এ যেন এলাম...দেখলাম...জয় করলাম। মাত্র ১৮ বছরে বয়সে হঠাৎ জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন মিডফিল্ডার শেখ মোরছালিন। চলে এসেছেন ২৩ জনের মূল স্কোয়াডেও। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ছিলেন একাদশে। বেঙ্গালুরুতে চলমান ১৪তম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষেও সুযোগ পান প্রথম একাদশে। পরশু মালদ্বীপের সঙ্গে বদলি হিসেবে নেমে দারুণ নৈপুণ্যে তৃতীয় গোলটি করেছেন, জাতীয় দলে যেটি তাঁর প্রথম গোল। বেঙ্গালুরু থেকে কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের তরুণ বলেছেন তাঁর উঠে আসার গল্পও
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ৩৫ জনের প্রাথমিক দলে ছিলেন না আপনি। অথচ এখন একাদশে খেলছেন। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে না?
শেখ মোরছালিন: ১২-১৩ বয়স থেকেই স্বপ্ন দেখছি জাতীয় দলে খেলব। ওই স্বপ্ন নিয়েই এত দূর আসা। জানতাম, একদিন সুযোগ পাবই জাতীয় দলে। তবে ভেবেছিলাম, আরও দু-তিন বছর পর সেটা হতে পারে। এত তাড়াতাড়ি জাতীয় দলে ডাক পাব, ম্যাচ খেলে ফেলব, গোল করব...এতটা আসলে ভাবিনি।
জাতীয় বয়সভিত্তিক দলগুলোয় আপনি খেলেননি। বিকেএসপি থেকে বসুন্ধরা কিংস। কিংসের মূল দলে মাঝেমধ্যে খেলার সুযোগ হয়েছে। আপনার কি মনে হয়, ভিত্তিটা শক্ত করে জাতীয় দলে এলে আরও ভালো হতো?
মোরছালিন: ১২ বছর বয়স থেকে আমি ফুটবল খেলি। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১২ দলের হয়ে মালয়েশিয়ায় মগকাপে খেলেছি। বিকেএসপির হয়ে ভারতে সুব্রত কাপ খেলেছি। তারপর তৃতীয় বিভাগে খেলি আলমগীর সমাজকল্যাণ ক্লাবের হয়ে। টিমটায় মূলত বিকেএসপির ছেলেরা খেলেছে। বছর দেড়েক আগে বিকেএসপির একজন বিদেশি কোচ আমার খেলার ভিডিও পাঠান বায়ার্ন মিউনিখ একাডেমিতে ট্রেনিংয়ের জন্য। প্রাথমিকভাবে বায়ার্নের নির্বাচিত ৩৫ জনের মধ্যে ছিলাম। পরে সম্ভবত তারা ১৫-২০ জনকে সুযোগ দিয়েছিল। এখন তো জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। আমার দায়িত্ব দলে টিকে থাকা।
গত প্রিমিয়ার লিগে কিংস থেকে ধারে মোহামেডানে খেলেছেন। সাদা–কালোর জার্সিতে কিংসের বিপক্ষ গোল করে নজর কাড়েন। এবার প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় পর্বে দুটি ম্যাচে কিংসের একাদশে ছিলেন। এখন কি মনে হচ্ছে না, আরও অনেক দূর যেতে হবে আপনাকে?
মোরছালিন: অবশ্যই অনেক দূর যেতে হবে। আমি চেষ্টা করব। নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখব। সবার দোয়া থাকলে আশা করি ভালো করব। আমি নিজেও আশাবাদী, ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে যেন ভালো পারফর্ম করতে পারি।
আপনার মা বলেছেন, আপনাকে তিনি বুট কিনে দিতে চাননি। নিজের বৃত্তির টাকা দিয়ে বুট কেনেন...
মোরছালিন: হ্যাঁ, আমি পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পাই। প্রথম ছয় মাসে বৃত্তির একটা টাকা আসে। সেই টাকায় বুট কিনেছিলাম। আমি সেই বুট লুকিয়ে রাখি। এটা ২০১৪ সালের কথা। আমি কিন্তু উপজেলায় দ্বিতীয় হয়েছিলাম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়। তারপর বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে যাই সপ্তম শ্রেণিতে। বিকেএসপি থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় আছি।
এখনকার ছেলেরা তো ক্রিকেটে আসে বেশি। ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয়। আপনি ফুটবলে এলেন কেন?
মোরছালিন: আমি ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন—সব খেলতাম। কিন্তু ফুটবলটা বেশি ভালো লাগত। হলে কী হবে, বাসা থেকে খেলতে দিত না। আব্বু বিদেশে থাকতেন, আম্মু যেতে দিতেন না। ভয় পেতাম ছোটবেলায়। বাসার পাশে মাঠ ছিল। মাঠে গেলেই ভয়ে ভয়ে থাকতাম। ফুটবল খেললে ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে, সেটা জানত না তখন আমার পরিবার। ফুটবলে আমার সে রকম কোনো আত্মীয়ও নেই যে এই বিষয়গুলো জানত। এসব না জানলে কোনো মা–বাবাই খেলাধুলায় দেবে না ছেলেকে।
তারপরও ফরিদপুরে একটা ট্রায়াল দিয়ে টিকে গেলেন। সেটাই কি এগিয়ে দিল?
মোরছালিন: অনূর্ধ্ব-১২ বিভাগে ফরিদপুরে একটা ট্রায়াল হয়, পরিবারকে না জানিয়ে সেই ট্রায়াল দিয়ে নির্বাচিত হয়ে যাই। তখন পরিবার অবাক হয়েছিল। মা ভেবেছে, ছেলেকে খেলাধুলা করতে দিচ্ছি না। অথচ সে ভালো করছে। তার পর থেকেই আমার খেলার ব্যাপারে আপত্তি করেনি মা। আমিও ফুটবল খেলাটা চালিয়ে যাই।
কাকে দেখে ফুটবলে আসা?
মোরছালিন: অবশ্যই লিওনেল মেসি। তাঁকে আমার খুব ভালো লাগে। ছোটবেলা থেকেই মেসির খেলা দেখে ফুটবলে উজ্জীবিত হয়েছি।
মাত্রই বাংলাদেশ দলে এসেছেন। সামনে কী করতে চান?
মোরছালিন: বিদেশি লিগে খেলার স্বপ্ন দেখি। জানি না পূরণ হবে কি না, তবে আমি এই স্বপ্নটা দেখি। স্বপ্ন না থাকলে তো এগোতে পারব না।