ঢাকায় আগামীকাল শুরু হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করতে ঢাকায় এসেছেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকে সোনাজয়ী রাশিয়ান জিমন্যাস্ট মার্গারিতা মামুন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জিমন্যাস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে বসে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফিরে গেলেন নিজের শৈশবে। বাংলা ভাষা ভালো বলতে পারেন না। তবে দোভাষীর সাহায্যে শোনালেন নিজের অলিম্পিক সোনা জয়ের গল্প, কথা বললেন অন্যান্য প্রসঙ্গেও
আবারও বাংলাদেশে আসতে পেরে কেমন লাগছে?
সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলাম ২০০৫ সালে। এরপর অনেক দিন কেটে গেছে। আবারও এ দেশে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
আপনার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুনের বাড়ি রাজশাহী। সেখানে কি এবার গিয়েছিলেন? রাজশাহীর কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?
এবার ব্যস্ত রয়েছি ঢাকার টুর্নামেন্ট নিয়ে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যেতে পারছি না। কিন্তু সব সময় রাজশাহীর স্মৃতি আমার হৃদয়জুড়ে আছে। শেষবার যখন আসি, তখন বয়স ছিল ১০ বছর। ওই সময়ের কিছু ছবি ও ভিডিও এখনো আমার মুঠোফোনে রাখা আছে। আমার অনেক ফুফু ও চাচা আছেন রাজশাহীতে। আমি সবার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। ওখানে আমার একটা ছোট্ট টিয়া পাখি ও মুরগির বাচ্চা ছিল। এবার এসে সেগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে।
এত খেলা থাকতে কেন জিমন্যাস্টিকস বেছে নিলেন?
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি অন্য রকম ভালোবাসা ছিল আমার। রিদমিক জিমন্যাস্টিকস বেশি ভালো লাগত। যখনই টেলিভিশনে এটা দেখতে পেতাম, সবকিছু ফেলে খেলা দেখতে বসে পড়তাম। মা-বাবার অনুপ্রেরণা এবং আমার চেষ্টায় এত দূর আসতে পেরেছি।
পোল্যান্ডের পরিচালক মার্তা প্রাস আপনাকে নিয়ে তৈরি করেছেন প্রামাণ্যচিত্র ওভার দ্য লিমিট। এই প্রামাণ্যচিত্র তৈরির পেছনের গল্পটা যদি বলতেন?
২০১৪ সালে মার্তা প্রাস রাশিয়ায় এসেছিলেন। তিনি তখন খেলাধুলাজগতের এমন একটা চরিত্র নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যার জীবনের গল্প অনেক লড়াই-সংগ্রামের। কিন্তু শেষটা হবে সাফল্যের। খুঁজতে খুঁজতে আমাকেই বেছে নেন।
আপনার কোচ ইরিনা ভিনার-উসমানোভা সব সময় আপনাকে ডাকতেন ‘বাংলার বাঘিনী’ বলে...
শুরুতে এটা শুনে খুব লজ্জা লাগত। কিন্তু পরে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে বন্ধুরাও আমাকে ‘বেঙ্গল টাইগার’ বলে ডাকত। এতে আমি গর্ব বোধ করতাম। আমি শুধু রাশিয়ান নই, বাঙালিও।
আপনার অলিম্পিক সোনা জয়ের মাত্র সাত দিন পর বাবা মারা যান। এটা কতটা বেদনাদায়ক ছিল?
আমাদের পরিবারের জন্য সত্যি খুব কঠিন সময় ছিল ওটা। আমি রিও থেকে ফিরলে বাবা পদকটা নেড়েচেড়ে দেখেন। বাবা বিশ্বাস করতেন, একদিন সত্যিই আমি অলিম্পিকে সোনা জিতব। শেষ পর্যন্ত আমি করে দেখিয়েছি সেটা। বাবা এ জন্য খুব খুশি হয়েছিলেন। বাবা সব সময় মনে মনে চাইতেন আমি বড় কিছু করি। কিন্তু আমি ভাবতাম আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। সাহস হারিয়ে ফেলতাম। বাবাই আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিতেন। অলিম্পিকের পদক মঞ্চে উঠে বলেছি আমি বাংলাদেশেরও প্রতিনিধি। ওই সময় শুধু বাবার মুখটাই মনে পড়ছিল।
বাঙালি খাবার কতটা পছন্দ হয়?
বাবা বেঁচে থাকতে বিভিন্ন সময় বাড়িতে বাঙালি খাবার রান্না করতেন। বাবার সঙ্গে অনেক সময় মস্কোর বিভিন্ন বাঙালি রেস্তোরাঁয় ঘুরে ঘুরে মসলা কিনতাম। বাবা পরোটা বানাতেন। মুরগি ও গরুর মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করতেন। পরোটা আমার খুব প্রিয় এবং মিষ্টিও।
আর আম?
আমও আমার খুব পছন্দের। আমি মনে করি, এটা রক্তের কারণেই পেয়েছি। এখনো ঢাকা থেকে কেউ মস্কোতে গেলে অনুরোধ করি যেন আমার জন্য আমভর্তি কার্টন আনে।
বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস নিয়ে কোনো ধারণা আছে?
এখনো এই দেশে রিদমিক জিমন্যাস্টিকস শুরু হয়নি। তবে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক আছে। টুর্নামেন্ট শুরু হলে বুঝব বাংলাদেশের পারফরমার কেমন। বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনকে সব সময় যেকোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।