সব ঠিক থাকলে অক্টোবর–নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সব মিলিয়ে ১৬টি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশ দলের। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কেমন হবে এই ম্যাচগুলোর পরিকল্পনা, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই–বা কী লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশ দলের—প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেসব নিয়েই কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
ব্যক্তিগতভাবে শ্রীলঙ্কা সিরিজটা আপনার জন্য কেমন গেল?
মাহমুদউল্লাহ: তিন ম্যাচেই ব্যাটিংটা উপভোগ করেছি। আমি যে জায়গায় ব্যাটিং করেছি, ছয় নম্বরে…সেখানে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে খেলতে হয়। তিন ম্যাচে সেটা করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। তবে তৃতীয় ম্যাচটাও আমাদের জেতা উচিত ছিল।
কিন্তু এই সিরিজে কি আরও একবার এটাই প্রমাণিত হলো যে বাংলাদেশ দল এখনো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ওপরই বেশি নির্ভরশীল, তরুণেরা সেভাবে দায়িত্ব নিতে পারছেন না?
মাহমুদউল্লাহ: আমি তা বলব না। ওদের সবারই সামর্থ্য আছে। তবে আমাদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে। আর এমন নয় যে ওরা চেষ্টা করছে না। এটা সময়ের ব্যাপারমাত্র। আমার বিশ্বাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আরও ধারাবাহিক হবে এবং দল হিসেবেও আমরা তখন ধারাবাহিকভাবে আরও ভালো করতে পারব।
অক্টোবর–নভেম্বরের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত বাংলাদেশ দল টি–টোয়েন্টি ম্যাচই খেলবে বেশি। টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবে বলুন, বিশ্বকাপের জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন আপনারা?
মাহমুদউল্লাহ: পরিকল্পনা নিয়ে তো প্রতিনিয়তই কথা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডে যখন আমরা সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি খেলেছি, তখনো কথা হয়েছে। সেখানে অবশ্য আমরা ভালো খেলতে পারিনি। তবে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে আমরা তিনটি টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলব। বিশ্বকাপের আগে দলটাকে গুছিয়ে নিতে এবং আমরা কী ধরনের ক্রিকেট খেলতে চাই, সেটা ঠিক করতে এটা আমাদের জন্য খুব ভালো একটা সুযোগ। আমরা আমাদের সামর্থ্যের কতটুকু কাজে লাগাতে পারি, সেটা জানা এবং সেভাবে খেলাটা এসব সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজগুলোর জন্য আমরা তাই খুব আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছি। আমি খুব আশাবাদী তিনটি সিরিজেই আমরা ভালো করব। আমরা আমাদের কন্ডিশনে খেলব এবং নিজেদের কন্ডিশনে আমরা খুব আত্মবিশ্বাসী থাকি।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আপনারা ১৬টির মতো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি খেলবেন। ম্যাচগুলোতে কি নতুন খেলোয়াড়দের দেখারও পরিকল্পনা আছে?
মাহমুদউল্লাহ: বেশ কিছু জায়গা তো আমাদের ঠিক করা আছেই। হয়তোবা দু–একটি জায়গায় একটু দেখতে হবে। সে জন্য সবাইকেই সুযোগ দেওয়া হবে যেন তারা দলে জায়গা নেওয়ার মতো সামর্থ্য দেখাতে পারে। তবে আমি বিশেষ করে চাইব, ঘরের মাঠের টি–টোয়েন্টি সিরিজগুলো যেন আমরা জিতি। তাহলে ওই আত্মবিশ্বাসটা আমরা বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারব।
টি–টোয়েন্টিতে আমাদের স্মার্ট হতে হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সামর্থ্য বা দক্ষতা ভালো। কিন্তু এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের আরও স্মার্ট হতে হবে। এই জায়গায় উন্নতি করতে পারলে দলের ফলাফলও ভালো হবে। টি–টোয়েন্টিতে কিছু ছোট ছোট বিষয় অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন আপনি কোন বোলার বা ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে কখন, কীভাবে ঝুঁকি নিতে পারবেন, এটা বুঝতে হবে। এ রকম বিষয়গুলো ধরতে পারলে আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। বড় বড় দলগুলো কিন্তু এটাই করে।মাহমুদউল্লাহ, বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: এবার তো প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগও টি–টোয়েন্টি সংস্করণে হচ্ছে…
মাহমুদউল্লাহ: হ্যাঁ, এতে ভালো একটা প্রস্তুতিও হচ্ছে আমাদের। টি–টোয়েন্টিতে খেলার গতি ধরাটা গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো খেলার ছন্দটা ধরতে পারলে আপনি ধারাবাহিকভাবে সফল হবেন। যদিও এই সংস্করণে ধারাবাহিক থাকাটা খুব কঠিন। তবে যেটা বললাম, যারা খেলাটা ধরতে পারে, তারা ভালো ফল পায়। একটা ম্যাচে দুজন ব্যাটসম্যান যদি ভালো খেলে, ধরুন টপ অর্ডার থেকে একজন ৭০–৮০ করল, মিডল অর্ডারে কেউ দ্রুতগতিতে কিছু রান তুলল...হতে পারে ২০ বলে ৪০; এ রকম দুটি ইনিংসেই কিন্তু বড় একটা সংগ্রহ হয়ে যায়। আর আমাদের বোলিং এখন খুব ভালো হচ্ছে। সাকিব ফিরেছে, মোস্তাফিজও অসাধারণ খেলছে। তাসকিন ভালো করছে। সাইফউদ্দিনসহ অন্য বোলাররাও ভালো করছে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে সামনেও ইনশা আল্লাহ ভালো করব।
বোলারদের প্রসঙ্গে যখন এলই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে আপনাকে বোলিং করতে দেখা যায়নি কেন?
মাহমুদউল্লাহ: আমি কিন্তু বোলিং শুরু করেছি আবার। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে বোলিং করে একটা উইকেটও পেয়েছি। আমার পিঠে একটা চোট ছিল। ওটা থেকে সেরে উঠতে একটু সময় লেগেছে। আলহামদুলিল্লাহ এখন অবস্থা অনেকটাই ভালো। দল যখন শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলছিল, এখানে অনুশীলনে তখন থেকেই আমি ধাপে ধাপে বোলিং শুরু করি। আশা করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এখন আবার প্রয়োজনে বল করতে পারব।
তিন সংস্করণের মধ্যে বাংলাদেশ বেশি পিছিয়ে টি–টোয়েন্টিতেই। এই সংস্করণে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে হলে সবার আগে কোন জায়গাটিতে উন্নতি করা প্রয়োজন?
মাহমুদউল্লাহ: টি–টোয়েন্টিতে আমাদের স্মার্ট হতে হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সামর্থ্য বা দক্ষতা ভালো। কিন্তু এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের আরও স্মার্ট হতে হবে। এই জায়গায় উন্নতি করতে পারলে দলের ফলাফলও ভালো হবে। টি–টোয়েন্টিতে কিছু ছোট ছোট বিষয় অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন আপনি কোন বোলার বা ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে কখন, কীভাবে ঝুঁকি নিতে পারবেন, এটা বুঝতে হবে। এ রকম বিষয়গুলো ধরতে পারলে আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। বড় বড় দলগুলো কিন্তু এটাই করে।
কিন্তু একজন ক্রিকেটারের মধ্য এই জিনিসগুলো আসবে কীভাবে?
মাহমুদউল্লাহ: বেশি খেলার একটা প্রভাব তো থাকেই। আপনি যত খেলবেন, তত মাথা খুলবে। এ ছাড়া প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। আমি যেমন নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় রান করতে পছন্দ করি। এখন কোন বোলারের বিপক্ষে আমি সে জায়গা দিয়ে রান করতে পারব, সেটা আমাকেই বুঝতে হবে। সবার ক্ষেত্রেই তাই। ম্যাচের পরস্থিতি, কন্ডিশন, ঝুঁকি কতখানি—এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। এগুলো বুঝে খেলতে পারলেই টি–টোয়েন্টিতে আপনি সফল হবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে আপনারা নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলবেন। পরের পর্বে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়ই খুব আশাবাদী…
মাহমুদউল্লাহ: দেখুন টি–টোয়েন্টিতে সহজ বলে কিছু নেই। কোনো কিছু হালকাভাবে নিলে ওপরের দিকে থাকা দলও অনেক সময় হেরে যায়। এখানে ভুল শোধরানোর সময় খুব কম। নামিবিয়াই হোক বা অন্য কোনো দল, সবার বিপক্ষে আমাদের সেরা খেলা খেলতে হবে।
একবাক্যে যদি জানতে চাই, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য কী থাকবে?
মাহমুদউল্লাহ: এটা এখনই আমি বলতে চাচ্ছি না। আপাতত ব্যাপারটা আমাদের দলের মধ্যেই থাকুক (হাসি)। একটা কথাই শুধু বলি। বিগত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপগুলোত আমরা ভালো খেলতে পারিনি। এবার আমরা দল হিসেবে বিশেষ কিছু করতে চাই। মানুষ আমাদের মনে রাখবে, এমন কিছুই করব ইনশা আল্লাহ।
একটু অন্য প্রসঙ্গ, টেস্টে আপনার ভবিষ্যৎ কী? লাল বলের ক্রিকেটে কোচের খাতা থেকে তো আপনার নাম কাটাই হয়ে গেল…
মাহমুদউল্লাহ: আল্লাহ জানেন (হাসি)। তবে আমি এখনো খুব আশাবাদী। দেখা যাক সামনে কী হয়। সময়ই বলে দেবে।
টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে আপনার একটা দূরত্ব তো তৈরি হয়েছেই। সামনের টি–টোয়েন্টিগুলোতে অধিনায়ক হিসেবে আপনাকে আবার তাঁর সঙ্গেই জুটি বাঁধতে হবে। এটা কতটা স্বস্তিদায়ক হবে আপনার জন্য?
মাহমুদউল্লাহ: আমি আমার কাজের ক্ষেত্রে শতভাগ পেশাদার। সেটা কারও সঙ্গে সম্পর্কই হোক বা খেলাই হোক।
টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। কিন্তু আসন্ন ঘরোয়া সিরিজগুলোর সময় তাঁর বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা থাকতে পারে। অধিনায়ক হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন, ওই সময় সাকিব জাতীয় দলেই খেলুন…
মাহমুদউল্লাহ: অবশ্যই। কেন নয়? সাকিবকে কে না চাইবে! ও এমন একজন খেলোয়াড়, যার উপস্থিতিতে দলের ভারসাম্যটা অনেক সুন্দর হয়ে যায়। আমার বিশ্বাস সে বাংলাদেশ দলের হয়েই খেলবে।