হারারও ধরন থাকে। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে যেভাবে হেরেছে শ্রীলঙ্কা, সেটিকে বলা যায় স্রেফ উড়ে যাওয়া।
ইনিংসের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কা শেষ উইকেট জুটির কল্যাণে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে কোনোমতে। আফগানরা দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সকেও বলতে গেলে ছাড়িয়ে গেছে ব্যাটিংয়ে নেমে। দুই ওপেনার পাওয়ার প্লেতে ৮০ রান তুলেই বলতে গেলে শেষ করে দিয়েছেন ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত জয় এসেছে ৮ উইকেট হাতে রেখে, ৫৯ বল বাকি থাকতেই।
রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে হচ্ছে এবারের এশিয়া কাপের প্রথম পর্ব। গ্রুপের ৩টি দল একে অন্যের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে। প্রতিটি গ্রুপের সেরা দুই দল উঠবে সুপার ফোরে। বড় ব্যবধানে হেরে, রানরেটের হিসেবে সুপার ফোরের দৌড়ে তাই অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার পরের ম্যাচ তাই বাঁচা-মরার লড়াই।
প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ বলেই টিকে থাকার লড়াইয়ের আগে কোণঠাসা না হয়ে উল্টো অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে শানাকার কথা শুনলে অন্তত সেটাই মনে হবে। শানাকা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সাহস পাচ্ছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানদের হয়ে বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। আমরা বাংলাদেশের পরিকল্পনা জানি। তাদের সব খেলোয়াড় সম্পর্কে ধারণা আছে। আগামী ম্যাচে এটা বড় ভূমিকা রাখবে। এই যুগে প্রতিটি দলই প্রতিপক্ষ সম্পর্কে জানে, যদি না প্রতিপক্ষ কোনো ছোট দল হয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।’
শ্রীলঙ্কা যদি বাংলাদেশ দল সম্পর্কে জানে, বাংলাদেশও তো জানে শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে। তাহলে দাসুন শানাকার এই আত্মবিশ্বাসের উৎস কী? উৎস আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বোলিংয়ের তুলনামূলক শক্তি বিচার।
বর্তমানে বোলারদের টি টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে সেরা ১০ নেই বাংলাদেশের কোনো বোলার। দেশের বাইরে বোলারদের বাজে পারফরম্যান্সও বাংলাদেশ ক্রিকেটের বহুল চর্চিত বিষয়ের একটি। সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কান অধিনায়কও তুলে আনলেন সেই প্রসঙ্গ, ‘আফগানিস্তানের বোলিং অ্যাটাক বিশ্বমানের। বাংলাদেশের কথা যদি বলি, ফিজ (মোস্তাফিজ) অনেক ভালো বোলার আমরা জানি, সাকিবও বিশ্বমানের। এ ছাড়া তাদের আর কোনো বিশ্বমানের বোলার নেই। আফগানিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ সহজ হবে।’
শানাকার এমন দাবির কারণ তো বোঝাই যাচ্ছে। আফগানিস্তানের স্পিনাররা বরাবরই ভালো। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুধু স্পিনার নয়, পেসাররাও দেখা দিয়েছেন বিধ্বংসী রূপে। শুরুর দুই ওভারেই ফজল হক ফারুকি আর নাবিন উল হকের তোপে ৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে কখনো এত কম রানে শ্রীলঙ্কার ৩ উইকেট পড়েনি। শুরুর এ ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি তারা। শেষমেশ ২ বল বাকি থাকতে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় শানাকা-ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। রানটা আরও কম হতে পারত। ৭৫ রানেই যে শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন আফগান বোলাররা। দলের ব্যাটসম্যানদেরও তাই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক।
বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ আগামী বৃহস্পতিবার। এর আগে আগামী মঙ্গলবার আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে আফগানিস্তান জিতলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি ‘প্লে-অফ’-এর রূপ নেবে। হারলেই বিদায়।
বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতে গেলেও শ্রীলঙ্কার কাজটা সহজ হবে না। তখন বাংলাদেশকে শুধু হারালেই চলবে না, হারাতে হবে বড় ব্যবধানে। নেট রানরেটের অবস্থা যে করুণ হয়ে আছে তাদের!