জাতীয় দলে তাঁকে এক নম্বর স্ট্রাইকার হিসেবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দলে রেখেছিলেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। দিয়েছেন ৯ নম্বর জার্সিও। কিছু সময় মাঠেও রেখেছেন। কিন্তু সময়টা ভালো যাচ্ছে না সুমন রেজার। অবিশ্বাস্য শোনাবে, গত শনিবার শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তাঁর কোনো গোলই নেই। ২০ ম্যাচের লিগে এক ম্যাচেও বসুন্ধরা কিংসের প্রথম একাদশে জায়গা পাননি। বিদেশিদের দাপটে স্থানীয় স্ট্রাইকারদের হারিয়ে যাওয়ার দশা নিয়ে সুমন রেজার এই সাক্ষাৎকার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ হলো। অথচ আপনি এই লিগে একটা গোলই করতে পারেননি। কেন এই শূন্যতা?
সুমন রেজা: আমার লক্ষ্য ছিল গোল করা, মাঠে যথেষ্ট সময় নিয়ে খেলা। কিন্তু তাতে আমি সফল হতে পারিনি। খেলার যথেষ্ট সময় না পাওয়ায় গোল করতে পারিনি। এ জন্য আমি খুবই হতাশ।
প্রশ্ন: খেলার যথেষ্ট সময় পাননি, ঠিক আছে। তাই বলে লিগে একটা গোলও থাকবে না! কোথাও কি নিজের সামর্থ্যেই ভাটা পড়ল কি না!
সুমন: দেখেন, খেলোয়াড় খেলার সুযোগ না পেলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পারফরম্যান্স দেখানোর জায়গাটা কমে যায়। সেদিক থেকে লিগটা আমার জন্য ভালো কাটেনি। এখন পরের মৌসুমের জন্য ভাবতে হবে। দেখি কী হয়, সবার দোয়া চাই। নিজেকে ফিরিয়ে আনতে চাই মাঠে।
অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিংস ছাড়ব। ওদের তা জানিয়েও দিয়েছি। অন্য দলে টাকাপয়সা হয়তো কম পাব। তাতে সমস্যা নেই।সুমন রেজা
প্রশ্ন: কিন্তু এটা তো অবিশ্বাস্য লাগছে, এবারের লিগে একটা ম্যাচেও আপনি প্রথম একাদশে ছিলেন না!
সুমন: হ্যাঁ, এবারের প্রিমিয়ার লিগে একটা ম্যাচেও আমি একাদশে সুযোগ পাইনি। বদলি হিসেবে ১২-১৩টা ম্যাচ খেলা হয়েছে। এমনও ম্যাচ আছে, আমাকে ৮৯ মিনিটে নামানো হয়েছে। যোগ করা সময়েও নেমেছি। কোনো ম্যাচে হয়তো ৮০-৮৫ মিনিটে নেমেছি। ৬০-৭০ মিনিট খেলেছি, এমন ম্যাচও নেই এবারের লিগে।
প্রশ্ন: লিগে একটাও গোল নেই, কিংসের জার্সিতে পুরো মৌসুমেই গোল মাত্র একটা। এটা মনে পড়লে আপনার কেমন লাগে?
সুমন: খুব খারাপ লাগে। ফেডারেশন কাপে এবার কিংসের একাদশে তিনটি ম্যাচ খেলেছি। তাতে একটি গোল করেছি। এ ছাড়া স্বাধীনতা কাপে নৌবাহিনীর হয়ে খেলে তিনটি গোল করেছি। আসলে খেলার সুযোগ কমে গেলে বা সুযোগ না পেলে আত্মবিশ্বাসও কমে যায়। যিনি এই পরিস্থিতিতে থাকেন, তিনিই শুধু বুঝতে পারেন। না খেললে জায়গাটা ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: গত লিগে কিংসের হয়ে চারটি গোল করেছিলেন। এবার এত খারাপ অবস্থার কারণ কী?
সুমন: গত লিগে কিংসের হয়ে চারটি গোল করেছি। গোলে সহায়তা তিনটি। তার আগের লিগে বারিধারার হয়ে লিগে ১০টি গোল করেছি। সেই লিগে স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে আমি ছিলাম সর্বোচ্চ গোলদাতা (আবাহনীর জুয়েল রানার সঙ্গে যুগ্মভাবে)। একই মৌসুমে বারিধারার হয়ে টুর্নামেন্টে আরও তিনটি গোল করি। সহায়তা ছিল ৪-৫টি। বারিধারার ক্যাপ্টেনও ছিলাম। কিন্তু এবার আসলে সুযোগই তো সেভাবে পেলাম না। খেললে না নিজেকে প্রমাণ করা যায়! আসলে দেশি ফুটবলারদের জন্য স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাটা অপরাধ, বলতে পারেন পাপ। কথাটা বলতেই হবে।
প্রশ্ন: বড় দলে বিদেশি খেলোয়াড় থাকবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। বিদেশিকে সরিয়ে খেলা কঠিনও। বড় দলে গিয়ে বসে থাকতে হবে জেনেও ফুটবলাররা আর্থিক দিকটার কথা ভেবে যান। পরে বেঞ্চে বসে থাকেন। পারফরম্যান্স শূন্য হয়ে যায়। এটা কি জানতেন না?
সুমন: আসলে সবারই স্বপ্ন থাকে বড় দলে খেলার। টাকাও একটা ব্যাপার। আমিও তাই কিংসে যাই। কিন্তু বড় দল দেশি স্ট্রাইকারদের জন্য কঠিন জায়গা। খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। ফলে পারফরম্যান্স ধরে রাখা কষ্টকর। দিন শেষে আমি বলব, এই লিগ আমার জন্য ভালো হয়নি।
প্রশ্ন: এবারের লিগে সর্বোচ্চ ২০ গোল কিংসের স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজের। দেশিদের মধ্যে এলিটা কিংসলির সর্বোচ্চ ৮ গোল। এলিটা তো এক অর্থে বিদেশিই। চট্টগ্রাম আবাহনীর ইকবাল ও ঢাকা আবাহনীর নাবিব করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫টি করে গোল। দেশিদের অবস্থা এত খারাপ কেন?
সুমন: সুযোগ পাওয়াই আসলে বড় ব্যাপার। খেলতে পারলে হয়তো পাঁচ-ছয়টা গোল থাকত। যাঁরা খেলতে পেরেছেন, তাঁরা কয়েকটা গোল পেয়েছেন। খেলতে না পারলে সবাই হারিয়ে যাবেন।
প্রশ্ন: গোলের জন্য বড় দলগুলো বিদেশি স্ট্রাইকারের ওপরই বেশি আস্থা রাখে। তাদের তো দোষারোপ করা যাবে না...
সুমন: সব দলই জিততে চায়। তাই তারা সেরা স্ট্রাইকারই খেলাবে স্বাভাবিক। কিন্তু ওই যে বললাম, দিন শেষে বাংলাদেশে স্ট্রাইকারদের আক্ষেপের জায়গাটা বেশিই থাকে।
প্রশ্ন: দেশি খেলোয়াড়দের পায়ে গোল না থাকা মানে জাতীয় দলের জন্য বিরাট সংকট। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
সুমন: দেশি খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে হবে বেশি। আমি সেটা পাইনি, এবারের লিগে আমি আমার জেনুইন পজিশনও পাইনি। কিংস দরিয়েলতনকে খেলিয়েছে ৯ নম্বরে। আমাকে হয় লেফট সাইডে ১০ মিনিটের জন্য নামিয়েছে, নয় ডানে বা মাঝমাঠে। কিংসে গতবার আমার জার্সি ছিল ৯, এবার ৯৯। আমাকে জিজ্ঞেস করছিল ক্লাব, দরিয়েলতন আসছেন, কী করা যায়? আমিই বলেছি, ওনাকে ৯ দেন, উনি বড় খোলোয়াড়।
প্রশ্ন: এখন কী চিন্তাভাবনা, কিংসেই থাকবেন নাকি দল বদলাবেন?
সুমন: অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিংস ছাড়ব। ওদের তা জানিয়েও দিয়েছি। অন্য দলে টাকাপয়সা হয়তো কম পাব। তাতে সমস্যা নেই। আমি বারিধারায় ছয়-সাত বছর খেলছি। তখন তো চলতে পেরেছি। এখন পারব না কেন? জানি, আবাহনী বা শেখ জামালে গেলেও সুযোগ পাওয়া কঠিন। দরকার হলে মাঝারি কোনো দলে যাব।