সকালের নরম রোদটাই বেছে নিলেন সাকিব আল হাসান। প্লাস্টিকের দুটি চেয়ার কাঁধে তুলে নিয়ে বললেন, ‘চলেন ছাদে গিয়ে বসে কথা বলি। রোদ আছে...।’ মাগুরা শহরের সাহাপাড়ায় সাকিবদের বাসায় গতকাল সকালে সেই কথা চলল ঘণ্টাখানেক ধরে। শহরের রাস্তায় বিজয় র্যালি নিয়ে বের হওয়ার আগে তারেক মাহমুদকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী সাকিব কথা বলেছেন তাঁর রাজনীতিতে আসার কারণ, রাজনৈতিক পরিকল্পনা, ক্রিকেটার হিসেবে ভবিষ্যৎ ভাবনা এবং তাঁকে ঘিরে নানান সময়ে সৃষ্ট অনেক বিতর্কিত বিষয় নিয়েও—
নির্বাচনের মাঠে তো নেমে গেলেন। আপনার জন্য ভিন্ন এক জগৎ। এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা কেমন?
সাকিব আল হাসান: নেমেছি বলতে তো আসলে এক দিন। মনোনয়ন পাওয়া, জমা দেওয়া—এ রকম বেশ কিছু ব্যাপার ছিল। যদি বলেন ভোটের মাঠে নামা, সেটা গতকালই (গত পরশু) প্রথম। প্রথম দিনে ভালোই লেগেছে। তবে বক্তৃতা, বিশেষ করে রাজনৈতিক বক্তৃতা আমার শক্তির জায়গা নয়। ওখানে দুর্বলতা আছে। কয় দিন কথা বলতে থাকলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।
আপনার নির্বাচন করা নিয়ে মাগুরার মানুষের মধ্যে কেমন সাড়া দেখছেন?
সাকিব: যেমন আশা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি। তবে সবকিছুই প্রমাণিত হবে, যেদিন ভোট হবে। এখন যত মানুষই থাকুক, ভোটের দিন যদি মানুষ না আসে, রেজাল্টটা বোঝা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ তো খেলার মতো সবকিছুতে রেজাল্ট চায়।
শুনেছি, গত নির্বাচনেও আপনি অংশ নিতে চেয়েছিলেন। আপনার রাজনীতিতে আসার চিন্তাটা আসলে ঠিক কখন এসেছে এবং কেন এসেছে?
সাকিব: আমি সবকিছু নিয়েই অনেক চিন্তা করি, ভাবি। দেশে কিছু ঘটলে আমি ভাবি এটা কেন হলো, ওভাবে হলে তো এটা হতো না...। মানুষ টক শো করে, আলোচনা করে। এসবের রেজাল্ট পেতে হলে আসলে কী করতে হবে? টক শো, কথা, ফেসবুক স্ট্যাটাস—রিয়েল ওয়ার্ল্ডে আসলে এসবের কোনো মূল্য নেই। আপনি দেখবেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোয়ার। কিন্তু যখন কেউ ডাক দেবে, দেখা যাবে ৫-১০ জন, ১০০ জন মানুষ হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক দিক হলো মানুষকে সচেতন করা যায়। কিন্তু সেটা সেলিব্রিটি ফেস থাকলে এক রকম, সেলিব্রিটি ফেস না থাকলে আরেক রকম। এখন মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে অনেকে বিখ্যাত হয়ে গেছে। তাদের ফ্যান-ফলোয়ার আছে। ধরেন, আমার হয়তো বাংলাদেশে অনেক ফ্যান–ফলোয়ার, কিন্তু মাগুরাতে তার কয় শতাংশ? হয়তো খুবই কম। তো যদি নিজের জায়গাতেই আমাকে মানুষ পছন্দ না করে, তাহলে তো এত এত ফ্যান-ফলোয়ার থাকার কোনো অর্থ নেই। ফেসবুকে ১৫-১৬ মিলিয়ন ফলোয়ার থাকলেও আমি জানি না, তাদের মধ্যে মাগুরার কয়জন। আমি এমন একটা জায়গায় থাকি, যেখানে অনেকে হয়তো স্মার্টফোন ব্যবহার করে না। কেউ স্মার্টফোন ব্যবহার করে, কেউ বাটন ফোন ব্যবহার করে, অনেকের ফোনই নেই। তো ফোন দিয়ে উদাহরণ দিলেই দেখবেন তিনটা যুগ আছে, যাদের সঙ্গে আমাকে যোগাযোগ করতে হবে। ৮০ বছরের মানুষ থেকে শুরু করে ১০-১২ বছরের বাচ্চা ছেলেদের সঙ্গেও কথা বলতে হয়। আমি খেলাধুলা নিয়ে ছিলাম। ওই গণ্ডির বাইরে কখনো যাইনি। আমার কাছে এই জগৎ একেবারেই নতুন। এখন অনেক কিছু বুঝতে পারছি, জানতে পারছি।
রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় আপনার সেভাবে জনসম্পৃক্ততা ছিল না। সেটা তৈরি করতে গিয়ে কি কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন?
সাকিব: যেহেতু এত দিন ধরে জাতীয় দলে খেলেছি, সেটা আমাকে অনেক সাহায্য করছে। তবে সেটা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। মাঠের কৃষকের মধ্যে হয়তো ততটা নয়। তবে তাঁরাও নিশ্চয়ই চিন্তা করবেন, হ্যাঁ, সাকিব যদি আসে, মাগুরার ভালো হবে। একটা কথা আমি বলতে পারি, মানুষের উপকার করি না করি, কারও ক্ষতি তো করিনি কখনো। এই একটা সুবিধা আছে আমার (হাসি)। তাঁরা আমাকে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতেই পারেন।
রাজনীতির মাধ্যমে একটা অবস্থান তৈরি করে করলে আপনি পেশাদারভাবেই অনেক কিছু করতে পারবেন এবং সেটা সহজও। আপনার আইডিয়া, ইচ্ছা তখন গুরুত্ব পাবে।সাকিব আল হাসান
ক্রিকেট খেলা না ছেড়েই রাজনীতিতে এলেন। এটা কি ঠিক হলো? ক্রিকেটে আপনি নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, খেলা ছাড়ার পরও ক্রিকেটে আপনার একটা অবস্থান নিশ্চয়ই থাকার কথা। রাজনীতিতে আসার পর সেটা থাকবে তো?
সাকিব: আমার মনে হয়েছে, একটার শেষ দিকে এসে আরেকটা শুরু করাই ভালো। সুন্দরভাবে যদি ট্রানজিশনটা হয়...। যদি আগেরবার আমি এমপি হতাম, সেটা বেশি আগে হয়ে যেত। আমার কাছে এটাই সঠিক সময় মনে হয়েছে। আর ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে হলে সেটা রাজনীতি করেও সম্ভব। ক্রিকেটেরও অনেক বড় উন্নয়ন যদি আপনি করতে চান, সেটা রাজনীতি না করে সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কতটুকু করতে পারবেন? সর্বোচ্চ একটা একাডেমি বানাবেন, মাঠ বানাবেন। সে মাঠে কয় দিন খেলা হবে, সেটা আপনিও জানেন না। রাজনীতির মাধ্যমে একটা অবস্থান তৈরি করে করলে আপনি পেশাদারভাবেই অনেক কিছু করতে পারবেন এবং সেটা সহজও। আপনার আইডিয়া, ইচ্ছা তখন গুরুত্ব পাবে। আন্তর্জাতিকভাবে আপনি অনেক জায়গায় কথা বলতে পারবেন, যেটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমি একা কিছু করতে গেলে সেটার কোনো মূল্য নেই। একটা অবস্থান নিয়ে গেলে মূল্য থাকে। বড় কিছু করতে চাইলে এর বিকল্প নেই।
আপনি বলেছেন আপনি ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত ক্রিকেট খেলবেন। এই সিদ্ধান্ত কি চূড়ান্ত?
সাকিব: দুই বছর কেন, আমি আরও চার বছরও খেলতে পারি। সবকিছু সময়ের ওপর নির্ভর করবে। আমার বয়স এখন ৩৬। অনেক ভালো কমিটমেন্টও যদি আমি দেখাই, হয়তো আর তিন–চার বছর খেলতে পারব। না হলে দেড়-দুই বছর। আমি যে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কথা বলেছি, এটা একটা ধারণা থেকে বলেছি। এমনও হতে পারে যে পরের তিন সিরিজ আমি একদমই খারাপ খেললাম। তখন স্বাভাবিকভাবে দলই আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে না। আমার ওই অনুপ্রেরণা থাকবে না, এই বয়সে সেটা হয় না। এ জন্য বাজে পারফরম্যান্স করলে এই বয়সে অনেকে অবসর নিয়ে ফেলে। তবে আমি চেষ্টা করব যদি পারফরম্যান্স ভালো থাকে, ২০২৫ পর্যন্ত খেলতে। সেই পর্যন্ত যদি ভালো পারফর্ম করতে পারি, তাহলে আমি হয়তো আরও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারি।
মানুষ কিন্তু এখন খুব বেশি কিছু চায় না। তারা চায় একটু শান্তিতে থাকতে, কেউ তাকে বিরক্ত করবে না, কেউ তার জমিটা দখল করবে না, কেউ তাকে বাড়ি থেকে উৎখাত করবে না। খুবই সাদামাটা চাহিদা।সাকিব আল হাসান
রাজনীতি করে খেলা চালানো কঠিন হবে না? অধিনায়কত্ব নিয়ে আপনার চিন্তা কী?
সাকিব: একদমই কঠিন হবে না। আইপিএলে যদি নাম দিতাম, ফিফটি ফিফটি সম্ভাবনা ছিল আমার দল পাওয়ার। তবে আইপিএল ছাড়া বিশ্বের অন্য যে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলো আছে, সেগুলোতে এখনো আমি বললে তারা আমাকে নেবে। আমি যদি সেগুলোও ছেড়ে দিই, তাহলে অন্তত তিন মাস বের হয়ে আসবে। আর এমপি হিসেবে কাজ করতে হলে যে সারাক্ষণ এলাকাতেই থাকতে হবে, এটার দরকার নেই। ইচ্ছাটাই গুরুত্বপূর্ণ, আপনি কতটা কাজ করতে চান। মানুষ কিন্তু এখন খুব বেশি কিছু চায় না। তারা চায় একটু শান্তিতে থাকতে, কেউ তাকে বিরক্ত করবে না, কেউ তার জমিটা দখল করবে না, কেউ তাকে বাড়ি থেকে উৎখাত করবে না। খুবই সাদামাটা চাহিদা। তারা কিন্তু বলে না যে ভাই, আপনি আমাকে এসে এত টাকা দিয়ে দেন বা একটা ব্যবসা ধরিয়ে দেন। মানুষ এখন যার যার জায়গা থেকে নিজেরাই এসব করে নিচ্ছে। তারা শুধু নিরাপত্তাটা চায়। এখন জিনিসপত্রের দাম হয়তো একটু বেশি, তবে এটা শুনবেন না যে কেউ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। সবাই কিছু না কিছু করছে। তবে শিক্ষা আর চিকিৎসা নিয়ে আমার মনে হয় বড় কাজ করার সুযোগ আছে। সঙ্গে নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান বাড়ানো।
রাজনীতিতে এলেন রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া এবং সেটা সরাসরি সংসদ নির্বাচনে। আত্মবিশ্বাসটা কোথা থেকে এল যে আপনি এই কাজ পারবেন?
সাকিব: আত্মবিশ্বাসের অভাব আমার কোনোকালে কোনো কিছুতেই ছিল না। তবে রাজনীতিটাও আমি সফলভাবে করতে পারব, এটা বলছি না। আমার সেই আত্মবিশ্বাস নেই। আমার জন্য একদম অজানা জায়গা এটা। তবে আমি উপভোগ করার চেষ্টা করছি। সবার কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন সেটা আরও বেশি লাগবে আমার। আমি যখন ছোট ছিলাম, খেলায় কোচদের অনেক বেশি প্রয়োজন হতো। এখন আমার সেটা রাজনীতিতে প্রয়োজন। গাইডেন্স দরকার। রাজনীতিতে আমার কোচের অনেক বেশি প্রয়োজন। যাঁরা সিনিয়র রাজনীতিবিদ আছেন, তাঁদের কাছ থেকে সেটা চাইব।
ক্রিকেটার হিসেবে আপনার জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু এটা কি মনে হয়, সংসদ সদস্য হিসেবে মাগুরার মানুষ আপনাকে চান?
সাকিব: আমি ১০০ ভাগ অনুভব করছি যে তাঁরা আমাকে চান। তবে সেটা ভোটের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। অনেকে হয়তো ভাবছেন যে আমি এমনি এমনি নির্বাচিত হয়ে যাব। কিন্তু এটা ভেবেও যেন তাঁরা ভোটটা আমাকে দেন। আমি সবার উদ্দেশে একটা কথাই বলব—যাকেই ভোট দিন, ভোটটা দিন। সুন্দর উৎসবমুখর একটা নির্বাচন হোক। ছোটবেলায় দেখেছি ভোট মানে উৎসব। এরপর খেলার কারণে অনেক সময় এলাকায় থাকা হয়নি ভোটের সময়। তবে মনে আছে, ভোটের সময় একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হতো। আমি চাই, সেই পরিবেশ তৈরি হোক।
নির্বাচনে যেহেতু অনেক দল অংশ নিচ্ছে না, ৭ জানুয়ারির চ্যালেঞ্জ হয়তো পার হয়ে যাবেন। কিন্তু আপনার কি মনে হয়, আপনার মূল চ্যালেঞ্জ হবে ৭ জানুয়ারির পরে, যেহেতু আপনার জনসম্পৃক্ততা নেই?
সাকিব: প্রতিনিয়তই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, প্রতিটা দিনই ভিন্ন। ক্রিকেটে আপনি অনুমান করতে পারেন যে পিচ কেমন আচরণ করবে, কোন মাঠে কত রান হয়। কিন্তু রাজনীতিতে আগে থেকে অনুমান করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে মেলবোর্ন কিংবা লন্ডনের মতো আবহাওয়া (হাসি)। এক দিনে চার রকম আবহাওয়াই পেতে পারেন। হঠাৎ রোদ, হঠাৎ বৃষ্টি। আপনাকে সবকিছুর জন্য তৈরি থাকতে হবে এবং এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভালো কাজ করলে মনে হয় না বেশি সমস্যা হবে।
রাজনীতি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? আপনি কি লম্বা সময় রাজনীতিতে থাকতে চান? নাকি একবার সংসদে নির্বাচিত হলেন, এরপর আগ্রহ হারিয়ে গেল আর সরে গেলেন...
সাকিব: (হাসি) এখানকার ক্যারিয়ারটা ক্রিকেটের মতো লম্বা হলে তো ভালো। ক্রিকেটে ১৭ বছর খেলেছি মানে তো এখানে আমাকে মিনিমাম পাঁচবার-দশবার এমপি হতে হবে। আসলে লম্বা সময়ের জন্যই চিন্তা করছি। কিন্তু ভালো কাজ করতে পারলাম না, মানুষ ভোট দিল না, তখন তো আর আমি চিন্তা করেও লাভ নেই। তবে ভিশন আমার বড়ই আছে। আমি যদি ভালো কাজ করতে পারি, তাহলে মনে হয় না খুব বেশি টেনশন করতে হবে।
মাগুরায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝেছি, অনেকেই আপনাকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। আপনি ক্রিকেট খেলেন, পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। আপনি এখানে কতটা সময় দিতে পারবেন...
সাকিব: আসলে আমাকে বুঝতে হবে, আমি কতটা সময় দিলে সেটা যথেষ্ট হবে। কতটা সময় আমাকে এখানে থাকতে হবে। সেটা কি ১২ মাসই, তাহলে আমি একভাবে চিন্তা করব। তবে আমার মনে হয়, আমার অত বেশি এখানে সময় দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি যদি কাজগুলো ঠিকভাবে করে করতে পারি, সেটাই যথেষ্ট হবে। যদি মাসে অন্তত একবার এলাকায় সময় দিই, ২ মাসে এসে যদি ২০ দিন থাকি, সেটাই যথেষ্ট হবে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকাটাই জরুরি। পুরো পৃথিবী এখন চলে ফোনে, ইন্টারনেটে। মাগুরাও তার বাইরে নয়। আপনি কোথায় আছেন, সেটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন থাকবেই। কারণ, তারা তো আমাকে কাছ থেকে দেখেনি, আমার কাজের ধরনটা তারা জানে না।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশে সাকিব আল হাসান মানেই কেন দুইটা পক্ষ, আপনাকে নিয়ে সব সময়ই বিতর্ক কেন?
সাকিব: পৃথিবীতে এটা সব সময় ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। এমন কখনোই ছিল না যে কারও কোনো হেটার ছিল না। সবারই হেটার ছিল। যাঁরা একটু ওপরের পর্যায়ে যান, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথাই ধরুন। তাঁর কি এক পক্ষ? সবারই পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। চিন্তা করলে বরং সামনে এগোনোর পথে বাধা তৈরি হবে। আপনার উদ্দেশ্য যদি ভালো থাকে, আপনার যদি ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আপনাকে সোজা রাস্তা দেখে চলতে হবে। পাশ থেকে কে কী বলল, এটা শুধু আপনার গতিই কমিয়ে দেবে। এ জন্য আশপাশের মানুষেরা অনেক সময় এসব ইচ্ছাকৃতভাবেও করে।
রাজনীতিও তো একটা খেলা বা দল। এখানেও সবকিছু আছে। সেসব ম্যানেজ করাটা চ্যালেঞ্জ।সাকিব আল হাসান
ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা কি রাজনীতিতে কোনোভাবে সাহায্য করবে মনে হয়?
সাকিব: আমার তো মনে হয় ভালোভাবেই করবে। এত দিন ড্রেসিংরুমে থাকার অভিজ্ঞতা, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে কোচ, বোর্ড প্রেসিডেন্ট-ক্রিকেট অপারেশনস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মিডিয়া সামলানো, অধিনায়কের অধীনে বা কখনো নিজে অধিনায়ক—সব অভিজ্ঞতাই কাজে লাগবে। এখানে এমন অনেক পরিস্থিতি আমি দেখি আর মনে মনে বলি, এটা তো ও রকমই! আগে ক্রিকেটে ছিল, এখন রাজনীতিতে। রাজনীতিও তো একটা খেলা বা দল। এখানেও সবকিছু আছে। সেসব ম্যানেজ করাটা চ্যালেঞ্জ। তবে যেহেতু ১৭ বছর ক্রিকেট খেলেছি, ওই দিক থেকে একটা সাহায্য তো পাবই।
আপনার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় সম্পৃক্ততা নিয়ে নানান রকম প্রশ্ন, বিতর্ক আছে। আপনার ব্যবসায়ী অংশীদারদের নিয়ে বিতর্ক আছে। এ নিয়ে কী বলবেন?
সাকিব: এ নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। তবে যখন মনে হয় আমি ঠিক কাজটা করছি না, তখন আমি তা অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করি। আর সঠিক উপায়ে আপনি যদি অর্থ উপার্জন করতে চান, এটাতে কোনো সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি না।
শেয়ারবাজারে আপনার বিনিয়োগ, যাঁদের সঙ্গে শেয়ার ব্যবসায় গেছেন, তাঁদের নিয়েও প্রশ্ন আছে...
সাকিব: বিতর্ক থাকতেই পারে। শেয়ার মার্কেটে হয়তো আমার বিনিয়োগ আছে কিন্তু আমার জীবনে আমি কখনো নিজে ট্রেড করিনি। স্বাভাবিকভাবে সবকিছু আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আমার একদম জিরো আইডিয়া। ট্রেড কীভাবে করতে হয়, সেটাও জানি না। মানুষের আসলে সঠিক তথ্যটা জানা জরুরি। আমি মনে করি, মানুষকে ভুল তথ্য জানানোয় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা আছে। আপনারা তথ্য দেওয়ার কাজ, দিয়ে দেন, কিন্তু সেটা হয়তো সব সময় ভালোভাবে যাচাই–বাছাই করা হয় না। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল জিনিসগুলো এখন নিউজ হচ্ছে, অথচ আমার মনে হয় উল্টোটাই হওয়া উচিত। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে যেটা নিউজ হবে, সেটা নিয়ে পরদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হবে। আমি বলব, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটা আপনাদের একটা বড় ব্যর্থতা। এটা হতাশাজনক যে সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল কোনো ইস্যু দেখে আপনাদের নিউজ করতে হচ্ছে। আগে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে নিউজ হলে পরে সেই নিউজ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হতো, ভাইরাল হতো। এখন যে অনেক সময় সত্যতা যাচাইয়ের আগেই অনেকে নিউজ করে দেয়, সেটাই বড় সমস্যা। তবে আমি এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ, আমি মনে করি, এসবে মনোযোগ দিলে আমার ফোকাসটা হারিয়ে যাবে।
আপনার শোরুম উদ্বোধন, বিজ্ঞাপনে বেশি ব্যস্ত থাকা—এসব নিয়েও সমালোচনা আছে...
সাকিব: যার ডিমান্ড আছে, তাকেই তো ডাকবে। যার ডিমান্ড নেই, তাকে তো ডাকবে না (হাসি)।
কিছুদিন আগে আপনি দুবাইয়ে একজন বিতর্কিত জুয়েলারি ব্যবসায়ীর শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে নিজেও বিতর্কের মধ্যে পড়েছিলেন। আপনার কি মনে হয় না, এ ক্ষেত্রে আপনারও যাচাই–বাছাইয়ের দরকার আছে?
সাকিব: দেখুন, আমার এই জিনিসগুলো ঠিক করে আমার ম্যানেজার। আপনি বলতে পারেন যে ম্যানেজারেরও দায়িত্ব ছিল সবকিছু খোঁজখবর নিয়ে আমাকে জানানো। এমন অনেক সময় হয় যে আমি জানতেই পারি না যে কার শোরুম আমি উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। আমি যখন একটা জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাই, সেটার মালিক কে, এটা জানা কিন্তু সব সময় খুব একটা মুখ্য নয়। তাঁর অতীত খুঁটিনাটি বের করে যাওয়া তো সম্ভব নয়। তাহলে তো আমিও বলতে পারি, ওই ব্যবসায়ী যে এত বছর ধরে দুবাইয়ে আছেন, তাঁর যদি অতীত এত খারাপ হয়, সেটা আপনারা কেন আগে দেখলেন না? আপনারাই তো উল্টা তাঁকে ভাইরাল বানিয়ে দিলেন! আমি জানি না ওনার অতীত কী। কিন্তু উনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, সেটা আপনারা কেন আগে লিখলেন না? আমি তো ওখানে যাওয়ার পর নিউজ দেখে জেনেছি। তখন বুঝেছি, কিছু একটা সমস্যা হয়তো আছে। কারণ, তাঁকে আমি আগে চিনতাম না।
এই ঘটনা আপনার জন্য একটা সতর্কবার্তা কি না? ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই খোঁজখবর নিয়ে যাবেন?
সাকিব: আমি মনে করি না এটা কোনো সতর্কবার্তা। এতে সমস্যা কোথায়? আমি যদি সেলিব্রিটি হই, সে তো সবার জন্য সেলিব্রিটি। আমার খেলা চোর-ডাকাত, পুলিশ, সরকারি মানুষ, বেসরকারি মানুষ, বাচ্চা, বুড়ো—সবাই দেখেন। আমি সবার। এখানে আমি কাউকে বেছে নিতে পারব না। আপনারা বলছেন, উনি ক্রিমিনাল। এখন ক্রিমিনাল ধরার দায়িত্ব তো আমার নয়। তাঁকে ধরার দায়িত্বটা কার? এটা তো আপনাদেরও ব্যর্থতা যে আপনারা এত দিন তাঁকে নিয়ে নিউজ করেননি। আমরা সব এ রকম হঠাৎ করে বলে ফেলি। চিন্তা করি না মাত্রাটা কোথায় চলে যাচ্ছে।
ফেসবুকে আপনার একটা নাম হয়েছে—শোরুম আল হাসান। এটা জানেন?
সাকিব: (হাসি) দিক না, মানুষ নাম দিক। সমস্যা কী? শোরুম আল হাসান বলুক, বিজনেস আল হাসান বলুক, পলিটিশিয়ান আল হাসান বলুক, ক্রিকেটার আল হাসান বলুক। কয়জন মানুষের সামনে বা পেছনে আপনি এত বেশি পরিচয় দিতে পারবেন (হাসি)। এটা যারা বলছে বা নামটা দিয়েছে, তাদের কেউ ডাকে? আমাকে নিয়ে যে নেগেটিভ লেখেন, অনেক সময় না জেনেও লিখে দেন, আমি কিছু বলি না। কিন্তু এ রকম আর কয়জনের নিউজ আপনারা মানুষকে পড়াতে পারেন? ফেসবুকে দেখেছি, সাকিব নামের আরেকজন নাকি কী কী করেছে। সেটাও দেখি লাখ লাখ ভিউ! আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু, যেটা আমরা আগে দেখিনি। প্রথম যখন কিছু দেখবেন, সেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটিই হবে। ভারত বা অন্য কোনো দেশ হলে এসব নিয়ে কথাই হতো না। ওদের কাছে এগুলো স্বাভাবিক। ওরা এর আগে কপিল দেবকে দেখেছে, সুনীল গাভাস্কারকে দেখেছে। কিন্তু আমাদের কাছে নতুন। তবে এরপর যদি কেউ এ রকম করে, তখন আপনাদের কাছে মনে হবে এটা গ্রহণযোগ্য।
আপনি অধিনায়ক হয়েও মাঝেমধ্যে খেলা বা অনুশীলনের মধ্যেও এই কাজগুলো করেন। এতে কি দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না?
সাকিব: আমার মনে হয় না এগুলো টিমকে প্রভাবিত করে। আমি যেমন এখন দলে নেই, ওরা কিন্তু আমাকে নিয়ে চিন্তাও করছে না। এগুলো আসলে দল খারাপ খেললে তৈরি করা হয়। এ রকম কত ম্যাচ গেছে আগের দিন আমি শুটিং করেছি, অনুশীলন করিনি, পরের দিন মাঠে গিয়ে ভালো খেলেছি। তখন আপনারাও কিছু বলেননি। ওইটা যদি আমাকে অ্যাফেক্ট না করে, এটা কেন করবে? মানুষকে ভুল পথে প্রবাহিত না করাই ভালো। বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভোলাভালা। এমন অনেক মানুষ আছে, যারা অনেক বিতর্কিত প্রশ্ন আমাকেও করে। কিন্তু আমি যখন পাল্টা দুটো প্রশ্ন করি, তখন তারা বলে, আসলেই তো তা–ই। তারা নাকি এভাবে ভাবেনি। এগুলো সবই হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাফেক্ট।
বিশ্বকাপের ঠিক আগে একটা আগুনে ইন্টারভিউ দিলেন। ওই সময় ওটা ঠিক ছিল?
সাকিব: আমি এখনো মনে করি না যে সেটা আগুন গরম ইন্টারভিউ ছিল। প্রতিটা জিনিস সত্যি বলেছি। আমার মনের প্রতিটা পয়েন্ট আমি স্পষ্ট করে গেছি। ইন্টারভিউয়ে উদ্দেশ্যই ছিল এটা। আমি মনে করেছি, সবকিছু স্পষ্ট করে বিশ্বকাপে যাওয়া ভালো।
তামিমের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া নিয়েই বেশি আলোচনা। অনেকে এর পেছনে আপনার ভূমিকা দেখেন...
সাকিব: ওর বাদ পড়াতে কার কী সমস্যা হয়েছে? আর ওকে বাদটা দিয়েছে কে? কেন ধারণা হবে যে ওকে আমরা বাদ দিয়েছি? কবে কী হয়েছে, এখানে তো সবকিছু পরিষ্কার করাই হয়েছে। সাক্ষাৎকারে সব কথা আমি খুব টু দ্য পয়েন্ট বলেছি। কারও ওপরে রাগ নিয়ে নয়, কোন ব্যক্তিগত কারণে কিছু বলিনি। আমাকে যদি আবারও এই প্রশ্নগুলো করা হয়, আমি একই কথাই বলব। কারণ, সব পয়েন্টেই আমি ঠিক কথা বলেছি।
তামিমের সঙ্গে আপনার দূরত্বটা কীভাবে তৈরি হলো?
সাকিব: দূরত্ব মানুষের মধ্যে হতেই পারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তবে পাপন ভাই (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান) যখন এটা খোলাখুলি বললেন, তার আগে কোনো দিন এর প্রভাব খেলায় পড়েনি। আমাদের কোনো দিন এটা নিয়ে সমস্যা হয়নি। কখনো হতোও না।
দুজনের কি আবার এক দলে খেলা সম্ভব?
সাকিব: কেন সম্ভব নয়? হতেই পারে। আমি যদি (বিশ্বকাপের আগে) নিউজিল্যান্ড সিরিজ খেলতাম, তাহলেই তো একসঙ্গে খেলা হতো। ভবিষ্যতে যদি সে খেলে আবার আমিও খেলি, এটা না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। তাকে বাদ দেওয়ায় আমার কোনো ভূমিকা নেই, তাকে আনার পেছনেও আমার কোনো অবদান নেই। যেটা রিয়াদ ভাইয়ের (মাহমুদউল্লাহ) ক্ষেত্রেও বলেছি। উনি যখন বাদ পড়েন, আমি ক্যাপ্টেনই ছিলাম না। যখন ফিরেছেন, তখন আমি অধিনায়ক ছিলাম। কিন্তু তাঁকে আনায় আমার ভূমিকা ছিল না। যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষ, তাঁরা মনে করেছেন ওনাকে দরকার আছে। কাউকে চাইলেই বাদ দিয়ে দেওয়া যায় না। ধরুন, আমি তো রাজনীতিতে এসেছি। এখন এসেই কি আমি সব পুরোনো নেতা-কর্মী যাঁরা আছেন, সবাইকে বাদ দিয়ে দেব? একটা সিরিজ আগে যে অধিনায়ক ছিল, তাকে বাদ দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব? সে অবসর নিয়েছে সেটা তো তার সমস্যা, আমার নয়। এখানে সোশ্যাল মিডিয়ারও একটা ভূমিকা ছিল।
বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে আপনার?
সাকিব: এখনো হয়নি। নির্বাচনের পর হয়তো হবে অথবা জুম কলে কোনো এক সময় হয়ে যাবে।
বিশ্বকাপে নাসুমের সঙ্গে হাথুরুসিংহের একটা অসদাচরণের কথা উঠেছে। আপনি তো অধিনায়ক ছিলেন। জানেন কিছু এ ব্যাপারে?
সাকিব: এটা আমি দেখিনি। কাজেই আমার পক্ষে জানা মুশকিল, বলা মুশকিল। তবে আমার মনে হয় না একজন কোচ এ রকম থাপ্পড় মেরে দেবে। হয়তো রেগে গিয়ে সর্বোচ্চ একটা ধাক্কা দিয়ে কিছু বলেছে। যদি সে রকম কিছুও হয়ে থাকে, এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। কারণ, বিশ্বকাপে এটা কোনো ইস্যু ছিল না। আমরা যদি শুধু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটা জিততাম, তখন কথা অনেক কম হতো।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মাগুরার জন্য প্রথম কোন কাজটা করবেন?
সাকিব: আমার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা, বড় কোনো দেশি বা বিদেশি টিমকে নিয়ে এসে মাগুরা শহর সম্পর্কে একটা অ্যানালাইসিস করাব। ওরা পুরো মাগুরার একটা মাস্টারপ্ল্যান দেবে, যেভাবে কাজ করলে পরবর্তী ২০-৩০-৪০ বছরে মাগুরায় সুযোগ-সুবিধার কোনো ঝামেলা থাকবে না। এরপর সেটা কার্যকর করতে চাই।
আপনি বলেছেন স্মার্ট মাগুরা বানাবেন। সেটা কী?
সাকিব: ঢাকায় এখন উড়ালসেতু হচ্ছে, মেট্রোরেল হলো...এ রকম কিছু করতে সময় লাগবে। কিন্তু যখন পরিকল্পনা থাকবে, তখন কাজটা সহজ হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা যাবে। আমার একটা পরিকল্পনা পুরো মাগুরাকে বিনা মূল্যের ওয়াই–ফাই জোন করে দেওয়া। তাতে অনেক কাজের সুযোগ হবে। ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসে কাজ করতে পারবে। আমি শুনেছি, রাজশাহী খুবই সুন্দর। আমি কখনো যাইনি, তবে সে রকম একটা কিছু করা যায় কি না, চেষ্টা করব।
রাজনৈতিকভাবে আপনি কাউকে আদর্শ মানেন?
সাকিব: দেখুন, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী যা–ই বলেন বা আদর্শ, আমার সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে যত বেশি কথা হয়েছে, যতবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে, যতবার আলোচনা হয়েছে, যত দীর্ঘ সময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এর চেয়ে খুব বেশি মানুষের সঙ্গে আমার রাজনীতি নিয়ে কথা হয়নি। উনিই আমার আদর্শ। ওনার মধ্যে যে চিন্তা দেখেছি, কাজ করার যে স্পিরিট দেখেছি, এটা অসাধারণ, অতুলনীয়।
মাগুরায় আপনার আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের অনেক জনপ্রিয়তা। কিছু অভিযোগ থাকলেও মাগুরার উন্নয়নে তাঁর কাজের প্রশংসা সবাই করেন। আপনার জন্য তো এটাও একটা চ্যালেঞ্জ...
সাকিব: আসলেই উনি অনেক কাজ করেছেন। ওনাকে ধন্যবাদ। আমি যখন মাগুরায় আসি, অজপাড়াগাঁয়ে গেলেও দেখি সেখানে খুব সুন্দর রাস্তা হয়ে গেছে। আমার জন্য এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং যে ওনার এত ভালো কাজ...আমি সেটা কীভাবে এগিয়ে নেব।
মানুষ কিন্তু বলছেন, আপনি তাঁর চেয়ে ভালো কাজ করলেই কেবল তাঁদের মনে হবে আপনার রাজনীতিতে আসাটা ঠিক হয়েছে...
সাকিব: আমি যেখানে যাই, সেখানেই তো বলি আমি আরও ভালো করব। এটাও বলেছি, পাপন ভাইয়ের (বিসিবি সভাপতি) চেয়েও ভালো করব। আমি চেষ্টা করব বর্তমানে যিনি আছেন, তাঁর চেয়ে ভালো করতে। উনি যেহেতু অনেক দিন সংসদ সদস্য ছিলেন, ওনার কাছ থেকে আমার অনেক পরামর্শ নেওয়ার আছে, অনেক কিছু শেখার আছে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারলেই আসলে সামনে এগোনো সম্ভব।
খেলোয়াড় হিসেবে মাগুরার ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা?
সাকিব: যেহেতু আমি অলরাউন্ডার ছিলাম, আমি অলরাউন্ডার মাগুরাই করতে চাই। সেটা শুধু ক্রীড়া বা খেলাধুলা না, শিক্ষা-সংস্কৃতি—সব দিক থেকেই। আমি খেলার মানুষ বলে হয়তো স্টেডিয়ামে আমাকে বেশি দেখা যাবে। তবে আমি চাই, সব জায়গা থেকে উন্নতি হোক মাগুরার। মাগুরাকে যেন অন্য জেলাগুলো অনুসরণ করে।