আজ শেষ হয়েছে মেয়েদের ফুটবল লিগ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস, রানার্সআপ নবাগত আতাউর রহমান স্পোর্টিং ক্লাব।
প্রায় প্রতিটি ম্যাচই মাঠে বসে দেখেছেন জাতীয় দলের কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। লিগ ও জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন মেয়েদের জাতীয় দলের এ কোচ।
প্রশ্ন: মেয়েদের লিগ শেষ হয়ে গেল আজ। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে লিগটা কেমন দেখলেন?
গোলাম রব্বানি ছোটন: করোনা মহামারির মধ্যেও লিগটা শুরু করে শেষ করতে পারায় বাফুফে ও ক্লাবগুলোকে ধন্যবাদ জানাই। খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। তবে খেলা শুরু করে মাঠে রাখাটাই বর্তমান সময়ে বড় চ্যালেঞ্জ। লিগ হওয়াতে মেয়েরা খেলার মধ্যে ছিল। এতে জাতীয় দল উপকৃত হবে। এটাই আমার কাছে স্বস্তির ব্যাপার।
প্রশ্ন: এককভাবে দাপট দেখিয়ে সব ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। সব মিলিয়ে আপনার দৃষ্টিতে লিগের মান কেমন ছিল?
ছোটন: গতবার শুধু বসুন্ধরা কিংস ভালো দল গঠন করেছিল। তারা একচেটিয়া খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার তারা চ্যাম্পিয়ন হলেও আতাউর রহমান স্পোর্টিং ক্লাব ভালো দল গঠন করায় দুই পর্বে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ হয়েছে। এ ছাড়া আগেরবারের চেয়ে দল বাড়ায় খেলোয়াড়েরা বেশি ম্যাচ খেলতে পেরেছে। এতটুকু বলতে পারি, আগেরবারের চেয়ে এবারের লিগের মান ভালো।
প্রশ্ন: তার মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ মাত্র দুটি?
ছোটন: দুই পর্বে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ হয়েছে বসুন্ধরা ও আতাউর রহমান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যে। নিচের দিকে থাকা কয়েকটি দলের মধ্যেও ভালো ম্যাচ হয়েছে। তবে ওই দুটিকেই তুলনামূলক ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলা যায়। অন্য দলগুলোর বিপক্ষে কুমিল্লা ইউনাইটেডও ভালো ফুটবল খেলেছে।
প্রশ্ন: ঘুরেফিরে সেই সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদেরই দাপট। লিগ দেখে জাতীয় দলের জন্য নতুন কোনো খেলোয়াড় পাওয়া গেল?
ছোটন: না। আমাদের ক্যাম্পের খেলোয়াড়েরা, যারা বসুন্ধরা ও আতাউর রহমান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেছে, তাদের বাইরে নজর কাড়ার মতো কোনো খেলোয়াড় পাইনি। নতুন করে কুমিল্লা ইউনাইটেডর কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় দেখেছি। কিন্তু তাদের ধারাবাহিকতার অভাব ছিল।
প্রশ্ন: এবার তো বিকেএসপির অনেক নতুন খেলোয়াড় বিভিন্ন দলের হয়ে খেলেছে। সেখান থেকে কাউকে চোখে পড়েনি?
ছোটন: হ্যাঁ, খেলেছে। তবে কারও খেলাই আমাদের কোচিং স্টাফদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। নতুন ফুটবলার পাচ্ছি না।
প্রশ্ন: তাহলে এই লিগ থেকে কতটুকু লাভবান হওয়া গেল?
ছোটন: মেয়েরা খেলার মধ্যে ছিল, এটাই ভালো দিক। দুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ হওয়ায় সেখানে খেলোয়াড়দের চাপ নিতে হয়েছে। পরীক্ষা দিতে হয়েছে ফিটনেসের। এগুলোই খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য সহায়ক হবে। এ ছাড়া খেলোয়াড়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তবে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ হলে লিগের মূল লক্ষ্যটা পূরণ হতো।
প্রশ্ন: কিন্তু বসুন্ধরা কিংস ছাড়া কারও মধ্যে ভালো দল গঠনের আগ্রহ নেই...?
ছোটন: বসুন্ধরাকে ধন্যবাদ তারা ভালো দল গঠন করেছে। তাদের মাধ্যমে খেলোয়াড়েরা ভালো অর্থ পেয়েছে। কিন্তু সেখানে জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কেও বসে থাকতে হয়েছে। মার্জিয়া অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে মূল জাতীয় দলে নিয়মিত খেলেছে। কিন্তু বসুন্ধরায় গিয়ে সে একাদশে খেলতে পারছে না। বদলি হিসেবেও তেমন সুযোগ পায়নি। যা-ই হোক, বসুন্ধরাকে দেখে অন্য ক্লাবগুলোও এগিয়ে আসবে আশা করি। এরই মধ্যে আতাউর রহমান স্পোর্টিং ক্লাব এসে ভালো দল গঠন করেছে।
প্রশ্ন: লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এখানে খেলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গিয়ে মেয়েরা ভেঙে পড়বে না তো?
ছোটন: কোনো সন্দেহ নেই, এখানে ধীরগতির খেলা হয়েছে। তেমন ফিটনেসের পরীক্ষা দিতে হয়নি। ম্যাচে ৮-১০ গোলে এগিয়ে থাকলে খেলোয়াড়েরা মানসিকভাবে নির্ভার থাকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে লড়াইটা তো কঠিন। সেখানে শক্ত প্রতিপক্ষের সামনে গেলে আবার সেভাবেই খেলতে হবে মেয়েদের।
প্রশ্ন: সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের জন্য বেশি সময় নেই হাতে...?
ছোটন: ২০ জুলাই থেকে ক্যাম্প। ৬ সপ্তাহ সময় পাচ্ছি আমরা। প্রস্তুতির জন্য আরও সময় পেলে ভালো হতো। বাছাইয়ের আগে বিদেশি দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে খুবই ভালো হবে।
প্রশ্ন: জর্ডান ও ইরানকে টপকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিংবা এশিয়ান কাপ খেলা সম্ভব?
ছোটন: কাজটি খুবই কঠিন। তবে আমরা তো হাল ছেড়ে বসে থাকতে পারি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি হয়েই বাছাইপর্ব খেলব আর বাছাইপর্ব যেহেতু আমাদের দেশে, এতে আমরা বাড়তি সুবিধা পাব।