাগুলোতে সাফল্য পান তিনি—

প্রশ্ন

ম্যাচের আগের রাতেই জানতে পারেন, আপনাকে আফগানিস্তান ম্যাচে ওপেন করতে হবে। এমন সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ কী ছিল?

মেহেদী হাসান মিরাজ: আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে আমি ওপেন করতে পারব কি না। আমিও এককথায় রাজি হয়ে যাই। যেহেতু আমার বিগত দিনে কিছু অভিজ্ঞতা ছিল এই পজিশনে ব্যাট করার, বলে দিই, ‘হ্যাঁ, আমি পারব।’

প্রশ্ন

২০১৮ এশিয়া কাপ ফাইনাল এর তুলনায় অনেক বড় ম্যাচ ছিল। ভারতের বিপক্ষে সেবার ওপেন করার অভিজ্ঞতাই কি এবার আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল?

এবার এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর মিরাজের উদ্‌যাপন

মিরাজ: আমার আগের অভিজ্ঞতা ছিল যে আমি ওপেন করতে পারি। আত্মবিশ্বাসও ছিল যে আমাকে দিয়ে ওপেন করানো হলে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। ভালো করব কি খারাপ করব, তা নির্ভর করে পরিস্থিতি ও ভাগ্যের ওপর।

প্রশ্ন

জাতীয় দলে আপনার জায়গা ঠিক করা আছে। নির্দিষ্ট একটি পজিশনে ব্যাটিং করেন, বোলিং তো আছেই। এর বাইরে বিশেষ কোনো দায়িত্ব পেলে কি ভালো করার তাড়না আরও বেড়ে যায়?

মিরাজ: ক্রিকেটটা আগে দলীয় খেলা। দলের প্রয়োজনে প্রত্যেক খেলোয়াড়ই যেকোনো পজিশনে খেলতে বাধ্য। ম্যাচ জেতা দিয়ে হলো কথা। আমাদের প্রথম লক্ষ্যই থাকে বাংলাদেশ দলকে জেতানো। এ জন্য যেখানেই আমাকে খেলানো হোক না কেন, আমি খেলতে প্রস্তুত। দলের অন্য সবাইও নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত রাখে। আমিও মানসিকভাবে নিজেকে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখি।

প্রশ্ন

আপনি যখন চেনা ছকের বাইরে ভিন্ন ভূমিকায় আসেন, ধরুন আপনাকে নতুন বল দেওয়া হলো বা ওপেনিংয়ে পাঠানো হলো, এই জায়গাগুলোতে আপনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সফল। এই যে দায়িত্ব নিয়েই দরকারি কাজটি করে দেওয়া, এটা কীভাবে হয়?

নিজেকে পরের ধাপে নিতে চান মিরাজ

মিরাজ: (হাসি) আমি সব সময়ই সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করি। আমার ক্যারিয়ারের শুরুই হয়েছে ৮ নম্বরে ব্যাটিং করে। কিন্তু ওই জায়গায় ব্যাটিং করে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়, যদি না দলের ওপরের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়। সেভাবে দেখলে ওপরে ব্যাটিং করার সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য সুবিধার। যদি আমি রান করি বা ভালো খেলি, তখন হয়তো আমাকে নিয়ে সবাই চিন্তা করবে। এখন যেমন সবাই আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। নিজেকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ রকম সুযোগ পাওয়াটা ভালো।

প্রশ্ন

বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ব্যাটিংয়ে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন। ব্যাটিংয়ে আরও আগেই সিরিয়াস হলে কি এ রকম ইনিংসের সংখ্যা বাড়তে পারত?

মিরাজ: বোলার হিসেবেই অভিষেক হয়েছিল আমার। বোলিংয়েই তখন বেশি মনোযোগী থাকতাম। দলে অনেক ব্যাটসম্যানও ছিল।
তবে একসময় মনে হতে থাকল, বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও মনোযোগ বাড়াতে হবে। তাই কাজ করা শুরু করলাম। শুরুতে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার ব্যাটিং খুবই জঘন্য ছিল। যেতাম আর আউট হতাম। টেস্ট ক্রিকেটে আমার গড় ছিল মাত্র দেড়। বুঝতেই পারছেন, ব্যাটিংয়ে কী অবস্থা ছিল তখন (হাসি)।

প্রশ্ন

ব্যাটিংয়ে মনোযোগ বাড়ানোর পেছনে কি কারও উৎসাহ ছিল?

ব্যাটিংয়ে সব সময় উৎসাহ পেয়ে এসেছেন মিরাজ

মিরাজ: দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা সব সময়ই বলতেন, ‘তুই ভালো ব্যাটিং পারিস, চেষ্টা কর। তাহলে দলের যেমন ভালো হবে, তেমনি তোরও।’ আমিও সেভাবেই ভেবে নিজেকে তৈরি করেছি। ব্যাটিং ভালো করলে আমারও সুযোগ বাড়বে, দলেরও ফল বের করতে সুবিধা হবে। এর ফল এখন পাচ্ছি।

প্রশ্ন

ম্যাচের আগে আফগানিস্তানের বোলিং নিয়ে বেশি ভয় ছিল। কিন্তু ম্যাচে দেখা গেল, সম্মিলিত পারফরম্যান্সে এশিয়া কাপে নিজেদের সর্বোচ্চ রান করল বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে আপনাদের পরিকল্পনা আসলে কী ছিল?

মিরাজ: এই ম্যাচের আগে আমাদের পিঠ একদম দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। এই অবস্থায় আপনি কী করবেন? আপনি কিন্তু সর্বস্ব দিয়ে নামার চেষ্টা করবেন। আমরাও তা–ই করেছি। রশিদ, মুজিব বড় বোলার কি না, এসব আমরা ভাবনাতেই আনিনি। সবাই মন থেকে জিততে চেয়েছে এবং সবাই কিছু না কিছু করেছে।

প্রশ্ন

স্পিন খেলার ক্ষেত্রে আপনার কিছু দুর্বলতা আমরা দেখেছি। কিন্তু এই ম্যাচে স্পিনারদের ওপর চড়াও হয়ে খেললেন। রহস্যটা কী?

ভালো উইকেটে ব্যাটিং করে আনন্দ পান মিরাজ

মিরাজ: স্পিন ভালো খেলার কারণ উইকেট কিন্তু বেশ ভালো ছিল। একে বল তেমন ঘুরছিল না, সেই সঙ্গে আমরাও জানতাম, এই উইকেটে কীভাবে ব্যাটিং করতে হবে। উইকেটও আমাদের সহায়তা করেছে। যদি স্পিন–সহায়ক হতো, তাহলে হয়তো ভিন্নভাবে খেলতাম আমরা। উইকেট ভালো হওয়াতে ব্যাটিং আরও ভালো হয়েছে।

প্রশ্ন

সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে ওদের মাটিতে খেলবেন। এই ম্যাচটাকে কীভাবে দেখছেন?

মিরাজ: সুপার ফোরে আমাদের প্রথম লক্ষ্য সেরা দুইয়ে থাকা। ওই জায়গায় থাকলে আমরা ফাইনাল খেলতে পারব। সুতরাং লক্ষ্য এখন এটিই। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে সেই লক্ষ্যের দিকে আমরা এক ধাপ এগিয়ে যাব।