বছরখানেক আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্তাব্যক্তিরা বড় গলায় বলতেন, আইপিএলের পরই নাকি বিপিএল। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে সেসব কণ্ঠ এখন ম্রিয়মান। বিপিএল নিয়ে উচ্চকণ্ঠ হওয়ার সুযোগ যে আর নেই। এক বছর আগেও এ আলোচনা হলে হয়তো আইপিএলের পর পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) নাম আসত। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), বিগ ব্যাশের পর অনেকে বিপিএলকে জায়গা দিতেন। কিন্তু এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি-২০–এর প্রথম বছরের সাফল্যের পর বিপিএলের জায়গা তালিকার তলানিতে হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বিপিএলকে আরও পিছিয়ে দিতে এ বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট নিয়ে আসছে ছয় দলের মেজর লিগ ক্রিকেট। তারকা ক্রিকেটারদের টানা অর্থের ঝনঝনানি শোনা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। লিগ আয়োজনের অবকাঠামোর জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট খরচ করছে ১১০ মিলিয়ন ডলার! ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক এখনো ঘোষণা না করলেও সেটা যে আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগের চেয়ে বেশি হবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বৈশ্বিক টি-টোয়েন্টির বদলে যাওয়া এই মানচিত্রে বিপিএলের অবস্থান কোথায়, সে প্রশ্ন বিপিএলের নতুন চক্রের প্রথম মৌসুম শেষে ঘুরেফিরে সামনে আসছে।
বিপিএল এখনই বিদেশি ক্রিকেটারদের প্রথম পছন্দ নয়। একই সময়ে অনেকগুলো লিগ হওয়ায় খুব কম বিদেশি ক্রিকেটার বিপিএলকে বেছে নিচ্ছেন। বিদেশি ক্রিকেটার পেতে এবার তাই বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আমিরাতের টি-টোয়েন্টি লিগে একাদশে ৯ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো যায়। প্রায় একই সময়ে হয়েছে এসএ২০। সেখানেও ব্যস্ত ছিলেন টি-টোয়েন্টির শীর্ষ ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশও মাঠে গড়ায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে। দুটি নতুন লিগের দলগুলো আবার আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানাধীন। বিদেশি ক্রিকেটাররা তাই বিগ ব্যাশ ও বিপিএল বাদ দিয়ে ঝুঁকেছেন নতুন দুই টি-টোয়েন্টি লিগে।
পুরোনো দুই লিগের মধ্যে বিপিএলের ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি। প্রথম সারির বিদেশি ক্রিকেটার তো দূরের কথা, মানসম্মত ক্রিকেটার না পেয়ে দলগুলোকে ঝুঁকতে হয়েছে অনভিষিক্তদের দিকে। মোটামুটি নামী যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কেউই লম্বা সময়ের জন্য নয়। কেউ কেউ ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। এ নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার মতো অবস্থা। সাকিব আল হাসানের দল ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমানের কাছে শুনুন বিপিএলের নবম আসরের অভিজ্ঞতার কথা, ‘খুব কষ্ট হয়েছে। এভাবে দল চালানো খুব কঠিন। আমাদের জন্য তো বটেই, ক্রিকেটারদের জন্যও এটা সহজ নয়। এভাবে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলে ক্রিকেটারদের সেরাটাও পাওয়া যায় না।’
এবারের বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারের পেছনে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ডেভিড ম্যালান, মোহাম্মদ রিজওয়ান, নাসিম শাহ, আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, মঈন আলীর মতো তারকা ক্রিকেটাররা খেলেছেন দলটির হয়ে। এত খরচ করে ব্যবসায়িকভাবে কী লাভ হয়েছে দলটির? দলটির কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তো সেদিন এ নিয়ে হতাশ হয়ে বললেন, ‘কী করলে ভালো হবে, এই সিস্টেমটা দুনিয়ার সবাই বোঝে। কিন্তু এখানে কিছু লোক বোঝে না। ২০-২৫ কোটি টাকা খরচ করছে একটা দল, কিছু তো রিটার্ন লাগবে।’
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মালিক রিফাতুজ্জামান এবারের মৌসুমকে আগামী বছরের জন্য শিক্ষা হিসেবে দেখছেন। বিসিবির ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তি তিন বছরের হওয়ায় আগামী বছরের জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করার কথা জানিয়েছেন তিনি, ‘আমরা আগে থেকেই কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি করে রাখতে পারি। সেটা দেশি-বিদেশি দুটোই। কারণ, চুক্তিটা যেহেতু তিন বছরের, এবারের অভিজ্ঞতার পর আমরা জানি যে আগামীবার আমাদের কী করতে হবে।’
বিপিএলপাড়ায় গুঞ্জন, আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টি লিগ এ বছরের অক্টোবরে হতে পারে। তা হলে বিপিএলের জন্য ভালো। ৯ বিদেশি ক্রিকেটারের এই লিগের সময়টা বিপিএলের সঙ্গে মিলে গেলে সমস্যাটা আগামী বছর আরও বাড়বে। বিদেশি ক্রিকেটারদের এই টানাহেঁচড়া নিয়ে কদিন আগেই রংপুর রাইডার্সের এক কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘২০১৮-এর মতো বিপিএল আর কখনো হবে না। আমরা সেবার ডি ভিলিয়ার্সকে নিয়ে এসেছিলাম। ক্রিস গেইল ছিলেন। তখন এত প্রতিযোগিতা ছিল না। টাকা দিলেই বড় প্লেয়ার পাওয়া যেত। এখন টাকাই সব নয়। আসলে বাজারটাই বদলে গেছে।’
সেই বদলে যাওয়া বাজারে বিপিএল এখন কত নম্বরে? উত্তরটা তো শুরুতেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে।