সব ঠিক থাকলে অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। প্রথম আলোকে মুঠোফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গতকাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরবেন সাকিব আল হাসানও।
শ্রীলঙ্কা সফর দিয়ে বাংলাদেশ দল আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দলকে শ্রীলঙ্কা পাঠানোর সিদ্ধান্তের পেছনে কি যুক্তি কাজ করেছে?
শ্রীলঙ্কায় যেতে রাজি হওয়ার পেছনে একটিই কারণ। ওদের ওখানে নাকি গত কয়েক মাসে একজনও করোনা রোগী ধরা পড়েনি। ওরা বলছে শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাস নেই। তবে ১৫ দিন আগ পর্যন্ত আমরা জানতাম শ্রীলঙ্কার মতো নিউজিল্যান্ডও ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ। একটা সময় নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ সরিয়ে নেওয়ারও চিন্তা হয়েছিল। এখন তো নিউজিল্যান্ডে আবার লকডাউন! অস্ট্রেলিয়ার অনেক শহরের অবস্থাও আবার খারাপ হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে এখন বলা হচ্ছে নিরাপদ। সামনে কী হবে তা তো জানি না। ওখানে নাকি একদমই কোভিড ধরা পড়ছে না, এটা কীভাবে হয়! আমি শ্রীলঙ্কার করোনা পরিস্থিতির গত তিন মাসের বিস্তারিত পরিসংখ্যান জানতে চেয়েছি। এ ছাড়া আমাদের দল কোথায় কীভাবে থাকবে, দলের সঙ্গে কারা থাকবে, তারা দলের সঙ্গে যাতায়াত করবে কি না...এসবও জানাতে বলেছি। আমাদের দিক থেকে কিছু শর্ত আছে...সেগুলো তারা দিতে পারবে কি না, এগুলোও জানা হচ্ছে। ওরা দুটি শহরে খেলার কথা বলেছিল। আমরা বলে দিয়েছি এক শহরেই তিনটি টেস্ট খেলতে। এটাই চূড়ান্ত বলতে পারেন।
সিরিজ নিশ্চিত হলেও খেলোয়াড়েরা এখনো ব্যক্তিগত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয়ভাবে অনুশীলন শুরুর কি পরিকল্পনা করেছে বোর্ড?
আমরা চাইলে খেলোয়াড়দের আরও আগে মাঠে নামাতে পারতাম। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, এটা উচিত হবে না। সবার ঘরে থাকা উচিত। আমাদের ফিজিও, ট্রেনার ওদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে। বিশেষ অ্যাপ দিয়ে আমরা সার্বক্ষণিক বিসিবির অধীনে থাকা সব ক্রিকেটারের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রেখেছি। সেপ্টেম্বরের ২০-২১ তারিখে হয়তো দলীয় অনুশীলন শুরু হবে। এর সপ্তাহখানেক পর দল শ্রীলঙ্কা যেতে পারে, আবার আরও ৮-১০ দিন পরও যেতে পারে। প্রতিদিনই কথা হচ্ছে এসব নিয়ে। আমরা হয়তো চার্টার্ড প্লেনেই যাব শ্রীলঙ্কায়। কারণ, বিমানবন্দর এবং বিমান দুটোই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞা ২৮ অক্টোবর শেষ। এরপর সে খেলতে পারবে। সমস্যা একটাই-২৯ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত সাকিব দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারবে না, আমরা সেখানে গিয়ে এইচপির সঙ্গে যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলব, সেগুলোতেও খেলতে পারবে না। তবে সে এককভাবে অনুশীলন করতে পারবে। আকসুর কাছে বিসিবি এবং সাকিবও এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। দুই পক্ষকেই আকসু একই কথা বলেছে।
দেশে অনুশীলনের সময় ক্রিকেটারদের কীভাবে করোনা নিরাপত্তা দেওয়া হবে?
ইতিমধ্যেই একটি পাঁচ তারকা হোটেল আমাদের সব শর্ত মেনে নিয়েছে। হোটেলের দুটি ফ্লোর হয়ে যাবে শুধু বিসিবির। সেখানেই সবাই থাকবে, খাওয়াদাওয়া করবে। হোটেলের যেসব স্টাফ, ক্লিনার কাজ করবে; সবার করোনা পরীক্ষা হবে। তারা ওই দুই ফ্লোরের বাইরে যেতে পারবে না। ক্রিকেটাররা যে কয়দিন হোটেলে থাকবে হোটেলের সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম শুধু ওরাই ব্যবহার করব। অন্য কোনো অতিথি এগুলো ব্যবহার করতে পারবে না। তিনটি লিফটের মধ্যে একটা শুধু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। এ ছাড়া মিরপুরে অনুশীলনের জন্যও প্রটোকল হচ্ছে।
বিদেশি কোচদের আসা কি নিশ্চিত হয়েছে?
বেশির ভাগ বিদেশি কোচই এ মাসের শেষের দিকে বা আগামী মাসের শুরুর দিকে চলে আসবেন। শুধু প্রধান কোচের ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নই। আমরা যদি শ্রীলঙ্কায় বেশি আগে চলে যাই তাহলে তিনি শ্রীলঙ্কায় দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। সমস্যা হলো শ্রীলঙ্কায় আবার অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ আছে। অনেকে আসতে চাইলেও ফ্লাইট পাচ্ছে না। বাংলাদেশে ফ্লাইট আসে না। এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে।
কয়েক দিন আগে বলেছেন আপনারা সাকিব আল হাসানের অপেক্ষায় আছেন। শ্রীলঙ্কায় শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে তাঁকে?
সাকিবের নিষেধাজ্ঞা ২৮ অক্টোবর শেষ। এরপর সে খেলতে পারবে। সমস্যা একটাই-২৯ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত সাকিব দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারবে না, আমরা সেখানে গিয়ে এইচপির সঙ্গে যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলব, সেগুলোতেও খেলতে পারবে না। তবে সে এককভাবে অনুশীলন করতে পারবে। আকসুর কাছে বিসিবি এবং সাকিবও এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। দুই পক্ষকেই আকসু একই কথা বলেছে।
প্রথম টেস্ট ২৪ অক্টোবর শুরু হলে কি দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই সাকিবকে পাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই সে খেলতে পারবে। এ মাসের শেষের দিকে সাকিব দেশে আসবে। অনুশীলনের জন্য সে বিকেএসপিকে বেছে নিয়েছে। দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে না পারলেও আমাদের কোনো কোচ আলাদাভাবে ওর সঙ্গে কাজ করতে পারবে। শ্রীলঙ্কায় সাকিব দলের সঙ্গে যেতে পারবে না। তবে আমরা চেষ্টা করব ওকে দ্বিতীয় টেস্টের ১০-১২ দিন আগে নিয়ে যেতে। ২৯ তারিখের আগ পর্যন্ত ওখানে আলাদা থেকেই অনুশীলন করল, কিন্তু আমাদের কোচরা তো দেখতে পাবে ওর কী অবস্থা। তারা প্রয়োজনে তাকে এককভাবে অনুশীলন করাতে পারবে। এগুলো ঠিকঠাকভাবে হলে অবশ্যই সাকিব দ্বিতীয় টেস্টে খেলবে।
আপনি বলেছেন করোনায় স্থগিত অন্য সিরিজগুলো হবে। কিন্তু দেশের করোনার যে পরিস্থিতি, হোম সিরিজ আয়োজন কি সম্ভব?
এখন পর্যন্ত আমাকে সবাই নিশ্চিত করেছে খেলাগুলো বাদ যাবে না। নতুন করে সূচি করা যাবে। শুধু অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য সময় বের করা যাচ্ছে না। আর সামনেরগুলো তো এখনো ঠিকই আছে। ফেব্রুয়ারিতে আমরা নিউজিল্যান্ড যাব। জানুয়ারির ৪ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসবে বাংলাদেশে, মার্চে শ্রীলঙ্কা আসবে। সব পক্ষই একমত, পরিস্থিতি ভালো থাকলে সিরিজগুলো হবে। তবে বায়োসিকিউরিটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। অস্বাভাবিক খরুচে ব্যাপার। ইংল্যান্ডের ওরা বলেছে, একেকটা সিরিজে নাকি ৭-৮ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হচ্ছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা! সরকারের সাহায্য ছাড়া বিসিবির পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয়। এখন একটাই আশা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করোনাভাইরাস এখান থেকে চলে যাক।
বর্তমান পরিস্থিতিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ভবিষ্যৎ কী?
আমার মত, যে সিরিজগুলো হতে পারেনি সেগুলোর জন্য অবশ্যই ডেডলাইন পেছাতে হবে। নইলে সব খেলার সময় বের করা সম্ভব নয়। অনেক দেশের অনেক খেলা হয়তো আর কোনো দিনই হবে না। আমরা যেমন এখনো পারিনি অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য নতুন সময় বের করতে।
২০২১,২০২২ ও ২০২৩-টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে মিলিয়ে পরপর তিন বছর তিনটি বিশ্বকাপ। এটাকে কীভাবে দেখেন?
এটা অবশ্যই একটা চাপ। কিন্তু কিছু করার নেই। এখন থেকে এ রকমই হবে। আইসিসি চাচ্ছে ইভেন্ট বাড়াতে। রাজস্ব বাড়াতে হলে ইভেন্ট বাড়াতেই হবে। তখন প্রতিবছর খেলা বাড়বে। আমরা যারা নিচের দিকের দল, খেলা চেয়ে চেয়ে আমরা খেলা অনেক বাড়িয়েছি। এখন সেই খেলাও বাদ দেওয়া যাবে না, আবার আইসিসির খেলাও খেলতে হবে।