১০ ম্যাচে ২২ উইকেট, ইকোনমি রেট ৬.২৫। সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে দুর্দান্ত বোলিং গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে এনে দিয়েছে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার, হয়েছেন সেরা বোলারও। তবু তাঁর আফসোস, শিরোপাটা যে জেতা হলো না! দুই দিন আগে সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগে প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাঁহাতি পেসার ফিরে তাকিয়েছেন পুরো টুর্নামেন্টের দিকেই—
প্রশ্ন: টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় আপনি, সেরা বোলারও। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক খুশি...
মোস্তাফিজুর রহমান: ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সঙ্গে যদি দলও সফল হয়, তখন বেশি ভালো লাগে। বলব না আমি খুশি নই। তবে দল চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগাটা অনেক বেশি থাকত। আমরা ১১টা ম্যাচই দুর্দান্ত খেলেছি। শুধু চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। এই একটা আফসোস থেকে গেল। দল চ্যাম্পিয়ন হলে আমার ব্যক্তিগত সাফল্যটাও বেশি করে উপভোগ করতে পারতাম।
আপনার চোখে কোথায় দলের ঘাটতি ছিল?
মোস্তাফিজ: ঘাটতি তেমন কিছু ছিল না। আমাদের দলে বয়স-অভিজ্ঞতায় কাছাকাছি কিছু খেলোয়াড় ছিল। যেমন আমি, সৌম্য, লিটন, মোসাদ্দেক, নাহিদ ভাই। এই খেলোয়াড়েরা খুব সিনিয়র নয়, আবার একেবারে তরুণও নয়। বেশির ভাগ মাঝামাঝি বয়সের। এতে আমাদের মধ্যে একতা, আন্তরিকতা, সমন্বয় খুব ভালো হয়েছে। কোচিং স্টাফরাও ভালো ছিল। ফাইনালে যে রান তাড়া করতে নেমেছিলাম আমরা, সেটা খুব কঠিন ছিল না। আসলে চ্যাম্পিয়ন হতে ভাগ্যের সহায়তাও লাগে।
আপনাদের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ফাইনালের আগে বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি হচ্ছে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের খেলা। আপনারও কি তা–ই মনে হয়?
মোস্তাফিজ: এর উত্তর দেওয়া কঠিন। যারা দীর্ঘদিন ধরে খেলে, তাদের কঠিন কঠিন মুহূর্ত পার হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে। তরুণেরা এখানে হয়তো পিছিয়ে থাকে। তবে আমার মতে অভিজ্ঞ-তারুণ্যের মিশ্রণ থাকা ভালো, যেটা আসলে খুলনা দলের ছিল। সাকিব-মাশরাফি-রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাইয়েরা যেমন ছিলেন, জাকির-শহিদুল-শামীমরাও তো ছিল।
চট্টগ্রাম দলে আপনার সঙ্গে ছিলেন দুই বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ও রুয়েল মিয়া। অভিজ্ঞ হিসেবে তরুণ পেসারদের পথ দেখানোর অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
মোস্তাফিজ: (হেসে) ভালোই লেগেছে। আমার কাছে ওরা অনেক কিছু শিখতে চায়, জানতে চায়। এটা ভালো। তারা আমার কাছে কাটারটাই বেশি শিখতে চায়। শরিফুল তো প্রায়ই শুনতে চায়, কখন কী করলে ভালো হয়। কিন্তু আমার যে শক্তির জায়গা, সেটার সঙ্গে শরিফুলের মিলবে না। ওর সুইংটা খারাপ হয় না। নতুন বল বেশ ভেতরে ঢোকে। এ জন্য ওকে নতুন বলে বোলিং করানো হয়েছে। যার যার শক্তির জায়গাটাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এরপর বৈচিত্র্য আসবে। আমি ওকে এটাই বলি, যেটা যেটা সে ভালো পারে, সেগুলো যেন আরও ভালোভাবে আয়ত্ত করে। টি-টোয়েন্টিতে মাথা ঠান্ডা রাখা আর মন খুলে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। শরিফুল একদিন খারাপ করায় আমি বলছিলাম, ‘পরের ম্যাচে বাদ পড়বি, এমন চিন্তা খেলার সময় মোটেও মাথায় আনবি না। খেলবি একেবারে মন খুলে।’
টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকজন সম্ভাবনাময় বাঁহাতি পেসার দেখা গেছে। তাঁদের দেখে কি ভবিষ্যতের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
মোস্তাফিজ: আমি যদি ভালো করতে না পারি, আমার জায়গায় যোগ্য কেউ আসতেই পারে। তবে এ রকম স্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকাটা খুব দরকার। শুধু বোলারদের মধ্যেই নয়, ব্যাটসম্যানদেরও এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে থাকতে হবে। তাহলে আমাদের দক্ষতা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি বলতে বিপিএলকেই বোঝে সবাই। আপনার কি মনে হয় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের মতো টুর্নামেন্ট প্রতিবছরই বিসিবির আয়োজন করা উচিত?
মোস্তাফিজ: শুধু স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রতিবছর এ ধরনের একটা টুর্নামেন্ট হওয়া উচিত। টুর্নামেন্টটা বিপিএলের আগে হলে খুবই ভালো হয়। এতে স্থানীয় ক্রিকেটাররা নিজেদের তৈরি করার সুযোগ পাবে। দুটি দল বাড়িয়ে যত বেশি খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দেওয়া যায়, তত ভালো।
প্রশ্ন: টেস্টের প্রতি নাকি আপনার আগ্রহ কম। এটা সত্যি হলে, ভাবনাটা কি এখন বদলেছে?
মোস্তাফিজ: আমি তিন সংস্করণেই নিয়মিত খেলতে চাই। মাশরাফি ভাই প্রায়ই বলেন, সব সংস্করণে না খেললে মানুষ মনে রাখবে না। আর টেস্ট তো টেস্টই। আমার আগে যে ভাবনাই থাকুক, সেটি থেকে বেরিয়ে এসেছি।