টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের রমরমা বাজার চলছে। আরও সহজ করে বললে, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের জনপ্রিয়তার বিস্ফোরণই হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনাতেও (এফটিপি)। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগের জন্য সময় রেখেই করা হয়েছে এফটিপির ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের চক্র।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কম সময়ে বেশি আয়ের সুযোগ থাকায় ক্রিকেটাররাও ঝুঁকছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের দিকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক তারকা ক্রিকেটাররা বেশ কিছু বছর ধরেই জাতীয় দলের চুক্তির বাইরে থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলছেন।
কয়েক দিন আগেই কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট। নিজের পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ঘরোয়া লিগগুলোতে খেলতেই কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোল্ট। এর মধ্য দিয়েই ক্যারিয়ারের শেষ পর্বে জাতীয় দলে নিজের দায়িত্ব আরও কমিয়ে এনেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আরও ক্রিকেটারকে হারাতে পারে, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিকা।
ফিকার প্রধান নির্বাহী টম মোফাট বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন এ নিয়ে। মোফাটের শঙ্কা বড় দলগুলোও ভুগবে সামনে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের চলে যাওয়াটা বেশ কয়েক বছর ধরেই মারাত্মক এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এ নিয়ে কথাও বলেছি। তবে এখন এই বিষয়টা শুধু ছোট দলগুলোকেই নয়, বড় দলগুলোতেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।’
এই সমস্যার সমাধানে সবাইকে একত্রে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মোফাট, ‘এই সমস্যার সমাধান করতে (ক্রিকেট) বিশ্বের সবাইকে ভাবতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে এমনভাবে বৈশ্বিক সূচি সাজাতে হবে, যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া লিগগুলো, দুটোই টিকে থাকে।’
বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের সংখ্যা শুধুই বাড়ছে, কোনো কোনো লিগের সময়ও বাড়ছে। তাতে এক লিগের সঙ্গে সূচির সংঘাতও হচ্ছে। সে জন্য নিজেদের লিগে বড় বড় তারকাদের টানার জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো, যা লিগগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে। যে কারণেও আরও অনেক খেলোয়াড় শুধুই লিগ খেলার দিকে ঝুঁকতে পারেন।
গত জুলাইয়ে ঠাসা সূচির কারণে তিন সংস্করণেই খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক ওয়ানডে থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানানোর পর মোটামুটি নড়েচড়েই বসেছিল ক্রিকেট মহল। ঠাসা সূচি নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন সাবেকরা।
এই ঠাসা সূচি নিয়েও উদ্বিগ্ন ফিকা, ‘এই এফটিপি প্রকাশ হওয়ার পর পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে মনে হচ্ছে সবাই সবকিছু বেশি করে চাচ্ছে। ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের বাজারটা ছোট, এখানে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অল্প কিছু ক্রিকেটারেরই চাহিদা রয়েছে। যে পরিমাণ খেলা আছে তা সব সংস্করণ খেলা ক্রিকেটারদের জন্য যে বেশি হয়ে যায়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’
যে দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, সে দেশের বোর্ডই মূলত লিগের দেখভাল করে। যেমন বিপিএলের দায়িত্ব থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ওপর। আইসিসি এই লিগগুলোর দায়িত্বে থাকতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে ফিকার প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, এমন আলোচনা আগেই হয়েছে, তবে সব বোর্ডই চায় তাদের লিগের দায়িত্ব নিজেদের কাছে রাখতে।