এশিয়ান জোনাল দাবার শেষ রাউন্ডে কাল নাটকীয়ভাবে ড্র করেছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। আর এতেই পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পেয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া দাবাড়ু প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বাংলাদেশের দাবার বর্তমান অবস্থা ও বিশ্বকাপে নিজের স্বপ্ন নিয়ে—
শেষ রাউন্ডে তো আপনার প্রতিপক্ষ ছিল মনোন রেজা। তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গেও ড্র করতে হয়েছে আপনাকে।
জিয়াউর রহমান: আসলে ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলাম। খেলার আগেও বুঝতে পারিনি যে এতটা চাপে পড়ে যাব। নীড়ও (মনোন রেজা) যথেষ্ট ভালো খেলছিল। বড় কোনো ভুল করেনি। তবে জিততে হলে যে পরিমাণ পরিশ্রম করে খেলতে হতো সেই মানসিক শক্তিটা পাচ্ছিলাম না।
জিতলে নিশ্চিন্ত মনে যেতে পারতেন বিশ্বকাপে। কিন্তু ড্র করায় আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বোর্ডের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হয়েছে।
জিয়াউর: আমি রাজীবের গেমটা নিয়েও টেনশনে ছিলাম। মাঝে মাঝেই উঠে গিয়ে রাজীব কেমন খেলছে সেটা দেখছিলাম। অনলাইনে খেলা হচ্ছিল। ওর কম্পিউটারের পেছনে গিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম কেমন করছে। দেখে যেটা বুঝতে পারছিলাম যে ওই ম্যাচটা ড্রই হতে যাচ্ছে। কারণ, ওর প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার রানিনদু দিলশান খুব ভালো খেলছিল। তাই একটা আশা ছিল যে ও যদি ড্র করে তাহলে আমি ড্র করতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন হব।
আপনি প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৭ সালে। এরপর ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে খেলেছেন। ছয় বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপে খেলার আগে প্রস্তুতিটা কেমন হবে?
জিয়াউর: হাতে খুব বেশি সময় নেই। এমনিতেই গত এক বছর করোনার কারণে বাসায় বসা। সেভাবে টুর্নামেন্ট খেলিনি। তবে গেমগুলো বিশ্লেষণের সময় পেয়েছি। তা ছাড়া এ বছর প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমরা। রেটিং টুর্নামেন্ট ও বাংলাদেশ গেমসেও সোনা জিতেছি। এগুলো আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। দেশের বাইরে কেমন খেলব জানি না। চেষ্টা করব সেরাটা খেলার। আর বাসায় তো আমার ছেলে (দাবাড়ু তাহসিন তাজওয়ার) সহকারী হিসেবে আমাকে সাহায্য করবেই। এদিক দিয়ে আমি ভাগ্যবান (হাসি)। তাই আমার অনুশীলনটা ভালোই হবে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য একবারই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া। শুধু গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীব দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের কেউ এর বেশি দূর যেতে পারে না কেন?
জিয়াউর: আমরা রেটিংয়ের কারণে পিছিয়ে পড়ি। শুরুতেই র্যাঙ্কিংয়ের সেরা বিশে থাকা দাবাড়ুদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পাই। তবে এবার এটা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
কেন?
জিয়াউর: এবার নিয়মে একটু বদল এনেছে ফিদে। এতে করে সেরা পঞ্চাশের দাবাড়ুরা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে খেলবে। তাই এবার তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে দুর্বল প্রতিপক্ষ পেতে পারি। তবে অবশ্যই তারা আমাদের চেয়ে বেশি রেটেডই হবে। কিন্তু আগের চেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ হবে। আশা করি এবার দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে পারব।
বিশ্বকাপে ভালো ফল পেতে বাংলাদেশের দাবাড়ুদের কী করতে হবে?
জিয়াউর: আমরা বিশ্ব দাবায় অনেক পিছিয়ে। উন্নতির জন্য লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। টুর্নামেন্ট খেলতে হবে প্রচুর। তা–ও আমরা যেমন খেলি সেই মানের না। ইউরোপে খেলতে হবে। রেটিং বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। আমাদের ২৩০০ রেটিংয়ের আরও ১০ জন দাবাড়ু দরকার। তাহলে ওখান থেকে ২৪০০ রেটিংয়ে আরও ৫ জন উঠে আসবে। ফাহাদের (আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান) মতো আরও ৫ জন ফাহাদ তৈরি করতে হবে।
বিদেশি কোচের নিশ্চয় দরকার আছে?
জিয়াউর: আমি মনে করি দেশি কোচরাই যথেষ্ট। তবে টুর্নামেন্ট বেশি হওয়া দরকার। আমাদের প্রিমিয়ার লিগের মতো টুর্নামেন্ট দরকার। যেখানে বিদেশি ভালো ভালো গ্র্যান্ডমাস্টাররা খেলতে আসেন। বাইরের ভালো ভালো দাবাড়ুদের সঙ্গে আমরা খেলার সুযোগ পেলে আপনাতেই উন্নতি হবে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে আপনার সেরা ম্যাচ কোনটা?
জিয়াউর: ২০১৫ সালে রাশিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার ইয়েভগেনি তমাসেভস্কির সঙ্গে টাইব্রেক পর্যন্ত গিয়েছিলাম। এটাই এখন পর্যন্ত সেরা ম্যাচ।
প্রতিবার তো একাই খেলতে যান। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ থেকে আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদও সুযোগ পেয়েছেন। এটা কতটা উপকারে আসবে?
জিয়াউর: একা গেলে কোথায় যেন অজানা ভয় কাজ করত। ওর মধ্যে থেকেই চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। তা ছাড়া আমাদের কোনো কোচও থাকে না। ম্যাচ নিয়ে যে আলোচনা করব সেই লোকটাও থাকে না। এবার নিয়াজ ভাই যাচ্ছেন বলে সুবিধাই হবে। অন্তত কথা বলার সঙ্গী তো থাকবে।